বাঙালি বড়ুয়া বৌদ্ধ ভিক্ষু দীপংকর মহাথের আত্মহত্যা?

0
২০২০ সাল (১৮মে) রাঙামাটি প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে দীপংকর মহাথের (ধুতাঙ্গ ভান্তে) জেএসএস কর্তৃক বৌদ্ধ বিহার পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন

বান্দরবান গোধা পাড়ার ধুতরাঙ্গ ভান্তে ড. এফ দীপংকর মহাথের আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। অদ্য ১৩ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে বৌদ্ধ বিহার (কেয়াং)- এর ভেতর দুপুর ২টার পর গলায় রশিতে ঝুঁলন্ত অবস্থায় এই ধর্মীয় গুরুর লাশ পাওয়া যায় বলে জানা যায়।

স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন, দীপংকর মহাথের (বৌদ্ধ ভিক্ষু) বাঙালি বড়ুয়া সম্প্রদায়ের লোক। চট্টগ্রাম জেলা এলাকার বাসিন্দা। পাহাড়ে এসে তিনি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের চাকমা, মারমাদের সঙ্গে নিয়ে ধর্মীয় কার্যক্রম শুরু করেন। এবং স্থাপন করেন বৌদ্ধ বিহার। তার রয়েছে অগণিত ভক্ত সমর্থক। দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি ডক্টরেট ডিগ্রী গ্রহণ করার পরও ৭ বছর পূর্বে গহীন অরণ্যে গুহায় থাকার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে অশ্বথবৃক্ষের নীচে, খোলা আকাশে দিবারাত্রী ৬ মাস, গুহায় ৬ মাস, বিনানিদ্রায় দাড়িয়ে ও বসে থেকে ড. দীপংকর থেকে সাধক দীপংকর হয়েছেন। এই বাঙালি বড়ুয়া বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুর সঙ্গে ২০১৮ সালে থেকে জেএসএস সন্তুর সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। যার কারণে জেএসএস তৎকালীন ২০২০ সালের মে মাসে বিলাইছড়ি ফারুয়া ইউনিয়নের এগুইজ্যাছড়ি এলাকায় দীপংকর ভান্তের বৌদ্ধ বিহারটি পুড়ে দেয়। তৎকালীন ২০২০ সাল সোমবার (১৮মে) দুপুরে রাঙামাটি প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে দীপংকর মহাথের (ধুতাঙ্গ ভান্তে) এ তথ্য জানান তিনি।


দীপংকর মহাথের বলেন, গত ১৫ মে (শুক্রবার) দিনগত রাতে সন্তু লারমার সন্ত্রাসীরা ধুপশীল ধর্মপ্রিয় আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র তথা বৌদ্ধ বিহারটিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এতে প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। অতীতের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালে জুরাছড়ি উপজেলার নির্বাণগুহা থেকে রাতের অন্ধকারে আমাকে স্থান ত্যাগ করার জন্য বাধ্য করা হয়। জেএসএস এর কেন্দ্রীয় নেতা ভিক্টর চাকমা প্রধান সেবক শুক্রসেন তঞ্চঙ্গ্যাকে আমার সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য বাধ্য করে।

দীপংকর ভান্তে পার্বত্য চট্টগ্রামে জেএসএস এর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি জাতিসত্তার কল্যাণে সবসময় কথা বলতেন এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনী, বাঙালি তথা রাষ্ট্রের পার্বত্য অখণ্ডতার স্বার্থে দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে গোপনে রাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করে গেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িকতা ও হানাহানি ও অস্ত্রবাজি নিয়ে মুখ খোলা তিনি ছিলেন প্রথম বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু।

জানা যায়, ২০১৮ সালে জেএসএস এর সঙ্গে বিরোধ দেখা দিলে তিনি বান্দরবান পাড়ি জমান। দীপংকর মহাথের নিহতের ঘটনা আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা তার রহস্য জানা যায়নি৷ যেহেতু বিষয়টি তদন্তের ব্যাপার সেহেতু এইটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা তা বলা যাচ্ছে না। তদন্তের পরে জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা। তবে যেহেতু তার আত্মহত্যা নিয়ে সর্বত্র সন্দেহ ও প্রশ্ন উঠেছে, সেহেতু পাঠকদের জ্ঞাতার্থে বাঙালি এই বৌদ্ধ ভিক্ষুর সঙ্গে যাদের বিরোধ ছিল তা উল্লেখ করা উচিত বলে মনে করি। তার সঙ্গে জেএসএস সন্তুর দলের চরম বিরোধ ছিলো সেটা তার একটি বৌদ্ধ বিহার জেএসএস সন্তু কর্তৃক আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার তৎকালীন সংবাদ সম্মেলনের অভিযোগ থেকে স্পষ্ট।

তবে আরেকটি সূত্র বলছে, এর আগে বান্দরবানের রামজাদি এবং ধাতু জাদী (স্বর্ণ মন্দির) মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শ্রীমৎ উ পঞ্ঞা জোত মহাথের (উছালা ভান্তে) বড়ুয়া শীর্ষদের মারমাগ্রী পদবী ব্যবহার করতে নির্দেশ দেন। এর ফলে এই ধর্মীয় গুরুর অনেক ভক্ত বড়ুয়া’র পরিবর্তে মারমাগ্রী পদবী ব্যবহার শুরু করলে বড়ুয়া’দের শীর্ষ ধর্মীয় গুরু ড. এফ দীপংকর ভান্তে ও উছালা ভান্তের ভক্তদের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয়। আর এই কারনে বৌদ্ধ ধর্মীয় দুই নেতার তৎকালীন চরম বিরোধ এতোটা প্রকাশ্যে যে, যেকোন সময় বড় ধরণের সংঘাতের আশংখা করছিল দেশের বৌদ্ধ অনুসারীরা। কিন্তু বান্দরবানের রামজাদি এবং ধাতু জাদী (স্বর্ণ মন্দির) মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমৎ উ পঞ্ঞা জোত মহাথের (উছালা ভান্তে) ২০২০ সালের ১৩ এপ্রিল না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। এরপরও চলছিল তাদের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ এমনটা জানা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বান্দরবানের বড়ুয়া সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি বলেন, জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বাঙালি বড়ুয়া সম্প্রদায়ের এই সাধক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে কী পাহাড়ের একটি উগ্র জাতি তথা সন্ত্রাসীগোষ্ঠী শুধুমাত্র বাঙালি হওয়ার কারণে মেনে নিতে পারেন নি? ধুতরাঙ্গ ভান্তে ড. এফ দীপংকর মহাথের আত্মহত্যা করেছেন কথাটি কোনভাবেই বিশ্বাস হয়না। তাকে বাঙালি হওয়ার কারণে ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা করে থাকতে পারে। আত্মহত্যা ঘটনাটি একটি বড় ধরনের ষড়যন্ত্র। আমরা এই ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই।

এনোং বড়ুয়া, অশোক বড়ুয়া রনি, প্রশান্ত বড়ুয়া ও মং মারমাসহ পাহাড়ি সম্প্রদায় বলছেন, এটা কখনো বিশ্বাসযোগ্য নয়। এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। কোন রহস্য লুকিয়ে আছে। একজন ধর্মীয় গুরুর এমন কান্ড অনাকাঙ্ক্ষিত। নেপথ্যে কোন কারণ থাকার বিষয়ে খতিয়ে দেখা দরকার। এটা বিশ্বাস হয় না, পাহাড়ের এই ঘটনা গুলা খুবই দুঃখজনক। Arshiya Limo Eli বলেন, এটা পরিকল্পিত হত্যা#কাণ্ড হয়েছে। কারণ ভান্তের কোনো লোভ নেই অহংকার নেই তিনি এতো বড় পাপ কখনো করতে পারেন না। এই কাজ ভান্তে করেছে কেউ বিশ্বাস করবে না। সুষ্ঠু তদন্ত চাই।

এই জনপ্রিয় বাঙালি বৌদ্ধ ভিক্ষুর আত্মহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে চারদিকে শোকের মাতাম নেমে আসে। তার ভক্ত সমর্থকরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং ঘটনার সুস্থ ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন।

লেখক: জোহন বড়ুয়া, বান্দরবান থেকে

মুক্তমত লেখা লেখকের নিজেস্ব মতামত। মুক্তমতের দায়ভার লেখকের। হিলবিডিনিউজ এর সম্পাদকীয় নীতিমালা কোনভাবেই দায়ী নয়।

আগের পোস্টবান্দরবানে কেএনএফ সন্দেহে আটক ৫ জন কারাগারে।
পরের পোস্টরাঙ্গামাটি জোন কর্তৃক বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ প্রদান।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন