মহালছড়ি সেনা জোনের উদ্যোগে নতুন বসতঘর পেলেন একটি উপজাতি পরিবার।

0

হান্নান সরকার, লেখক, ব্লগার ও মানবাধিকার কর্মী: পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক দলগুলো স্বজাতির অধিকার দাবিতে গণচাঁদা আদায় আর সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে রক্ত ঝরালেও ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনি ধুমনীঘাট পাড়ার অসহায় নীতিময় চাকমা দম্পতির।

জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘর। রোদে শুকিয়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মহালছড়ি উপজেলার ধুমনীঘাট পাড়ার উপজাতি দম্পতি। ঘরের এমনই বেহাল অবস্থা ভেতরে ঢুকতে হলে হামাগুড়ি না খেয়ে ঢোকার কোনো উপায় নেই। একদিকে হেলে পড়েছে ঘরটি। বৃষ্টি হলে পানিতে সয়লাভ হয়ে যায় ঘরের মেজ। ছনের ছাউনি ভেদ করে ঘরের মধ্যে পৌঁছে সূর্যের আলো। অনেক বছরের পুরাতন ছন পচে গেছে। লক্কর ঝক্কর বাঁশের বেড়া আর বাঁশের দরজা। এমন করুন পরিণতিতে পায়নি আঞ্চলিক দলগুলোর সহযোগিতা। তবুও নিরুপায় হয়ে সেখানেই বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন নীতিময় চাকমা পরিবার।

বিষয়টি নজরে আসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের অধীনস্থ খাগড়াছড়ি ২০৩ বিগ্রেডের আওতাধীন মহালছড়ি সেনা জোনের।

নজরে আসার পর সেনাজোন দ্রত নীতিময় চাকমা দম্পতিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং একটি টিনশেডের নতুন ঘর নির্মাণ করে উপহার দেন।

জানা যায়, এই দম্পতি পাড়ার মধ্যে সবচেয়ে হতদরিদ্র অসহায় উপজাতি পরিবার। রুজিরোজগার করে ছোট-ছোট দুই শিশুসহ পরিবারের ৪ সদস্যের ভরণপোষণ শেষ করে অর্থের অভাবেই একটি নতুন ঘর নির্মাণ সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি জনগোষ্ঠীর জীবনমান পরিবর্তনে সরকার ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকেন! এরচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো- দীর্ঘদিন পাহাড়ে উপজাতি জনগোষ্ঠীর তথাকথিত অধিকার আদায়ে কাজ করা ৪/৫ টি আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন গণচাঁদা আদায় করে। এ চাঁদা আদায় করতে গিয়ে সাধারণ উপজাতীয়দের অপহরণ ও খুন-গুম পর্যন্ত করতে দ্বিধাবোধ করে না। জরাজীর্ণ, ভাঙ্গাচুরা, লক্কর-ঝক্কর এ ঝুপড়ি ঘরে চরম দুর্ভোগের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করলেও আঞ্চলিক দলগুলোর বিবেকের দরজায় কড়া নাড়েনি! কিন্তু অধিকারের দোহাই দিয়ে আদায় করা হাজার হাজার কোটি টাকার একাংশ দিয়ে ভারী অস্ত্র ক্রয় করেন৷ এই অস্ত্র দিয়ে চলে আধিপত্য বিস্তার ও হত্যা, খুন-গুম ও অরাজকতা। অশান্ত করা হয় সমগ্র পার্বত্যাঞ্চলকে। এমনকী চাঁদার টাকা দিয়ে আঞ্চলিক দলগুলোর শীর্ষনেতারা দেশ-বিদেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন, একই সাথে ছেলে-মেয়েদের নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করান। দুঃখজনক, আঞ্চলিক দলগুলো স্বজাতি অসহায় ও দিনমজুর পরিবারগুলোর করুন পরিণতির সময় পাশে এসে দাঁড়ান না। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রামে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বামদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উপজাতিদের পক্ষে সাচ্চা বিপ্লবী হিসেবে আওয়াজ তোলেন!

স্থানীয়রা জানান, নীতিময় চাকমার পরিবারটি খুবই অসহায়। দীর্ঘদিন থেকে জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করে আসছে। নতুন ঘরটি পেয়ে তাদের বেশ উপকার হলো। তারা আরো বলেন, সেনাবাহিনী পাহাড়ে দীর্ঘদিন থেকেই জনহিতকর ও মানবিক বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছেন। সেনাদের এ ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

নীতিময় চাকমা বলেন, এতোদিন ভাঙ্গাচোরা ধরে বসবাস করেছি। এখন নতুন ঘর পেয়েছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More