কেএনএফ এর আকাশচুম্বী দাবিদাওয়া বাংলাদেশ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

0

কুকি-চিন খ্যাত কেএনএফ সর্বপ্রথম আলোচনায় আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ভিডিও শেয়ার করে। এরপর আলোচনায় আসে ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুন। সেদিন রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ৪ নম্বর বড়থলি ইউনিয়ন ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাইজামপাড়া গ্রামে এক দল কেএনএফ সদস্যের ব্রাশফায়ারে তিনজন নিহত হন। এ সময় দুই শিশু গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনার পর থেকে কেএনএফ আলোচনায় উঠে আসে। স্থানীয়ভাবে কুকি-চিন ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত। তাদের রাজনৈতিক শাখার নাম, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও সামরিক শাখার নাম কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)। সংগঠনটির প্রধান নাথান বম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র। সন্তু লারমা তথা জেএসএস এর পৃষ্ঠপোষকতায় একসময় তার উত্থান হয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী জানা যায়- নাথান বম ২০০৮ সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৯ সালের দিকে এই নাম পাল্টে করা হয় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। সংগঠনটি রাঙামাটি ও বান্দরবানের যে ৯টি উপজেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য গঠনের ঘোষণা দিয়েছে, এর মধ্যে আছে বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি, লামা, রোয়াংছড়ি ও আলীকদম উপজেলা; রাঙামাটির সাজেক উপত্যকা, বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলা। তাদের মতে, এ স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যে বসবাস করতে পারবে একমাত্র বম, খুমি, খিয়াং, পাংখোয়া ও লুসাই– এ পাঁচ সম্প্রদায় বা জাতির জনগোষ্ঠী। এই রাজ্যে মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী বসবাস করতে পারবে না। এখানে তঞ্চঙ্গ্যাদের চাকমা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে। তাই তঞ্চঙ্গ্যা জাতির নাম উল্লেখ নেই। তখনই কেএনএফ তাদের সাংগঠনিক প্রধান হিসেবে নাথান বমের নাম ঘোষণা করে। নাথান বমের বাড়ি বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার ইডেন পাড়া। বম অ্যাসোসিয়েশন কাউন্সিলের সভাপতি লালদা সাং বমের মতে, পাঁচ-ছয় বছর আগে তাদের লোকসংখ্যা ২৫ হাজারের মতো ছিল। তবে কেএনএফের সশস্ত্র শাখায় দেড় হাজারের মতো সদস্য রয়েছে। সশস্ত্র সদস্যদের সন্ত্রসীরাও এ সশস্ত্র শাখার সদস্য। সমকালের এক প্রতিবেন অনুযায়ী এমনই তথ্য ওঠে আসে।

সাম্প্রতিক কালে বান্দরবান জেলার রুমা ও থানচি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা পর কেএনএফ বিরোধী সমালোচনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের দাবিদাওয়ার প্রতি একসময় সকলে সমর্থন জানালেও ব্যাংক ডাকাতি ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর উপর হামলার মত ঘৃণিত কর্মকাণ্ড এবং অযৌক্তিক দাবিদাওয়ার পর মানুষ মনে করে তাদের কোন ন্যায দাবি নেই। একতরফা ও উগ্র ভাবধারার মানসিকতা নিয়ে দাবিদাওয়া পেশ করা কখনো ন্যায় সংগত হতে পারে না। তাছাড়া তারা নানা ইস্যুতে সমালোচিত৷ স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গুলো কেএনএফ এর চলমান কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

সরকারের কাছে কেএনএফ যেসকল দাবিদাওয়া পেশ করেছে তা কোনভাবেই সংবিধানের আলোকে বিচার্য নয়। তাদের আকাশচুম্বী দাবিদাওয়া বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধান সম্মত দাবিদাওয়া পেশ করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। যার কারণে ব্যাংক ডাকাতির মত ঘটনা তারা করেছে। কেএনএফ বলেন, “কুকি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যে বসবাস করতে পারবে একমাত্র বম, খুমি, খিয়াং, পাংখোয়া ও লুসাই– এ পাঁচ সম্প্রদায় বা জাতির জনগোষ্ঠী। এই রাজ্যে মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী বসবাস করতে পারবে না।”
কেএনএফ এর এই বার্তা বলে দেয় তারা কতটা নিরপেক্ষ আর কতটা সাম্প্রদায়িক ও হীন মানসিকতার। তারা কী আসলে পাহাড়ে শান্তি চায়? যদি শান্তি চেয়ে থাকে তাহলে তাদের কথিত কুকি রাজ্যে মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যা কেন বসবাস করতে পারবে না?

তাদের এমন দাবিদাওয়া কী অযৌক্তিক নয়? এই দাবিদাওয়া কী পাহাড়ের শান্তি-সম্প্রীতির পাশাপাশি এ অঞ্চলের অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগণের অধিকার এবং মর্যাদা ক্ষুন্ন করে না?

এই থেকে বলা যায়, কেএনএফ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং অন্যান্য জাতিসত্তার অধিকার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছে৷

লেখক: জুলহাস মজুমদার, বান্দরবান থানচি।

আগের পোস্টবম সম্প্রদায়ের কিছু চাকরিজীবি সরকারি গোপন তথ্য ফাঁস করে কেএনএফের কাছে।
পরের পোস্টহে জুম্ম তোমাদের বোকা বানাচ্ছে কী?

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন