পঞ্চদশ সংশোধনী আইন বাতিলইউপিডিএফের বিক্ষোভ কর্মসূচি পাহাড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির নতুন পায়তারা।

0

পঞ্চদশ সংশোধনী আইন বাতিল ও সংবিধানে সকল জাতিসত্তার স্বীকৃতির দাবিতে ইউপিডিএফের বিক্ষোভ কর্মসূচি পাহাড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির নতুন পায়তারা।

নিজেস্ব প্রতিবেদক: সংবিধান আইন ২০১১ (পঞ্চদশ সংশোধনী) পাস হয় ২০১১ সালের ৩০শে জুন এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ২০১১ সালের ৩রা জুলাই। এই সংশোধনী দ্বারা সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয় এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি জনগোষ্ঠীর তথাকথিত আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ২০১১ সালের ৩০ জুন থেকেই পঞ্চদশ সংশোধনী আইন বাতিল ও সংবিধানে সকল জাতিসত্তার স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। ইউপিডিএফ দাবি করছে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ‘উগ্রবাঙালি জাতীয়তা’ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে! এই দাবিতে ৩০ জুন থেকে ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায়তে সংবিধানের বিরোধিতা করে পঞ্চদশ সংশোধনী”র কপি পুড়িযে প্রতিবাদ করেছে। ইউপিডিএফ রাষ্ট্রের একটি সর্ববৃহৎ জাতিকে উগ্রবাঙ্গালী বলতে পারে কীনা আমার বোধগম্য নয়। যদি রাষ্ট্রের মূলধারার জনগোষ্ঠীকে উগ্রবাঙ্গালী বলতে পারে তাহলে ইউপিডিএফ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন নিঃসন্দেহে। এছাড়া একটি দেশের সংবিধান পুড়ানো রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরী আচরণের সামিল। সংবিধান বা আইনকানুনের কিছু অংশ জনগণ বা কোন একটি গোষ্ঠীর মতামতের বিরুদ্ধে যেতে পারে সে অংশ নিয়ে আপত্তি করা স্বাভাবিক কিন্তু একটি পরিপূর্ণ সংবিধান পুড়ে ফেলা কতটা মারাত্মক অন্যায় বা রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরী আচরণ তা কী আমরা ভেবে দেখেছি? ইউপিডিএফ এর এমন কর্মকাণ্ড থেকে স্পষ্ট নয় কী তারা একটি রাষ্ট্র বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন?

কী বলা হয়েছে সংবিধানে?

সংবিধানের ষষ্ঠ অনুচ্ছেদ নাগরিক নিয়ে ২-এ বলা হয়েছে “বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিতি হইবেন।”

এবং সংবিধানের নবম অনুচ্ছেদ জাতীয়তাবাদ নিয়ে বলা আছে- ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।

বাঙ্গালী জনসংখ্যায় সর্ববৃহৎ তাই স্বকীয়তায় সংবিধানে বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙ্গালী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া স্বাভাবিক। আপনি একজন নেপালী ও একজন ভারতীয়র স্বকীয়তা বা জাতি পরিচয় সংবিধান থেকে বা ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে দিতে পারবেন না। তেমনি একজন বাঙ্গালীর পরিচয় মুছে দিতে পারবেন না। বাঙ্গালী থেকে বাংলাদেশের উৎপত্তি। রাষ্ট্রের বৃহৎ জনগোষ্ঠী হিসেবে বাঙ্গালী জাতি হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতি জনগোষ্ঠীর মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। বরঞ্চ সংবিধানের ষষ্ঠ অনুচ্ছেদ বাঙ্গালী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও সংবিধানের ২৩ (ক) অনুচ্ছেদে নৃ-গোষ্ঠী ও উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ২৩ (ক) রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। এই থেকে প্রমাণিত যে, বাঙ্গালীকে রাষ্ট্রের জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তার পরিচয় মুছে ফেলা হয়নি। বরঞ্চ তাদেরও স্বীকৃতি রয়েছে। নতুন করে উপজাতিদের সংবিধানে স্বীকৃতি দাবি এটা হাস্যকর।

এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে ক্ষুদ্র- নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতি জনগোষ্ঠীকে স্ব-স্ব পরিচয়ে স্বীকৃতি রয়েছে। যেমন- চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তংচংগ্যা, পাংখোয়া, লুসাই, ম্রো, খুমী, বম, চাক ইত্যাদি। এ উপজাতি জাতিসত্তার সর্ব অধিকার নিশ্চিত করেছে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি।

বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩ (ক) তে উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি ও অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। এমন শর্ত থাকার পরও রাষ্ট্রের বৃহৎ বাঙ্গালী জাতির সংবিধানে স্বীকৃতি নিয়ে ইউপিডিএফ কথা বলার এখতিয়ার আছে বলে মনে হয়না। এটা ইউপিডিএফ এর অতি বাড়াবাড়ি এবং রাষ্ট্রের উদারতা ও সহানুভূতির সুযোগকে কাজে লাগানো। ইউপিডিএফ উপজাতি জাতিসত্তার কিছু অংশকে ফুসলিয়ে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য সাধনের পায়তারা করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি উত্তপ্ত ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে ইউপিডিএফ সাধারণ উপজাতিদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ ভাড়া করা মানুষকে আন্দোলনের নামে মাঠে নামিয়েছে। ইউপিডিএফ এর এই নোংরা রাজনীতির শিকার হয়ে পাহাড়ে উপজাতি জনগোষ্ঠীর কিছু অংশ ভুল পথে ধাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আজকে ইউপিডিএফ ও তার মদদপুষ্ট ও ভাড়াটে মানুষদের বলতে চাই, আপনাদের বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় কিন্তু বিদেশে বাংলাদেশী পাসপোর্ট বহন করে যেতে এবং বাংলাদেশী পরিচয় বহন করতে কী মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়না? একজন উপজাতি কী বিদেশের মাটিতে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ইত্যাদি পরিচয় দেন নাকী বাংলাদেশী নাগরিক পরিচয় দেন?

বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ছাড়াও রাষ্ট্রের নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া গণ্য হবেন। সংবিধানের এমন স্বীকৃতি থাকার পরও ইউপিডিএফ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম এবং সংবিধানের কপি পুড়ানো একটি অতি মাত্রার বাড়াবাড়ি বলে প্রতিয়মান।

আগের পোস্টসেনাবাহিনীর বিরামহীন প্রচেষ্টায় সাজেকে যানচলাচল স্বাভাবিক, ফিরছেন আটকে থাকা পর্যটকরা।
পরের পোস্টমহালছড়ি সেনা জোনের উদ্যোগে নতুন বসতঘর পেলেন একটি উপজাতি পরিবার।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন