পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক দলগুলোর অপকর্মের দায়ভার জেএসএস সন্তু কেই নিতে হবে।

0

অপূর্ব সাচিং, পার্বত্য চট্টগ্রাম: কথায় আছে সন্তানের দোষের দায় তার জম্মদাতাকেই নিতে হবে। তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামে যে কোন অপকর্মের দায় জেএসএসকেই নিতে হবে। যে পথ দেখায় সেই সে পথের সমেস্যার দায়ভার নিবে একটাই বাস্তবতা। পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক দলগুলোর অপকর্মের দায়ভার জেএসএস সন্তুুর মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়েছে।
যে কারণে এর দায় কোনভাবেই জেএসএস এড়িয়ে যেতে পারেনা। জেএসএস সৃষ্টির রহস্য যদি ভালো হতো পরবর্তী সময়ে পাহাড়ও আলোকিত হতো। জেএসএস এর উদ্দেশ্য ছিল খারাপ তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে।

১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির ইতছড়ির জঙ্গলে গড়ে ওঠে জেএসএস (শান্তিবাহিনী)। যা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র শাখা। এই সশস্ত্র শাখার নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় চাকমার ডাক নাম সন্তু লারমা। সশস্ত্র শাখা গঠনের পর থেকে শুরু হয় পিসিজেএসএস এর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। বিকৃত মস্তিষ্কের লোকদের নিয়ে সৃষ্টি করা হয় সশস্ত্র শাখাটি। কিছু সময় না গড়াতেই পার্বত্য চট্টগ্রামে শুরু হয় গুম, হত্যা,চাঁদাবাজি, রাহাজানি, ভয়ভীতি ইত্যাদি।
তখন থেকেই অন্ধকার যুগে প্রবেশ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম। এভাবেই জেএসএস পার্বত্য চট্টগ্রামকে অন্ধকার যুগে ঠেলে দেয়। উশৃংখল যুবকদের দ্বারা পরিচালিত জেএসএস সশস্ত্র শাখা দিন দিন পাহাড়ে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করতে থাকে। সময়ের ব্যবধানে তাদের মাঝে মতানৈক্য দেখা দেয়। এভাবেই তারা একে অপরের ওপর ক্ষীপ্ত হতে থাকে মূল কারণ ছিল জেএসএস এর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের এবং চাঁদাবাজির বিভিন্ন অংশ সঠিকভাবে ভাগ করা হতো না। চাঁদার ভাগাভাগি নিয়ে দেখা যায় তাদের মধ্যে অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এর থেকেই সৃষ্টি হয়েছে অন্যান্য আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। তাদের মধ্যে অন্যতম ইউপিডিএফ প্রসীত, গণতান্ত্রিক, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ইত্যাদি।
শুরুতেই বিতর্কে মাধ্যমে জেএসএস এর নেতৃত্বে শিষ্যে থাকা সশস্ত্র শাখার সদস্য প্রসীত বিকাশ খীসার সাথে দ্বন্দ্বের জড়ায় জেএসএস নেতারা। তাদের থেকে খীসা অনেককে টার্গেট করে সামনে এগুতে থাকে। শান্তি চুক্তির পর হঠাৎ বিভিন্ন মতানৈক্য সুযোগ নিয়ে সৃষ্টি হয় আরেকটি সংগঠন। যেটি ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট সংক্ষেপে ইউপিডিএফ,(United People’s Democratic Front)। ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর এটি ঢাকায় একটি কনফারেন্সের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। কনফারেন্স শেষে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় যেটির আহ্বায়ক হন প্রসিত বিকাশ খীসা। শান্তি চুক্তি বিভিন্ন ধারা মানতে গিয়ে তাদের সশস্ত্র শাখার অনেক অপরাধ কর্ম কমে যায়। এগুলো কোনভাবে মেনে নিতে পারেনি প্রসীত গংরা। তারা আরো ভয়ংকর রূপে ইপিডিএফের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে যা দায়ভার জেএসএস কে নিতে হবে। মূলত যে কারণেই প্রসিত গংরা এ পথ উদঘাটন করতে পেরেছে তা হলো, জেএসএসের শিখানো কর্মকাণ্ড। তারজন্য এই দায়ভার কোনভাবেই জেএসএস এড়িয়ে যেতে পারে না।
এর কিছু সময় পর ইউপিডিএফ এর মধ্যে দেখা দেয় অনেক ধরনের মতানৈক্য। তাও ছিল সেই পূর্বে কাহিনী মত। তাদের চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিভিন্ন মতামতের সৃষ্টি হয়, পরবর্তীতে আরেকটি সংগঠন সৃষ্টির মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তা থেকেই সৃষ্টি হয় ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামের আরেকটি সশস্ত্র সংগঠন। তারা এখন ইউপিডিএফ এর মতো কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
আর জেএসএস ভেঙে এমএন লারমার নেতৃত্বে সৃষ্টি হয় সংস্কার নামে আরেকটি সশস্ত্র সংগঠন। যেটি একই কারণে সৃষ্টি হয়। চাঁদাবাজি এবং বিভিন্ন কিছু ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি মাধ্যমে তাদের আত্মপ্রকাশ হয়।
২০১৭ সালে বান্দরবান কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। বম সম্প্রদায় বেশিরভাগ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তোলে। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাথান বম নাথান বম সংগঠন সৃষ্টির নেতৃত্ব দেয়। তিনি পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাথে জড়িত ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সশস্ত্র সংগঠনগুলো মূলত জেএসএস এর পথ ধরেই সৃষ্টি হয়েছে। এর দায়ভার কোনভাবে জেএসএস অস্বীকার করতে পারবে না। প্রত্যেকটি সংগঠন সৃষ্টির পিছনে মূলত জেএসএসের ভুল রয়েছে। যেটি মূল কারণ তারা শান্তি চুক্তি করে সঠিক পথে থাকতে পারেনি। যার ফলে এই সমস্ত সশস্ত্র সংগঠন গুলো সৃষ্টির সুযোগ পেয়েছে। প্রত্যেকটি সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে শান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম কে অশান্ত করে রেখেছে। এ দায়ভার জেএসএসকে নিতে হবে। কারণ জেএসএস এর পথ ধরেই এদের সৃষ্টি হয়েছে। সন্তুলারমার অপকর্মের কারণে তাদের মধ্যে একতা ঐক্যতা বিনষ্ট হয়। যার ফলে, এই সমস্ত সংগঠন সৃষ্টির সুযোগ পায়। যদি সন্তলারমা যথাযথভাবে রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান রেখে বিভিন্ন পরামর্শ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাস করতেন। তাহলে এই পরিস্থিতির শিকার হতো না।

মূলকথা, আজ পাহাড় অশান্তির মূল কারণ জেএসএস। তাদের পথ ধরে সুন্দর পাহাড় অশান্তির স্থান হিসেবে পরিচিত হয়েছে। দেশ মাতৃকার নিরাপত্তা বাহিনীসহ অনেক মানুষ সাধারণ জনগণকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। প্রতিনিয়ত চাদাবাজি, গুম, হত্যা এখন পাহাড়ের হেড লাইন হয়ে থাকে। শান্ত পাহাড়কে অশান্ত করার জন্য মূলত জেএসএস কেই সবাই দোষারোপ করছে। এখনো সময় আছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে সুন্দর করতে এবং শান্ত করতে সকল সশস্ত্র সংগঠনকে অপকর্ম পরিহার করে সুন্দর জীবনে ফিরে আসে ভবিষ্যৎ পাহাড়কে আলোকিত করা। যতদিন এভাবে চলতে থাকবে ততোই পাহাড় অন্ধকার হবে। সকল সশস্ত্র সন্ত্রাসী সদস্যদের উচিত সুন্দর জীবন গঠনে সন্ত্রাসী পথ পরিহার করে জীবন যাপন করা।

আগের পোস্টবান্দরবানে কেএনএফের আস্তানায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত এক।
পরের পোস্টবান্দরবানে সন্ত্রাসবাদ দমনে কঠোর অবস্থানে যৌথবাহিনী, কেএনএফের আরো ৩০ সদস্যকে কারাগারে হস্তান্তর।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন