ইউপিডিএফ রাজনৈতিক ও সমগ্র অংশের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্কের সমন্বয় বা অর্জন কতটুকু?

0
2

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফ, এটি হচ্ছে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক একটি আঞ্চলিক কথিত রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের রয়েছে সশস্ত্র গেরিলা দল। যারা বিচ্ছিন্নতাবাদে সম্পৃক্ত। ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় একটি কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক দল এবং পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পথে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এমন দাবি ছিল তাদের শুধুমাত্র লোক দেখানো কিন্তু তার অন্তরালে ছিল পাহাড়ে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে এ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করা। তৎকালীন কনফারেন্স শেষে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় যেটির আহ্বায়ক হন প্রসিত বিকাশ খীসা। ইউপিডিএফ প্রসীতদল এর রয়েছে, রাজনৈতিক শাখা, সশস্ত্র গেরিলা শাখা, কংগ্রেস ও উপদেষ্টা পরিষদ। যারা সংগঠনটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড- প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড, সশস্ত্র কর্মকাণ্ড ও যাবতীয় কর্মকাণ্ড সম্পাদনা করে।
যে কোন সংগঠন বা দল পরিচালিত হয় তিনটি ভিত্তির উপর। (১) হচ্ছে জনশক্তি, (২) অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি, (৩) সাংগঠনিক ভিত্তি। এই তিনটি ভিত্তি যখন কোন সংগঠনের থাকে তখন সংগঠন এগিয়ে যায়। তদুপরি ইউপিডিএফও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু একটি সংগঠন যখন নীতি আদর্শ ভূলে গিয়ে জনগণের সাথে কানামাছি খেলে প্রতারণামূলক তখন সংগঠনের ভিত্তি আর কতটুকু বা কাজ করে? ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠা হয়েছে আজ ২৬ বছর। এই ২৬ বছরে তারা তাদের দাবিদাওয়া সিকিভাগ আদায় করতে পেরেছে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। অগণতান্ত্রিক উপায়ে দাবি আদায়ের চেষ্টা ইউপিডিএফকে জনসাধারণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে স্বায়ত্তশাসনের হুংকার আর প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সহজসরল পাহাড়িদের প্রয়োজন মাফিক মাঠে নামিয়ে শুধু ব্যবহার করেছে। পাহাড়ি জনগণের কর্ণধার সেজে চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজির মত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পাহাড়ে লাশের মিছিল ভারি করেছে। এর বাহিরে জনগণকে তেমন কিছু দিতে পারেনি। পাহাড়ের মানুষ মনে করে ইউপিডিএফ এর দুইটা গঠনতন্ত্র আছে একটি প্রকাশ্যে কথিত জনকল্যাণমুখী অন্যটি জন বিরোধী অর্থাৎ তাদের স্বার্থের জন্য বানানো গোপন গঠনতন্ত্র। ইউপিডিএফ এর এমন জন বিরোধী তৎপরতা একটা সময় ইউপিডিএফের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি করে রাজনৈতিক ও সশস্ত্র শাখার মধ্যে। এই অসন্তোষের ফলে ২০১৭ সালে ইউপিডিএফ এর একটি অংশ আলাদাভাবে তপন জ্যোতি বর্মার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক গঠন করেন। এরপর থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে চলে সংঘর্ষ। এ সংঘর্ষে বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক নোংরা চর্চা থেকে বের হতে পারেনি ইউপিডিএফ। তাই রাজনৈতিক শাখার সাথে যে সশস্ত্র বিভাগের মধ্যে একেবারে ভালো সুসম্পর্ক আছে তা বলা যাবে না। কিছুটা মতবিরোধ আছে, সে মতবিরোধেই তৎকালীন ইউপিডিএফ ভাঙ্গনের মূল কারণ ছিল বলে ইউপিডিএফ সূত্রের মতামত। এমন বিরোধের কারণে বছরের পর বছর ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্ব পরিবর্তন হচ্ছে না। যারা ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদের বেছে বেছে হত্যা করছে। রাজনৈতিক বিভাগের সাথে সমগ্র বিভাগের পারষ্পরিক সম্পর্কে কিছুটা ফাটল থাকার কারণেই ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় সশস্ত্র গ্রুপের সশস্ত্র কমান্ডার আনন্দ প্রকাশ চাকমা গ্রেফতার হওয়ার দীর্ঘদিন পরেও কারামুক্ত হয়নি। ইউপিডিএফ সূত্রে জানা যায়, আনন্দ প্রকাশ চাকমার সঙ্গে ইউপিডিএফ রাজনৈতিক শাখার প্রধান প্রসীত বিকাশ খীসার বিরোধ রয়েছে৷ একারণে তাকে কারামুক্ত না করে সজিব চাকমাকে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র কমান্ডার করেছে বলে ইউপিডিএফ এর গোপন সূত্র নিশ্চিত করেছে। রাজনৈতিক শাখা ও সমগ্র অংশের সঙ্গে একে অপরের নিবিড় সম্পর্ক থাকাটা স্বাভাবিক৷ কিছুটা মতবিরোধ থাকতে পারে এটাই স্বাভাবিক৷ একটি সংগঠন পরিচালনা করতে গিয়ে যদি রাজনৈতিক শাখার সাথে সশস্ত্র শাখার বিরোধ থাকে সেখানে সংগঠনে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। ইউপিডিএফ এর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের চিত্র এবং রাজনৈতিক শীর্ষ নেতৃদ্বয়ের দীর্ঘ সময় আত্মগোপন বলে দেয় তাদের সাংগঠনিক দূর্বলতা। যেহেতু সংগঠনটির কার্যক্রম বিদ্যমান সেহেতু সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, ইউপিডিএফ এর রাজনৈতিক শাখার সাথে সমগ্র অংশের পারষ্পরিক ও নিবিড় সম্পর্ক আছে ঠিক কিন্তু সাংগঠনিক দূর্বলতাটা তাদেরকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে অনেক দূরে রেখেছে।

ইউপিডিএফ এর রাজনৈতিক শাখা ও সমগ্র অংশের সাথে পারষ্পরিক সম্পর্ক এবং প্রকৃতি সম্পর্কে বিশদভাবে যা জানা যায়: ইউপিডিএফ সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় কমিটি। যাদের বলা হয় রাজনৈতিক শাখা। এই রাজনৈতিক শাখা ইউপিডিএফ পরিচালনার সবধরনের আদেশ- নির্দেশ প্রদান করে। রাজনৈতিক শাখা কিন্তু প্রশাসনিক শাখা। এই প্রশাসনিক শাখা সহযোগী অঙ্গসংগঠন ও সশস্ত্র বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। সামগ্রিকভাবে ইউপিডিএফ এর কমিটি গঠন নির্বাচন ও বিধিবিধান কিন্তু কংগ্রেসের হাতে ন্যাস্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, হেডম্যান-কার্বারী ও ইউপিডিএফ সদস্য থেকে ব্যক্তিদের নিয়ে ইউপিডিএফ এর কংগ্রেস ও উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়। আর কংগ্রেস মূলত ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন বা কাউন্সিল ঠিক করেন। এবং একতৃতীয়াংশ ভোটের মাধ্যমে ইউপিডিএফ এর গঠনতন্ত্র সংশোধন করে থাকেন।
ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলার ১০টি উপজেলায় রাজনৈতিক ও সশস্ত্র কার্যক্রম রয়েছে।
ইউপিডিএফ ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, যদিও দুই পদপ্রার্থীর দুজনই পরাজিত হন। অনেক বিশ্লেষণকারীকে অবাক করে দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতাকারিগণ বিবেচনাযোগ্য ভোট পান। ২০০৬ সালের নভেম্বরে ঢাকায় পার্টির প্রথম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রসিত বিকাশ খিসা ও রবি শঙ্কর চাকমাকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করা হয়। এরপর থেকে সংগঠনটি রাজনৈতিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, তিন পার্বত্য জেলায় স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে আসছে। স্থানীয়রা বলছেন, অস্ত্রের প্রভাব দেখিয়ে ইউপিডিএফ তাদের মদদপুষ্ট লোকদের নির্বাচিত করেন। রাজনৈতিক শাখার আওতাধীন আরো আছে, সহযোগী অঙ্গসংগঠন (১) গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, (২) পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, (৩) হিল উইমেন্স ফেডারেশন, (৪) পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘসহ আরো কয়েকটি সংগঠন।
আর অন্যদিকে রাজনৈতিক শাখার আওতাধীন প্রভাবশালী সশস্ত্র গেরিলা বিভাগ রাজনৈতিক শাখার নির্দেশনায় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।

রাজনৈতিক শাখার নিয়ন্ত্রণে এবং সশস্ত্র বিভাগের আংশিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ইউপিডিএফ এর টোল কালেক্টর গ্রুপ। যারা সংগঠনের জন্য চাঁদা কালেকশন করেন। এই কালেক্টরদের বলা হয়- চীপ কালেক্টর, সাব-পোস্ট পরিচালক। এরা কালেকশন করে রাজনৈতিক শাখার অর্থ বিভাগে প্রেরণ করে। অর্থ বিভাগ এই টাকা ব্যয় করে- ইউপিডিএফ এর বেতনভাতা ও সাংগঠনিক পরিচালনার অর্থ এবং অস্ত্রক্রয়, প্রশিক্ষণ, কূটনীতিক লগিং এবং প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড পরিচালনা, সহযোগী অঙ্গসংগঠন গুলোর কর্মসূচী বাস্তবায়ন এবং ইউপিডিএফ ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনে ভিড়াতে হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের প্রলোভন ও শিক্ষাথীদের রাজনৈতিক মাঠে ব্যবহার করতে শিক্ষা সহয়তা প্রদান করা, সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য উপাত্ত ছড়িয়ে দিয়ে সাংগঠনিক টিকিয়ে রাখতে প্রচুর অর্থ খরচ করা হয়।

ইউপিডিএফ রাজনৈতিক শাখার পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪টি সশস্ত্র কোম্পানি আছে।
১.রেঞ্জার কোম্পানি
২. পাইনেস
৩. স্পেশিয়াল
৪.হাইপেন
( এদের পূর্ব নাম: কোবরা কোম্পানী, ঈগল কোম্পানী, বিশেষ কোম্পানী ও  টাইগার কোম্পানি।)
এই ৪টি কোম্পানির আওতায় রয়েছে, প্লাটন ও সেকশন পর্যন্ত। কোম্পানি গুলো চলে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র কমান্ডার তথা কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক শাখার নির্দেশে চলে। প্লাটুন গুলো চলে প্লাটুন কমান্ডার তথা জেলা রাজনৈতিক শাখার নির্দেশে আর সেকশন গুলো চলে সেকশন কমান্ডার তথা ইউনিট সভাপতির নির্দেশে। উপজেলা ইউপিডিএফ রাজনৈতিক শাখার সভাপতি কে ইউনিট সভাপতি বলে।

ইউপিডিএফ সংগঠন বা রাজনৈতিক শাখার সমন্বয় এবং পরিচালনার জন্য রয়েছে গঠনতন্ত্র।

ধারা ০১: নাম
১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর গঠিত এই পার্টির নাম হইবে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। সংক্ষেপে পার্টিকে ইউপিডিএফ নামে অভিহিত করা হইবে।

ধারা ০২: লক্ষ্য
পার্টির লক্ষ্য হইল শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পন্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ন্যায্য অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসন অর্জনের মাধ্যমে অত্র অঞ্চলে শোষণ-নিপীড়নমুক্ত প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।

ধারা ০৩: পতাকা
প্রস্থে সমান তিন ভাগে বিভক্ত, উপর ও নীচ অংশ লাল, মধ্য অংশ নীল, এবং নীলের মাঝ বরাবর সাদা তারকা।

ব্যাখ্যা:
ক. লাল : শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক,
খ. নীল : পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান নদী কর্ণফুলী, চেঙ্গী, মাইনি, কাচলং, ফেনী, শঙ্খ ও মাতামুহুরীর মিলিত প্রবাহ তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ঐক্য সংহতি এবং সমৃদ্ধির প্রতীক
গ. সাদা তারকা : পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।

ধারা ০৪: মনোগ্রাম
পার্টির মনোগ্রাম হইবে তীর ধনুক। ইহা পার্টির নির্বাচনী প্রতীক হিসাবেও ব্যবহৃত হইবে।

ধারা ০৫: পার্টি সদস্য
(ক) যিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা, বয়স ১৬ বৎসর বা তার উর্ধ্বে, এবং যিনি পার্টি কর্তৃক নির্ধারিত ফি প্রদানে সম্মত আছেন, যিনি পার্টির কর্মসূচী গ্রহণ করিয়াছেন, পার্টির গঠনতন্ত্র, আদর্শ ও শৃঙ্খলা মানিয়া চলিতে অঙ্গীকার করিয়াছেন, যিনি পার্টি কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং যিনি অন্য কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নহেন, তিনি এই পার্টির সদস্য পদের জন্য আবেদন করিতে পারিবেন।
(খ) নির্ধারিত ফরম পূরণের মাধ্যমে পার্টির কমপক্ষে দুই জন সদস্য কর্তৃক সুপারিশের ভিত্তিতে নতুন সদস্য ভর্তি করা হইবে।
(গ) সকল পার্টি কমিটি – ইউনিট হইতে কেন্দ্র – নতুন সদস্য ভর্তি করিতে পারিবে।
(ঘ) ভর্তির আবেদন পত্র জমা দেওয়ার এক মাসের মধ্যে উক্ত আবেদন পত্র কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিশনে পাঠাইতে হইবে। ভর্তির ক্ষেত্রে ভর্তি কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে। ভর্তি করা হইলে সে প্রথমে প্রার্থী সদস্য বলিয়া গণ্য হইবে। প্রার্থী সদস্যের মেয়াদকাল হইবে ১ বৎসর।
(ঙ) অন্য কোন দল হইতে উচ্চ পদস্থ কেউ পার্টিতে ভর্তি হইতে চাইলে তাহার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদনের প্রয়োজন হইবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটি সরাসরি তাহাকে পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা দিয়া ভর্তি করিতে পারিবে।
(চ) একবার বহিষ্কার হইবার পর কোন সদস্য পুনরায় ভর্তি হইতে পারিবে, তবে সেক্ষেত্রে যে পার্টি কমিটি তাহাকে বহিষ্কার করিয়াছে সেই পার্টি কমিটির সম্মতির প্রয়োজন হইবে।
(ছ) প্রার্থী সদস্যদের পূর্ণ সদস্যদের মতোই একই দায়িত্ব ও অধিকার থাকিবে, তবে তাহারা পার্টি কমিটিতে নির্বাচিত হইতে বা কাউকে নির্বাচিত করিতে এবং কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে না।
(জ) প্রার্থী সদস্যের ১ বৎসরের আবেক্ষাধীন কাল শেষ হইবার পর কমিটি যদি তাহার কাজে সন্তুষ্ট হয়, তাহা হইলে তাহাকে পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা দিবে। আর যদি সন্তুষ্ট না হয়, তাহা হইলে তাহার সদস্য পদ বাতিল পূর্বক কেন্দ্রীয় কমিটি বরাবরে রিপোর্ট প্রেরণ করিবে।

ধারা ০৬: পার্টি সদস্যদের জন্য পালনীয় নিয়ম
ক. পার্টি সদস্যগণ জনগণের সবচেয়ে অগ্রগামী বাহিনী। তাহারা পার্টি ও জনগণের স্বার্থকে ব্যক্তিগত স্বার্থের উর্ধ্বে স্থান দিবেন।
খ. পার্টির প্রত্যেক সদস্য নারীদের প্রতি যথাযথ মর্যাদা প্রদর্শন করিবেন এবং তাহাদের সঙ্গে কখনোই অসৌজন্যমূলক আচরণ করিবেন না।
গ. পার্টি সদস্যগণ জনগণের সঙ্গে সব সময় সৌজন্যমূলক আচরণ করিবেন এবং তাহাদেরকে যথাসাধ্য সহযোগিতা প্রদানের জন্য সচেষ্ট থাকিবেন।
ঘ. পার্টির প্রত্যেক সদস্য জনগণের ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিবেন এবং ধর্ম বিষয়ে জনগণের সঙ্গে নিজেকে বিতর্কে জড়াইবেন না।

ধারা ০৭: সদস্যপদের রেকর্ড
সকল জেলা কমিটি সদস্যপদের রেকর্ড সংরক্ষণ করিবে।

ধারা ০৮: সদস্যপদের চেক-আপ
ক. প্রত্যেক পার্টি কমিটি বৎসরান্তে সদস্যদের সদস্যপদ চেক-আপ করিবে। যদি কোন সদস্য কোন যুক্তি সঙ্গত কারণ ছাড়া এক নাগাড়ে দীর্ঘ সময় ধরিয়া পার্টির কার্যক্রমে অংশগ্রহণ হইতে বিরত থাকেন তাহা হইলে উক্ত সদস্যের সদস্যপদ খারিজ করা যাইবে। এই চেক-আপের রিপোর্ট উচ্চতর কমিটির নিকট অনুলিপিসহ কেন্দ্রীয় কমিটিতে জমা দিতে হইবে।
খ. উক্ত সদস্য তাহার সদস্যপদ খারিজের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কমিটি বরাবরে আপিল করিতে পারবে।
ঘ. কোন পার্টি সদস্য পদত্যাগে ইচ্ছুক হইলে তিনি যে ইউনিটের সদস্যভুক্ত সেই শাখা বরাবরে পদত্যাগ পত্র পেশ করিবেন। উক্ত ইউনিট কমিটি তাহার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করিয়া সদস্য রেজিষ্টার হইতে তাহার নাম বাদ দিবে এবং এ সম্পর্কে উচ্চতর কমিটিতে রিপোর্ট প্রদান করিবে।
ঙ. যদি পদত্যাগে ইচ্ছুক পার্টি সদস্য পার্টি শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করিয়া থাকেন সেই ক্ষেত্রে পদত্যাগ পত্র গ্রহণ না করিয়া তাহাকে সরাসরি বহিষ্কার করা যাইবে। তবে এই ক্ষেত্রে তাহা উচ্চতর কমিটিতে রিপোর্ট করিতে হবে এবং উচ্চতর কমিটির অনুমোদনের পরই কেবল উক্ত সদস্যের বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হইবে।

ধারা ০৯: সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ক. পার্টির কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা এবং বিশ্বস্ততার সহিত ও একনিষ্ঠভাবে পার্টির সিদ্ধান্ত, নীতি ও কর্মসূচী বাস্তবায়নে কাজ করা।
খ. মান সম্পন্ন রাজনৈতিক বইপত্র অধ্যয়ন করা এবং উচ্চ রাজনৈতিক ও আদর্শিক মান অর্জনের চেষ্টা করা।
গ. জনগণের সহিত আচরণে বিনয়ী ও নম্র হওয়া, অপরদিকে, জনগণের শত্র“দের বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম পরিচালনা করা; সমাজের সবচেয়ে পশ্চাদপদ অংশের প্রতি ভালোবাসা ও দরদ লালন করা ও তাহাদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করা।
ঘ. পার্টির গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলা মানিয়া চলা। প্রত্যেক পার্টি সদস্যের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা।
ঙ. জনগণের সহিত মিশিয়া গিয়া আন্তরিক ও নিরলসভাবে পার্টি কার্যক্রম পরিচালনা করা। পার্টি ও পার্টি নেতৃত্ব সম্পর্কে জনগণের মতামত, সমালোচনা ইত্যাদির রিপোর্ট দেওয়া। পার্টি ও জনগণের স্বার্থকে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে স্থান দেওয়া।
চ. পার্টির কাছে রাজনৈতিক মতামত গোপন না করা; পার্টির নির্দিষ্ট ফোরাম ব্যতীত অন্য কোথাও পার্টির নিজস্ব বিষয় নিয়ে আলাপ না করা এবং সমালোচনা-আত্মসমালোচনার অভ্যাস গঠন করা, ভুল করিলে তাহা অকপটে স্বীকার করা ও ভুল শুধরাইয়া লইতে আন্তরিক হওয়া।
ছ. পার্টির ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা এবং পার্টি কর্তৃক অর্পিত বিশ্বাস ভঙ্গ না করা। যে কোন বিপদ আপদে পার্টিকে রক্ষা করা।
জ. অন্য পার্টি সদস্যরা যাহাতে তাহাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করিতে সক্ষম হন তজ্জন্য সহায়তা করা এবং অন্য পার্টি সদস্যদের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।

ধারা ১০:পার্টি সদস্যের অধিকার
ক. পার্টি সদস্যদের নিুলিখিত অধিকার থাকিবে:
১. পার্টির কমিটিতে নির্বাচিত হইবার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অথবা অন্য কাউকে নির্বাচিত করিতে ভোট প্রদান করা অথবা ভোট প্রদান হইতে বিরত থাকা।
২. পার্টির দলিলপত্র পড়া।
৩. পার্টি ফোরামে নিজের মতামত প্রদান, প্রস্তাব পেশ, আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং পার্টির নীতি, কৌশল, সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচীর সমালোচনা করা।
৪. উচ্চতর কমিটিতে রিপোর্ট প্রদান করা।
৫. পার্টি ফোরামে যে কোন পদস্থ নেতা বা সদস্যের উচিত সমালোচনা করা।
খ. পার্টির কমিটিসমূহ প্রত্যেক সদস্যের এই অধিকারসমূহ নিশ্চিত ও বলবৎ করিতে বাধ্য থাকিবে।

ধারা ১১: পার্টি শৃঙ্খলা
ক. পার্টির মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখিবার জন্য প্রত্যেক পার্টি সদস্য সচেষ্ট থাকিবেন, কারণ পার্টি শৃঙ্খলা ব্যতীত পার্টির শক্তি, ভাবমূর্তি ও সংগ্রামী স্পৃহা বৃদ্ধি করা যায় না এবং জনগণকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব হয় না।
খ. পার্টির নীতি আদর্শ ও কর্মসূচী মানিয়া লইয়া স্বাধীন সম্মতির ভিত্তিতে পার্টি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।
গ. কোন সদস্য পার্টির গঠনতন্ত্র ও সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করিলে তাহাকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করা হইবে এবং তাহার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।
ঙ. শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসমূহ হইবে নিুরূপ:

১. সতর্কীকরণ
২. নিন্দাজ্ঞাপন ও সমালোচনা
৩. জনসমক্ষে নিন্দাজ্ঞাপন সমালোচনা
৪. পার্টির দায়িত্ব হইতে অপসারণ
৫. পার্টির সদস্যপদ হইতে সাময়িক অব্যাহতি, যাহার মেয়াদ অনধিক এক বছর
৬. বহিষ্কার।

চ. শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বে যতদূর সম্ভব বুঝাইয়া বলিবার নীতি প্রয়োগ করা হইবে, অর্থাৎ ভুল শোধরানোর জন্য শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী সদস্যকে অনুরোধ করা হইবে। অবশ্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরও উক্ত পার্টি সদস্যকে তাহার ভুল শোধরানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকিবে। তবে যেই ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে পার্টির গুরুতর ক্ষতি হইবার যুক্তিসঙ্গত সম্ভাবনা থাকিবে, সেই ক্ষেত্রে দ্রুত ও তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।
ছ. কোন পার্টি সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইলে প্রকৃত অভিযোগসমূহ ও এই সম্পর্কিত সকল প্রমাণপত্র হাজির করিতে হইবে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত পার্টি সদস্যের আত্মপক্ষ সমর্থন করিবার অধিকার থাকিবে।
জ. অভিযোগ প্রমাণিত হইবার পরই কেবল কোন পার্টি সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে। তবে অভিযোগ যদি গুরুতর যেমন তহবিল তছরুপ, আন্দোলন ও জাতীয় স্বাথর্ বিরোধী অথবা সামাজিক কেলেঙ্কারী হয়, তাহা হইলে অভিযুক্ত পার্টি সদস্য সম্পর্কে পূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে তাহাকে পার্টির দায়িত্ব হইতে সাময়িকভাবে অপসারণ করা যাইবে।
ঝ. যে কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে উচ্চতর কমিটিতে আপিল করা যাইবে।
ঞ. বিশেষ ও জরুরী পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কমিটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করিয়া গুরুতর অপরাধের জন্য কোন পার্টি সদস্যকে বহিষ্কার করিতে পারিবে।

ধারা ১২: জন প্রতিনিধি সভায় নির্বাচিত হইলে
ক. পার্টি ও আন্দোলনের স্বার্থে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমতিক্রমে কোন পার্টি সদস্য জাতীয় সংসদসহ জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংস্থায় নির্বাচিত হইলে তিনি পার্টির সিদ্ধান্ত, লাইন ও নির্দেশ মোতাবেক তাহার কার্যক্রম পরিচালনা করিবেন। তিনি উক্ত জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংস্থায় জনগণের স্বার্থের পক্ষে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করিবেন।
খ. উক্ত জনপ্রতিনিধি সভায় নির্বাচিত হওয়ার কারণে পার্টি সদস্য যে ভাতা পাইবেন তাহা তিনি পার্টি তহবিলে জমা দিবেন। পার্টি কমিটিই তাহার জন্য ন্যায়সঙ্গত ভাতা নির্ধারণ করিবে।
গ. জনপ্রতিনিধি সভায় নির্বাচিত পার্টি সদস্য পার্টি কমিটির সাথে দৈনন্দিন সম্পর্ক বজায় রাখিবেন ও পার্টির কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করিবেন।
ঘ. পার্টি কমিটি যদি মনে করে যে উক্ত জনপ্রতিনিধি সভায় অংশগ্রহণ করিয়া জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা যাইবে না এবং উক্ত সভা হইতে পদত্যাগ করা হইবে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত, তাহা হইলে উক্ত পার্টি সদস্য সেখান হইতে পদত্যাগ করিবেন।
ঙ. একাধিক পার্টি সদস্য জনপ্রতিনিধি সভায় নির্বাচিত হইলে তাহারা নিজেদের মধ্যে “ইউপিডিএফ জনপ্রতিনিধি সভা বা সঙ্ঘ” গঠন করিবেন।

ধারা ১৩: বিদেশে প্রতিনিধি/ প্রবাসী কমিটি
ক. পার্টির গঠনতন্ত্র, লক্ষ্য, কর্মসূচী ও নীতি আদর্শের সহিত একমত পোষণ করিয়া বিদেশে প্রবাসী কমিটি গঠন করা যাইবে এবং কেন্দ্রীয় কমিটি তাহার অনুমোদন দিতে পারিবে।
খ. ইহা ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটি বিদেশে যে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টিকে পার্টির মুখপাত্র বা প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগ করিতে পারিবে।
গ. উক্ত প্রতিনিধিগণ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ অনুসারে স্ব স্ব বসবাসরত দেশের বাস্তবতার সহিত সঙ্গতি রাখিয়া কার্যক্রম পরিচালনা করিবেন।

ধারা ১৪: গঠন কাঠামো
ক. পার্টির সর্বোচ্চ সংস্থা হইবে জাতীয় কংগ্রেস, যাহা প্রতি তিন বৎসর পর পর কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক আহুত হইবে। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে কংগ্রেস স্থগিত রাখা যাইবে।
খ. কেন্দ্রীয় কমিটি প্রয়োজন মনে করিলে অথবা পার্টির কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ সদস্য লিখিতভাবে অনুরোধ জানাইলে বিশেষ কংগ্রেস আহ্বান করা যাইবে।
গ. কেন্দ্রীয় কমিটি কংগ্রেসের স্থান, সময় ও প্রতিনিধির সংখ্যা নির্ধারণ করিবে।
ঘ. বিভিন্ন শাখা কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ কংগ্রেসে অংশগ্রহণ করিবেন। তবে কেন্দ্রীয় কমিটি প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকগণের তালিকা চূড়ান্ত করিবে।
ঙ. কংগ্রেসের কাজ হইবে নিুরূপ:
(১) পার্টির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ, ও আলোচনার পর অনুমোদন করা।
(২) পার্টির গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র, কর্মসূচী ও দাবিনামা প্রণয়ন ও সংশোধন করা।
(৩) চলমান পরিস্থিতির আলোকে রাজনৈতিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করা।
(৪) নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা।

ধারা ১৫: কেন্দ্রীয় কমিটি
ক. কংগ্রেস কর্তৃক নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটি পরবর্তী কংগ্রেস পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংস্থা হিসাবে দায়িত্ব পালন করিবে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভা বৎসরে কমপক্ষে দুইবার আহ্বান করা হইবে।
খ. কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা (বিকল্প সদস্যসহ) কংগ্রেস কর্তৃক নির্দিষ্ট হইবে।
গ. কেন্দ্রীয় কমিটি পার্টির গঠনতন্ত্র বলবৎপূর্বক কংগ্রেস কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচী ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করিবে।
ঘ. কেন্দ্রীয় কমিটি পার্টির স্বার্থে গঠনতন্ত্র মোতাবেক যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে পারিবে। তবে কেন্দ্রীয় কমিটি তাহার সকল কাজের জন্য পার্টি কংগ্রেসের নিকট দায়ী থাকিবে।
ঙ. কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যগণ তাহাদের মধ্য হইতে একজনকে পার্টির চেয়ারম্যান ও অন্য একজনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করিবেন।
চ. পার্টির চেয়ারম্যান সাধারণ সম্পাদকের সহিত পরামর্শক্রমে বাস্তবতা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক কেন্দ্রীয় সদস্যদের লইয়া একটি কার্য্যনির্বাহী কমিটি বা সেক্রেটারিয়েট গঠন করিবেন, যাহার কাজ হইবে পার্টির বিভিন্ন বিভাগীয় দপ্তর পরিচালনা করা।
ছ. গুরুতর পার্টি শৃঙ্খলা লঙ্ঘন, পার্টি বিরোধী কার্যকলাপ ও অনৈতিক আচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হইলে কেন্দ্রীয় কমিটির দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য যে কোন কেন্দ্রীয় সদস্যকে তাহার সদস্যপদ হইতে অব্যাহতি দিতে পারিবে।
জ. ১৫(ছ) ধারায় বহিষ্কারের মাধ্যমে কোন সদস্যপদ শূন্য হইলে কেন্দ্রীয় কমিটি বিকল্প সদস্যদের মধ্য হইতে যে কাউকে পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা দিয়া উক্ত শূন্য পদ পূরণ করিবে।
ঝ. কেন্দ্রীয় কমিটির কোন সদস্য গ্রেফতার হইলে, কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ বিকল্প সদস্যদের মধ্য হইতে কাউকে তাহার পদে নিয়োগ করিবেন। তবে উক্ত গ্রেফতারকৃত সদস্য কারামুুক্ত হইলে তিনি স্বীয় পদে পুনরায় আসীন হইবেন।

ধারা ১৬: কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন পদ্ধতি
ক. বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের একটি প্যানেল কংগ্রেসে উপস্থিত প্রতিনিধিদের সম্মুখে উপস্থাপন করিবে।
খ. যে কোন প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক উপস্থাপিত যে কোন প্যানেল সদস্যের বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন কিংবা নতুন কারো নাম প্রস্তাব করিতে পারিবেন। তবে নতুন নাম প্রস্তাব করিবার পূর্বে অবশ্যই উক্ত ব্যক্তির সম্মতি লইতে হইবে।
গ. প্যানেলে প্রস্তাবিত কোন সদস্যের নিজের নাম প্রত্যাহার করিবার অধিকার থাকিবে।
ঘ. হাউজে অন্য কারো নাম প্রস্তাব করা না হইলে প্রতিনিধিগণ হাত তুলিয়া বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক প্রস্তাবিত নূতন কেন্দ্রীয় কমিটির প্যানেল অনুমোদন করিবেন।
ঙ. যদি হাউজে নূতন নাম প্রস্তাবিত হয়, তাহা হইলে বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক প্রস্তাবিত প্যানেল-এর সহিত উক্ত নূতন নাম যুক্ত হইবে। প্রতিনিধিগণ গোপন ব্যালটের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক পেশকৃত প্যানেল ও পরে যুক্ত নাম হইতে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত করিবেন।

ধারা ১৭: স্থানীয় কমিটিসমূহ
ক. পার্টির জেলা, উপজেলা/থানা ও ইউনিয়ন/ওয়ার্ড পর্যায়ে এবং পৌরসভায় ইউনিট গঠিত হইবে। জেলা ইউনিট কমিটি হইবে কমপক্ষে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট, থানা কমিটি ১১ সদস্য বিশিষ্ট, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি ৭ সদস্য বিশিষ্ট এবং পৌরসভা কমিটি ৯ সদস্য বিশিষ্ট।
খ. স্থানীয় পার্টি সদস্যগণ কর্তৃক এই ইউনিটের সদস্যগণ নির্বাচিত হইবেন। ইউনিট কমিটির মেয়াদ হইবে ৩ বৎসর।
গ. উচ্চতর কমিটি নিুতর কমিটির যে কোন সদস্যকে পার্টির কাজের স্বার্থে অন্য ইউনিটে অথবা পার্টির কোন ইউনিট নাই এমন নূতন কোন অঞ্চলে বদলী করিয়া নূতন দায়িত্বভার অর্পন করিতে পারিবে। এমনকি কোন একটি ইউনিটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্মরত থাকিবার পরও কোন পার্টি সদস্যকে উচ্চতর কমিটির প্রতিনিধিরূপে উক্ত ইউনিটে নিয়োগ প্রদান করা যাইবে। এ ক্ষেত্রে উক্ত উচ্চতর কমিটির প্রতিনিধির ভূমিকা হইবে উক্ত ইউনিটে সরাসরি পার্টির কেন্দ্রীয় কর্মসূচী ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন তদারকি করা এবং নিুতর কমিটির বিভিন্ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও সমন্বয় সাধন করা।
ঘ. ১৭ (গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বদলীর কারণে কোন ইউনিট কমিটির কোন পদ শূন্য হইলে কমিটির দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতির ভিত্তিতে উচ্চতর কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে ঐ শূন্য পদ পূরণ করা যাইবে।

ধারা ১৮: পার্টি তহবিল
নিুলিখিত উৎস হইতে পার্টি তহবিল সংগৃহীত হইবে:
ক. সদস্য চাঁদা
খ. গণ প্রতিনিধি নির্বাচিত হইলে প্রাপ্ত সমুদয় ভাতা
গ. পার্টির বিভিন্ন প্রকাশনা বই পুস্তক পত্রিকা বিক্রয় হইতে প্রাপ্ত অর্থ
ঘ. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ
ঙ. শুভাকাঙ্খীদের প্রদত্ত এককালীন অনুদান
চ. গণ চাঁদা

ধারা ১৯: পার্টির গণ / সহযোগী সংগঠনসমূহ
(ক) ছাত্র, যুবক, নারী, শিক্ষক, শ্রমিক, কৃষক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার জনগণের মধ্যে গণসংগঠন গড়িয়া তোলা হইবে। এই সকল সংগঠনসমূহ পার্টির নেতৃত্বে পরিচালিত হইবে এবং এখানে কর্মরত পার্টি সদস্যদের কাজ হইবে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার জনগণের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা, গণভিত্তি সুদৃঢ় করা এবং জনগণের সংগ্রামী স্পৃহা জোরদার করা।
(খ) হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামসহ পার্টির অন্যান্য গণসংগঠনে কর্মরত রাজনৈতিক চেতনায় ও কর্মে অগ্রসর সদস্যদেরকে পার্টিতে পূর্ণ সদস্যপদ প্রদান করা হইবে।

ধারা ২০: বাই ল বা উপ-বিধি প্রণয়ন
কেন্দ্রীয় কমিটি পার্টি শৃঙ্খলা জোরদার ও কার্যক্রম বৃদ্ধি করিবার লক্ষ্যে গঠনতন্ত্রের সহিত সামঞ্জস্য রাখিয়া উপ-বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।

ধারা ২১: গঠনতন্ত্রের সংশোধন
পার্টি কংগ্রেসে কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ প্রতিনিধির সম্মতিতে গঠনতন্ত্রের সংশোধন করা যাইবে।

উপরোক্ত গঠনতন্ত্র শুধুমাত্র ইউপিডিএফ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য। সশস্ত্র গেরিলা বিভাগ পরিচালনার জন্য যে গঠনতন্ত্র রয়েছে তা প্রকাশ্য নয়। সরকার ও জনগণের অন্তরালে এই গঠনতন্ত্র দিয়ে ইউপিডিএফ সশস্ত্র বিভাগ পরিচালিত হয়। কী আছে? এই গোপন গঠনতন্ত্রে তা জানা না গেলেও ইউপিডিএফ সূত্র ও ইউপিডিএফ ত্যাগ করা নেতাকর্মীরা বলছে, ইউপিডিএফ সশস্ত্র বিভাগের জন্য প্রণীত গঠনতন্ত্র সম্পর্কে দলের শীর্ষসারির মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া বেশিভাগ সদস্য এই গঠনতন্ত্র সম্পর্কে জানেনা। পাহাড়ি জাতিকে স্বাধীন ভূখণ্ড, এবং নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনসহ যুব বয়সে জাতির কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা সাচ্চা বিপ্লবী। এমন ধ্যান ধারণা দিয়ে ইউপিডিএফ হাজার জানা পাহাড়ি যুবকদের দলে ভিড়িয়েছে। কিন্তু দলের শীর্ষ হাইকমান্ডের মূল উদ্দেশ্য হলো, পার্বত্য চট্টগ্রামে আধিপত্য বিস্তার করা, এজন্য অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ, প্রতিপক্ষকে চেপে ধরা, পাহাড়ে বাঙালি নিধন, সরকারি বাহিনীর উপস্থিত বন্ধসহ এ অঞ্চলকে রাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করা, এবং চাঁদাবাজির বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে নিজেরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করা। এর ফলে দলের হাইকমান্ড ও মাঠ সদস্যের সঙ্গে প্রায় মতবিরোধ তৈরি হয়। যার কারণে সাংগঠনিকভাবে বিভিন্ন প্রতিবান্ধকতা তৈরি হয়। এরপর তো আছে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অভিযান এবং প্রতিপক্ষ দলগুলোর টার্গেট মিশন। সব মিলিয়ে ইউপিডিএফ কে সাংগঠনিক কার্যক্রম করতে অনেক সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। ইউপিডিএফ রাজনৈতিক শাখা আত্মগোপনে থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করেন কঠোরভাবে। সরকারি বাহিনী ও প্রতিপক্ষ দলের উপর থাকে ইউপিডিএফ নেতাকর্মী, সোর্স ও সমর্থকদের নিবিড় নজরদারি। সরকার বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন অপরাধ— রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে আটককৃত ইউপিডিএফ নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে রয়েছে, আইনজীবি প্যানেল ও কূটনীতিক তৎপরতা ও জনপ্রতিনিধি । অর্থের বিনিময়ে এবং পাহাড়ি জাতিসত্তার স্বাধীকার আন্দোলনে ইউপিডিএফ কাজ করছে এমন সাইনবোর্ডে ইউপিডিএফ আটককৃত নেতাকর্মীদের মুক্ত করেন। ইউপিডিএফ পাহাড়ি জনগণকে সাথে রাখতে ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলন করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের ২ জেলার ১০টি উপজেলার রয়েছে ইউপিডিএফ সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। যারা ইউপিডিএফের ডাকে কর্মসূচী বাস্তবায়নে সর্বদা প্রস্তুত থাকেন। সরকারি বাহিনীর কার্যক্রমের উপর নজরদারি করতে ইউপিডিএফ গণলাইনে বিভিন্ন সোর্স নিয়োজিত রেখেছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়ের গহীন পর্যন্ত ইউপিডিএফ সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এদের এই সাংগঠনিক পরিচালনার জন্য সবচেয়ে বড় প্রেরণা চাঁদাবাজির বিপুল পরিমাণ টাকা৷ ইউপিডিএফ রাজনৈতিক শীর্ষ শাখার নেতৃবৃন্দ প্রায় এইচএসসি থেকে অনার্স, মাস্টার পর্যন্ত। ইউপিডিএফ রাজনৈতিক দলে শিক্ষিতদের হার বেশি তাই সাংগঠনিক পরিচালনা ও দীর্ঘদিন নেতৃত্বে আসনে আসীন। যার কারণে শক্তভাবে সশস্ত্র বিভাগ পরিচালনা করছে। ইউপিডিএফ সূত্র গুলো বলছে, রাজনৈতিক শাখায় নিয়োজিত আছে, প্রায় ৩ হাজার সদস্য, সশস্ত্র বিভাগে প্রায় ১৮ শতাধিক সদস্য। দুইটি বিভাগে সুশৃঙ্খল পারষ্পরিক সম্পর্ক, যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান রয়েছে। প্রতিবেশি দেশ থেকে অস্ত্র ক্রয় ও প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশের মাটিতে রয়েছে ইউপিডিএফ রাজনৈতিক শাখার নেতৃবৃন্দ এবং কূটনীতিক মহল। সরকারি বাহিনী থেকে বাঁচতে যোগাযোগ বিহীন গহীন অরণ্যে ইউপিডিএফ স্থাপিত করেছে সশস্ত্র ক্যাম্প ও ভাসমান ক্যাম্প। সাধারণ জনগণ ভয়ে সশস্ত্র বিভাগকে রসদ সরবরাহ করে। বিভিন্ন দিকদিয়ে সুবিধা প্রদান করে। পাহাড়ে প্রতিকূল পরিবেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক ও অতি দুর্গমতার সুযোগ ইউপিডিএফ কে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র তৎপরতা পরিচালনা করতে সহায়ক। সহজসরল ও হতদরিদ্র পাহাড়ি জাতিসত্তা অস্ত্র শক্তির কারণে অসহায় যার ফলে আঞ্চলিকদল ইউপিডিএফ সাংগঠনিক ও সশস্ত্র তৎপরতা পরিচালনা করতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে। শীর্ষ নেতৃবৃন্দ শিক্ষিত কিন্তু পেশকৃত দাবিদাওয়া সংবিধানপরিপন্থী এবং জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ড থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণে ইউপিডিএফ ব্যর্থ সংগঠনের পরিণত হয়েছে। যার প্রভাব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ।

আগের পোস্টপাহাড়ে চলছে ইউপিডিএফ এর তথ্য সন্ত্রাস।
পরের পোস্টপাহাড়ে চাঁদাবাজির এক ভয়ঙ্কর নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করেছে জেএসএস।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন