কুকি-চিন কারা?

0
14

কাক যেমন ময়ুরের পেখম লাগালে ময়ুর হয়না তেমনিই বম জনগোষ্ঠী বা স্থানীয়ভাবে খ্যাত বম পার্টি ‘কুকি-চিন’ হয়না। এ যেমন চিরসত্য উক্তি তেমনি বম জনগোষ্ঠীর জন্য ইতিহাস থেকে শিক্ষার দৃষ্টান্ত হতে পারে। বিগত বছরে বম জনগোষ্ঠীর একটি উগ্র ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন বিপদগামী বা দেশবিরোধী অংশ নানাভাবে বম জনগোষ্ঠীর মানুষদের প্রলুব্ধ করে সন্ত্রাসবাদের মত আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার চেষ্ঠা করে আসছে৷ বম জনগোষ্ঠীর এ লোকেরা নিজেদের কুকিভুক্ত জাতির ৫টি জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক সংগঠন হিসেবে খ্যাতি লাভ করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে। তাদের এ অপপ্রয়াস ধূলিসাৎ করে দিয়েছে ইতোমধ্যে কুকিভুক্ত জাতির প্রতিনিধিগণ। বম পার্টি সন্ত্রাসী বা কথিত কেএনএফ নামক সংগঠন সৃষ্টির পেছনে যারা কুকি জনগোষ্ঠীর পিছিয়ে পড়াকে দায় করেছেন, তাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান, পাহাড়ের দুর্গমতা, উচুঁ নিচু পাহাড়ের পরিবেশ, অতীত ইতিহাস, প্রকৃত সমস্যা ও চরম বাস্তবতা সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান ধারণা রাখেন না। কথিত কেএনএফ সৃষ্টিকারী ব্যক্তিরা কুকি-চিন নাকি অন্য কোন ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী? এ বিষয়টি জানা না থাকার ফলে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হচ্ছে। এ ভ্রান্ত ধারণাকে কাজে লাগাতে উড়েপড়ে তৎপর বম জনগোষ্ঠীর স্থানীয়ভাবে খ্যাত বম পার্টি নামক সন্ত্রাসীরা। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভিন্ন ভাষাভাষী ধর্ম বর্ণের বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর বসবাস। এসব কারণসহ ভৌগোলিকগত কারণে এখানে অনেক অশুভ শক্তির ইঙ্গিত সবসময় সক্রিয় থাকে। এছাড়াও পাহাড়ে দুর্গমতা ও উঁচু-নিচু পর্বত পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে এখানকার ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কিছু দুষ্কৃতকারী ব্যক্তি ব্যাঙের ছাতার মত নতুন নতুন সংগঠন খুলে বসে৷ যে যার যার মত জাতির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে। চাঁদাবাজির এ বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে অবৈধ অস্ত্রক্রয় করে। চাঁদাবাজি টাকার ভাগবাটোয়ারা ও এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি সংগঠনগুলো রক্তারক্তি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তাদের চোরাগোপ্তা হামলার প্রদান টার্গেট কিন্তু নিরিহ পাহাড়ি-বাঙালি ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। চোরাগোপ্তা হামলা করে তারা পাহাড়ের গহীনে পালিয়ে যায়। প্রশাসনের অভিযান শুরু হলে সীমান্ত পাড়ি দেয়। এ সংগঠনগুলো সাংগঠনিক টিকিয়ে রাখতে অনেক সময় প্রশাসনের নামে নানা কুৎসা ও মিথ্যা বানোয়াট তথ্য ছড়িয়ে থাকে। জাতিগত নিধনের অভিযোগও তাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক না! ভয়ভীতি সৃষ্টি করতে অনেক অপরাধ সংঘটিত করে। উপজাতি জাতিসত্তাগুলোর প্রতি রাষ্ট্রের সহনশীল ও সহানুভূতি নীতির ফলে আস্কারা পেয়ে এসব সন্ত্রাসীরা মামার বাড়ির আবদার পেয়ে বসেছে৷ খেয়ালখুশি মত এমন সব অযৌক্তিক দাবিদাওয়া পেশ করে বসে যা রাষ্ট্রের পক্ষে কখনো কখনো মেনে নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। এ সুযোগে নিজেদের শক্তিসামর্থ্য প্রদর্শন করতে নাশকতা করে বসে। আর এই নাশকতাকে একটি মহল উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকার সংক্রান্ত বিষয় বলে চালিয়ে দিতে ব্যস্ত! আজকে পাহাড়ে সৃষ্ট বম পার্টি বা কথিত কেএনএফ নামক সন্ত্রাসী সংগঠনটি সামগ্রিকঅর্থে কোন জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের সংগঠন না। কার্যত চাঁদাবাজি করার জন্য তারা জাতির অধিকারের ফেরি করে থাকে। তাদের সৃষ্টি কিন্তু দুর্গমতাকে কাজে লাগিয়ে জনগণের মধ্যে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদাবাজি করা। পাহাড়ে দুর্গমতার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে পিছিয়ে আছে সবাই জানেন। তাই এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দ্রুত উন্নতি সাধন করা সহজ ব্যাপার না। পাহাড়ের এ সমস্যা টাকে ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। বর্তমান নেট যুগে মানুষ মিথ্যাকে সত্যরূপে প্রতিষ্ঠা করতে অনেক কুটকৌশলের আশ্রয় নেয়। তাই কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা ঘটনা তা জানা কঠিন। বিগত বছরগুলোতে বান্দরবানের পরিস্থিতি নিয়ে মাতামাতি কম হয়নি। সরকারের সঙ্গে চলমান শান্তি প্রক্রিয়ার আলোচনার টেবিল থেকে নিজেদের প্রত্যাখ্যান করা একটি সংগঠন কতটা শান্তির পথে তা হয়তো সবার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। একপেশে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে অধিকার আদায়ের সংগঠন তকমা দিয়ে তাদের আস্কারা দেওয়া স্বাভাবিকভাবেই যথার্থ না। স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জাতিসত্তাগুলোর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অস্ত্রবাজির মাধ্যমে চাঁদাবাজি, মানুষের জীবনযাত্রায় বাধাপ্রদান ও পর্যটকের উপর হামলা ও জনজীবনে বিপন্নতা সৃষ্টি কিন্তু ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এ বিষয়টি সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। অপরাধকারী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। ব্যাঙের ছাতার ন্যায় একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কোন শক্তির বলে পাহাড়ের গহীনে আত্মগোপনে থেকে একনলা বন্দুক আর বিদেশের মাটিতে অবস্থানকারী বম জনগোষ্ঠীর কিছু বিপদগামী যুবক তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে নিজেদের কুকি সংগঠন দাবি করে?

সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে অশান্তির বীজবপনকারী বম জনগোষ্ঠী আসলেই কী কুকি-চিন? বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ প্রশ্নটি জনসম্মুখে ঘুরপাক খাচ্ছে। চলিত বছরে বান্দরবানের রুমা-থানচি তিনটি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ব্যাংকের টাকা লুট, ম্যানেজার অপহরণ, পথচারী জিম্মি ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্র লুটপাটের ঘটনার পর বম পার্টি আলোচনায় আছে। এ গর্জে ওঠা বম পার্টি ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা (কেএনএফ)’ নামক নাম ধারণ করে! বিষয়টি অবাক হওয়ার মত। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর কুকিভুক্ত জনগোষ্ঠী- লুসাই, পাংখোয়া, খিয়াং, মুরং ও খুমিসহ ৫টি জাতির প্রতিনিধিগণ— গত ১৯ মে সংবাদসম্মেলনের মাধ্যমেই উক্ত বিষয়টি জনসাধারণের অবগতির জন্য স্পষ্ট করে বলেছেন যে, বম জনগোষ্ঠীর বম পার্টি সন্ত্রাসীরা পরবর্তীতে কথিত কেএনএফ নামধারণকারী সঙ্গে কুকিভুক্ত জাতিগুলোর কোনপ্রকার সম্পৃক্ততা নেই। বম পার্টির সন্ত্রাসীরা কেন যে ‘কুকি-চিন’ বা কেএনএফ নাম পরিচয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কুকিভুক্ত জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করে আসছে তা কুকি নেতাদের বোধগম্য নয়। কুকি নেতারা বলেন, “আজকে পাহাড়ে কুকি-চিন বা কেএনএফ দাবিদার বম জনগোষ্ঠীর বম পার্টির সন্ত্রাসীরা নিজেদের কুকিভুক্ত জনগোষ্ঠীগুলোর অধিকার আদায়ের সংগঠন হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে! বিষয়টি নিয়ে আমরা ৭৬,৫৮১ জন কুকি জনগোষ্ঠী বিব্রতবোধ করছি। আমরা বম পার্টির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বম পার্টি তথা তাদের প্রতিষ্ঠাতা নাথান বম গংরা দেশবাসীর কাছে একটা ভূল বার্তা বরাবরই পৌছাতে অপপ্রয়াস চালিয়েছে আসছে যে, কুকি-চিন আর বম জনগোষ্ঠী একই! আমরা যারা জানি বা জানিনা প্রত্যেকের এটি জানা উচিত যে, ‘কুকি-চিন আর বম জনগোষ্ঠী কোনভাবেই এক নয়। বম জনগোষ্ঠীর বম পার্টির আরেকটি মিথ্যা বাণী হল, বম পার্টি পিছিয়ে পড়া কুকি জনগোষ্ঠীর অধিকারে জন্য প্রতিষ্ঠিত! প্রকৃত সত্য হচ্ছে, বম পার্টি আর কুকি-চিন এক নয়। বরং কুকিভুক্ত সমগ্র জাতিগোষ্ঠীর কোনই সংগঠন নয় কেএনএফ। কেএনএফ হচ্ছে বম পার্টি নামক খ্যাত সন্ত্রাসীদের অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি ও খুন-খারাবি এবং অরাজকতার মাধ্যমে এ অঞ্চলের শান্তি বিনষ্ট করার একটি সংগঠন মাত্র। যেটি কুকি জাতির কেএনএফ নাম ব্যবহার করে আসছে উদ্দেশ্য প্রণোদীতভাবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান প্রেক্ষাপটের দৃষ্টিকোণ থেকে স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন—
কুকিভুক্ত লুসাই, পাংখোয়া, খিয়াং, মুরং ও খুমিরা অত্যান্ত শান্তিপ্রিয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। তারা পাহাড়ে যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। রাষ্ট্রের অন্যান্য জনগণের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক বহুকাল থেকে বিদ্যমান। রাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে কুকিভুক্ত ৫টি জাতির অংশগ্রহণ এ দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনকে বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল করেছে৷ পাহাড়ে সরকারের যে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সাধিত হচ্ছে তার অংশীদার কিন্তু কুকিসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জাতিসত্তার মানুষজন। কুকিদের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ও বাঙ্গালী জনগণের গভীর মিতালি আছে এমন জনশ্রুতি আছে৷ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে কুকিরা অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থেকে পিছিয়ে আছে এ কথাটি শতভাগ সত্য না হলেও অনেকাংশেই সত্য অধিকন্তুু তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সড়ক নির্মাণ, স্কুল-কলেজ স্থাপন, হাসপাতাল নির্মাণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির অংশ হিসেবে নানামুখী পদক্ষেপ সরকার হাতে নিয়েছে। এ পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক কুকি জনগোষ্ঠীকে ইস্যু করে বম পার্টির উগ্র ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন নাথান বম গংরা ‘কুকি-চিন জনগণের নাম দিয়ে চুরি, ডাকাতি, মানুষ খুন-গুম ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলেছে। ব্যাংক লুটপাট ও পুলিশ, আনসার সদস্যদের অস্ত্র লুটপাট করার মাধ্যমে দেশবিরোধী অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে। তাদের এই সন্ত্রাসবাদের বলি হচ্ছে নিরপরাধ মানুষগুলোই। আজকে বম জনগোষ্ঠীর একটি অংশ সন্ত্রাসবাদের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবেই জড়িত। এর সঙ্গে বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই প্রান্তিক কুকি জনগোষ্ঠীর। বর্তমানে প্রতিবাদের ভাষায় বম জনগোষ্ঠীর এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতাকে ঘৃণার সাথে প্রত্যাখান করেছে কুকি জনগণ। বম পার্টির নাথান বমের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ভূয়া ফেসবুক আইডি ও পেইজ থেকে যেসব সংবাদ পাচ্ছে দেশবাসী তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। যা তথ্য সন্ত্রাসের অংশ। বম সন্ত্রাসীরা কুকি জনগোষ্ঠীর কর্ণধার দাবি করে তাদের পক্ষে সহানুভূতি আদায়ে অনেক বার্তা দিচ্ছে। যদিও তা এদেশের জনগণের সহানুভূতি আদায় করার চেষ্টা বলে মনে করেন সবাই। এটি যে পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক ক্রিয়া তা কিন্তু আগে ধারণা করা গেছে। মূলত সন্ত্রাসবাদ কায়েম করার জন্যেই সরকারি বাহিনীগুলোকে বিতর্কিত করতে তারা নানামুখী মিথ্যাচারে লিপ্ত বম সংগঠন।

কুকি-চিন কারা এই বিতর্ক অবসানে নিমিত্তে আগে কুকি জনগোষ্ঠীর ইতিহাস জানা প্রয়োজন।
কুকি ও লুসাই শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে শ্রী রমাপ্রসাদ দত্তের গবেষণামূলক “লুসাই কুকিদের ইতিকথা” বইটি থেকে জানা যায়, ‘লুসাই’ শব্দটি বর্তমান সময়ে ব্যাপক অর্থ বহন করছে। ‘লুসাই’ বলতে এখন বহু পরিবারের লোকদের বুঝিয়ে থাকে। ‘লুসেই’ শব্দটির ভুল Transliteration-এর ফলেই ‘লুসাই’ শব্দ সৃষ্টি হয়েছে, ‘লুসেই’ হল বংশের নাম। এই বংশ থঙ্গুর, পড়ুআও ছংতে, ছোংতে, ছোআছেং প্রভৃতি অনেক পরিবারে বিভক্ত। প্রত্যেক পরিবারেও রয়েছে বেশ কয়েকটি করে শাখা।

আজকে যাদেরকে আমরা মিজো বলি তারাও লুসাইয়ের একটি শাখা। ত্রিপুরার জম্পুই পাহাড়ে যারা বাস করে তাদেরকে আমরা মিজো বলে থাকি।

ক্যাপ্টেন সেক্সপীয়ার তাঁর গ্রন্থে সেখানকার অধিবাসীদের বলেছিলেন লুসাই কুকি জাতীয়। সেই থেকে অ-মিজোদের নিকট মিজোরা লুসাই নামে পরিচিত। মিজোদের ভাষায় কুকি মানে শিং এবং অতীত কালে মিজো ও অন্যান্য কুকিরা শৃঙ্গ সমন্বিত টুপি পরতো কিন্তু তা কুকিরা ‘কুকি’ বলতে বুঝত মস্তক শিকারী। মিজোদের ভাষায় ‘লু’ অর্থ হচ্ছে শির, আর ‘সেই’ অর্থ বড়। কুকি ভাষাতেও ‘কুকি’র প্রতিশব্দ রয়েছে- তারা বলে ‘হায়েম’।

মিজোরা অনেকগুলি উপজাতিতে বিভক্ত। যেমন লুসাই, মার, রংরাইতে, জাংতে, রাখমে, সাইলো, জদেং, থাংলিয়া, রিবোং ‘রাংখম’ পাঁচুহীন, শিয়াক, কলনে, তাংজিরা ইত্যাদি। মিজোদের মধ্যে অনেকগুলি কথ্য ভাষা আছে। তার মধ্যে লুসাই ভাষাই সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয়, মিজোদের কোন ভাষারই নিজস্ব বর্ণমালা নেই। খ্রীষ্টান ধর্ম প্রচারকেরা লসাই’ ভাষাকে রোমান হরফে ট্রেন্সলিটারেশন বা উচ্চারণ অনুসারে অক্ষরীকরণ দ্বারা মিজো অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রচলন করেছেন। মিজো ছেলে মেয়েরা রোমান হরফে লুসাই ভাষার ইতিহাসে ভুগোল অধ্যায়ন করে, লুসাই ভাষায় ‘x’, ‘y’ ও ‘a’ এর ব্যবহার নেই।

উপরোক্ত ইতিহাসভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত ও অন্যান্য গবেষণামূলক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, লুসাই বা কুকি জাতীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বম জনগোষ্ঠীর কোনপ্রকার সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই; কুকি-লুসাই জনগোষ্ঠীর বর্ণিত অনেক শাখা-প্রশাখা আছে। সেসব শাখা-প্রশাখায় বম জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই। গোষ্ঠীগত বা বংশপরম্পরায় কুকিদের কোন শাখা না বম জনগোষ্ঠী। বর্তমানে ভারত ত্রিপুরা, মিজোরাম ও বাংলাদেশে কুকিদের অবস্থান। কিন্তু উৎপত্তিস্থল ত্রিপুরা ও মিজোরামে। ভারতসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতে এদের আদিনিবাস। এদের আদিনিবাস কোনভাবেই বাংলাদেশে না। তা কুকি পন্ডিতরা স্বীকার করে। ঐতিহাসিকদের গবেষণা অনুযায়ী, কুকিরা ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে বা তার কিছু সামান্য আগে পরে যাযাবর হিসেবে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করে।

আর এদিকে বম জাতির আবাসভূমি হচ্ছে মায়ানমারের চিন প্রদেশ। এখনো ইতিহাস ভিত্তিক বইপুস্তক ঘাটলে এটাই পাওয়া যাবে। উল্লেখ যোগ্য তথ্য হচ্ছে, উইকি। সুতরাং বম জনগোষ্ঠী সরাসরি কুকি বা লুসাই জনগোষ্ঠীর কোন শাখা-প্রশাখা নয়। অনুরূপভাবে কুকিদের মত বমরাও পার্বত্য চট্টগ্রামে যাযাবর জনগোষ্ঠী হিসেবে বসতিস্থাপন করে। বমদের পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি দাবি বা ভূমিপুত্র হিসেবে স্বায়ত্তশাসন (রাজ্য) দাবি কতটুকু ন্যায় সঙ্গত সেটা ইতিহাসের পাতা বলে দিবে। কুকিদের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে দুর্নাম আছে এ দুর্নামের কেন্দ্র বিন্দুতে কিন্তু জড়িত বম জনগোষ্ঠী৷ সবসময় কুকি জনগোষ্ঠীর নাম ও পরিচয় বহন করে অপকর্ম করেছে বম জনগোষ্ঠী। হতাশাজনক হচ্ছে, তারা অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগোষ্ঠীর সঙ্গেও বিরোধ তৈরি করেছে। যে বিরোধ শতাব্দীর পরেও বিরাজমান। যার কারণে আজকে সম্প্রীতির বান্দরবানে কালো মেঘে ছেয়ে আছে। বমদের অন্য জাতির প্রতি হিংসাত্মক আচরণ এতদিন ধরে অপ্রকাশিত থাকলেও চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য কুকিরা বিশ্বাসঘাতক বামদের সন্ত্রাসবাদ ও অশান্তির দাবানল সৃষ্টিকে দায় করে আসছে। এরপর থেকে বিষয়টি নানাভাবে প্রকাশ পেতে থাকে।

বম জনগোষ্ঠীর উৎপত্তি ও ইতিহাস সম্পর্কে যথা উপর্যুক্ত তথ্য উপাত্ত থেকে জানা যায়, মায়ানমারের চিন প্রদেশে বসবাসরত চিনভিত্তিক লাই জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগোষ্ঠীর বসবাস আছে। এসব জনগোষ্ঠীগুলো ‘লাই জনগোষ্ঠীর’ অন্তর্ভুক্ত। আর বম জনগোষ্ঠী চিনভিত্তিক লাই জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত শাখা। এ বম জনগোষ্ঠী মূলত চিন অন্তর্ভুক্ত কিন্তু কুকি অন্তর্ভুক্ত নয়। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে, লাই তথাকথিত চিন-কুকি-মিজোর প্রভাবশালী উপজাতিগুলোর মধ্যে একটি। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী/ উপজাতি পরিচয় বিচারে তারা এক কিন্তু গোষ্ঠীগত স্ব পরিচয়ে এক নয়। বম জনগোষ্ঠী যে কুকিদেরই গোষ্ঠী বা বংশপরম্পরায় উৎপত্তি এমন কোন শক্ত তথ্য প্রমাণ বমদের হাতে নেই। চিন লাই জনগোষ্ঠী কুকি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে উপজাতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয় নিয়ে নানান বিতর্ক ও মতবাদ বিদ্যমান। উপজাতি পরিচয়ে বা স্বীকৃতিতে সমগ্র পৃথিবীর সব উপজাতি সংজ্ঞা এক এটা ঠিক। তাই এ বিষয়ে জাতিসংঘের ILO Convention ঘোষণাপত্র তথা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে একমত কিন্তু গোষ্ঠীগত, বংশপরম্পরায়, বর্ণগত, ভাষাগত, সংস্কৃতি-ঐতিহ্যগত ও নানাবিধ দিক দিয়ে স্ব স্ব পরিচয়ে উপজাতিগুলো একে অন্য থেকে সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা। সবার স্ব-স্ব পরিচয় আছে। বিষয়বস্তু বুঝার সুবিধার্থে একই শব্দ ও বাক্য স্থানবেধে বিবৃত হয়েছে। সুতরাং মায়ানমারের চিন প্রদেশের লাই জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত চিন পরিচয়ের বম জনগোষ্ঠী আর কুকি জনগোষ্ঠী এক নয়। কেউ যদি কুকি শব্দের সঙ্গে চিন শব্দ যুক্ত করে ‘কুকি-চিন’ পরিচয় বহন করেই ভারতের বিশাল মিজো কুকি লুসাই জাতীয় ও বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের কুকিভুক্ত জাতিগোষ্ঠীগুলোর অধিকার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অসাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার দাবিদাওয়া পেশ করে তখন সেটা কুকিভুক্ত জনগোষ্ঠীর দাবি হয়না। তখন সেটা হয় উদ্দেশ্যমূলক প্রতারণা। অস্ত্র হাতে নিয়ে সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে নিজেদের কুকি-চিন দাবি করা যেমন হাস্যকর তেমনি কুকিভুক্ত জনগোষ্ঠীর নাম ব্যবহার করা অর্থহীন। ইতিহাস পর্যালোচনা করে আমরা যেটা পায় সেটা হল, মায়ানমারের চিন প্রদেশে চিনভিত্তিক লাইন জনগোষ্ঠী চিন নামের বম জনগোষ্ঠী কিন্তু কুকি জাতি নয়। এবং কুকি-চিনও নয়। বরং কুকি-চিন সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী দ্বারা গঠিত উপজাতি হতে পারে অথাৎ কুকি-চিন গোষ্ঠীগত বা বংশপরম্পরায় কোন একক জাতি নয়। কুকি-চিন শব্দটি একটি ভূল শব্দ তাও বলছি না শুধু বলছি কুকি-চিন শব্দটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করা হয়েছে৷ যেমন চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের স্ব-স্ব পরিচয় আছে সামগ্রিকভাবে তারা উপজাতি। কিন্তু এই বলে তারা একই গোত্র বা বংশপরম্পরায় তা কিন্তু না। কুকিদের পরিচয় হবে কুকি বা লুসাই আর বমদের পরিচয় হবে বম জনগোষ্ঠী। উল্লেখ যোগ্য তথ্য হচ্ছে, বম জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের চিনভিত্তিক লাই জনগোষ্ঠী (মিয়ানমারে চিন ও ভারতে পাওয়ি নামে পরিচিত)। এখন প্রশ্ন হল, তারা কীভাবে পাহাড়ে কুকি জাতীয়তাবাদের ধারণা করে? চিন ভিত্তিক লাই জনগোষ্ঠীর ‘চিন’ নামটি কুকি জাতির সঙ্গে পাশাপাশি জড়িয়ে তারা ‘কুকি-চিন’ জাতিভুক্ত দাবি করছে কেন? অনুসন্ধানে জানা যায়, বমদের উৎপত্তি মিয়ানমারে হলেও সেখানেই এখন সবচেয়ে কমসংখ্যক বমদের দেখা পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচিতে। মূলত সেখানে তারা জাতিগত নিপীড়নের শিকার হওয়ার ফলে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে দিকে অগ্রসর হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। একে তো যাযাবর জনগোষ্ঠী অন্যদিকে উগ্র ও সাম্প্রদায়িক পরিচায়ক হিসেবে বিভিন্ন স্থান থেকে তারা নিপীড়নের মাধ্যমে বিতাড়িত হচ্ছে। স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যান্য উপজাতি জনগোষ্ঠী কর্তৃক বিতাড়নের মাধ্যমে ভূমি হারানোর শঙ্কা করছে ‘বম জনগোষ্ঠী’। হয়তো এই ভয় থেকে বম একটি উগ্র অংশ নাথান বমের নেতৃত্বে হয়তো বা ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীর নীল নকশা বাস্তবায়নে কুকি জনগোষ্ঠীর নাম পরিচয় ধারণ করে সশস্ত্র গেরিলা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের কথিত অস্তিত্ব বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা করতে অপরাধের দিকে ধাবিত হয়েছে। সাধারণ বমদের সঙ্গে কথা বলেও তাদের ভূমি হারানোর শঙ্কার মনোভাব জানা গেছে৷ তারা পার্বত্য মাটি থেকে উচ্ছেদ হবে তাদের মধ্যে এধরণের একটি প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম একসময় তাদের স্বাধীন কুকিল্যাণ্ড ছিল এমন গল্পকাহিনী নির্ভর কথাও সাধারণ বমদের মধ্যে রেয়াজ আছে৷ কোন স্বার্থনীশি বিশেষ মহল বমদের দিয়ে এসব করাচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা। কিন্তু তাদের এ ভূমি হারানো বা বিতাড়নের আশঙ্কা একদম সত্যি নয় এটা খোদ পাহাড়ের চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরারা স্বীকার করেন। কারণ বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকার প্রতিটি উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ে আন্তরিক। পাহাড়ে প্রতিটি জাতি যেন তার অধিকার নিয়ে বেছে থাকতে পারে সরকার সে মানসেই কাজ করে আসছে।

সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে অশান্তির বীজবপনকারী বম জনগোষ্ঠী আসলেই কী কুকি-চিন? বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ প্রশ্নটি জনসম্মুখে ঘুরপাক খাচ্ছে। চলিত বছরে বান্দরবানের রুমা-থানচি তিনটি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ব্যাংকের টাকা লুট, ম্যানেজার অপহরণ, পথচারী জিম্মি ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্র লুটপাটের ঘটনার পর বম পার্টি আলোচনায় আছে। এ গর্জে ওঠা বম পার্টি ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা (কেএনএফ)’ নামক নাম ধারণ করে! বিষয়টি অবাক হওয়ার মত। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর কুকিভুক্ত জনগোষ্ঠী- লুসাই, পাংখোয়া, খিয়াং, মুরং ও খুমিসহ ৫টি জাতির প্রতিনিধিগণ— গত ১৯ মে সংবাদসম্মেলনের মাধ্যমেই উক্ত বিষয়টি জনসাধারণের অবগতির জন্য স্পষ্ট করে বলেছেন যে, বম জনগোষ্ঠীর বম পার্টি সন্ত্রাসীরা পরবর্তীতে কথিত কেএনএফ নামধারণকারী সঙ্গে কুকিভুক্ত জাতিগুলোর কোনপ্রকার সম্পৃক্ততা নেই। বম পার্টির সন্ত্রাসীরা কেন যে ‘কুকি-চিন’ বা কেএনএফ নাম পরিচয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কুকিভুক্ত জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করে আসছে তা কুকি নেতাদের বোধগম্য নয়। কুকি নেতারা বলেন, “আজকে পাহাড়ে কুকি-চিন বা কেএনএফ দাবিদার বম জনগোষ্ঠীর বম পার্টির সন্ত্রাসীরা নিজেদের কুকিভুক্ত জনগোষ্ঠীগুলোর অধিকার আদায়ের সংগঠন হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে! বিষয়টি নিয়ে আমরা ৭৬,৫৮১ জন কুকি জনগোষ্ঠী বিব্রতবোধ করছি। আমরা বম পার্টির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বম পার্টি তথা তাদের প্রতিষ্ঠাতা নাথান বম গংরা দেশবাসীর কাছে একটা ভূল বার্তা বরাবরই পৌছাতে অপপ্রয়াস চালিয়েছে আসছে যে, কুকি-চিন আর বম জনগোষ্ঠী একই! আমরা যারা জানি বা জানিনা প্রত্যেকের এটি জানা উচিত যে, ‘কুকি-চিন আর বম জনগোষ্ঠী কোনভাবেই এক নয়। বম জনগোষ্ঠীর বম পার্টির আরেকটি মিথ্যা বাণী হল, বম পার্টি পিছিয়ে পড়া কুকি জনগোষ্ঠীর অধিকারে জন্য প্রতিষ্ঠিত! প্রকৃত সত্য হচ্ছে, বম পার্টি আর কুকি-চিন এক নয়। বরং কুকিভুক্ত সমগ্র জাতিগোষ্ঠীর কোনই সংগঠন নয় কেএনএফ। কেএনএফ হচ্ছে বম পার্টি নামক খ্যাত সন্ত্রাসীদের অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি ও খুন-খারাবি এবং অরাজকতার মাধ্যমে এ অঞ্চলের শান্তি বিনষ্ট করার একটি সংগঠন মাত্র। যেটি কুকি জাতির কেএনএফ নাম ব্যবহার করে আসছে উদ্দেশ্য প্রণোদীতভাবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান প্রেক্ষাপটের দৃষ্টিকোণ থেকে স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন—
কুকিভুক্ত লুসাই, পাংখোয়া, খিয়াং, মুরং ও খুমিরা অত্যান্ত শান্তিপ্রিয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। তারা পাহাড়ে যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। রাষ্ট্রের অন্যান্য জনগণের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক বহুকাল থেকে বিদ্যমান। রাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে কুকিভুক্ত ৫টি জাতির অংশগ্রহণ এ দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনকে বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল করেছে৷ পাহাড়ে সরকারের যে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সাধিত হচ্ছে তার অংশীদার কিন্তু কুকিসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জাতিসত্তার মানুষজন। কুকিদের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ও বাঙ্গালী জনগণের গভীর মিতালি আছে এমন জনশ্রুতি আছে৷ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে কুকিরা অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থেকে পিছিয়ে আছে এ কথাটি শতভাগ সত্য না হলেও অনেকাংশেই সত্য অধিকন্তুু তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সড়ক নির্মাণ, স্কুল-কলেজ স্থাপন, হাসপাতাল নির্মাণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির অংশ হিসেবে নানামুখী পদক্ষেপ সরকার হাতে নিয়েছে। এ পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক কুকি জনগোষ্ঠীকে ইস্যু করে বম পার্টির উগ্র ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন নাথান বম গংরা ‘কুকি-চিন জনগণের নাম দিয়ে চুরি, ডাকাতি, মানুষ খুন-গুম ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলেছে। ব্যাংক লুটপাট ও পুলিশ, আনসার সদস্যদের অস্ত্র লুটপাট করার মাধ্যমে দেশবিরোধী অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে। তাদের এই সন্ত্রাসবাদের বলি হচ্ছে নিরপরাধ মানুষগুলোই। আজকে বম জনগোষ্ঠীর একটি অংশ সন্ত্রাসবাদের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবেই জড়িত। এর সঙ্গে বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই প্রান্তিক কুকি জনগোষ্ঠীর। বর্তমানে প্রতিবাদের ভাষায় বম জনগোষ্ঠীর এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতাকে ঘৃণার সাথে প্রত্যাখান করেছে কুকি জনগণ। বম পার্টির নাথান বমের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ভূয়া ফেসবুক আইডি ও পেইজ থেকে যেসব সংবাদ পাচ্ছে দেশবাসী তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। যা তথ্য সন্ত্রাসের অংশ। বম সন্ত্রাসীরা কুকি জনগোষ্ঠীর কর্ণধার দাবি করে তাদের পক্ষে সহানুভূতি আদায়ে অনেক বার্তা দিচ্ছে। যদিও তা এদেশের জনগণের সহানুভূতি আদায় করার চেষ্টা বলে মনে করেন সবাই। এটি যে পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক ক্রিয়া তা কিন্তু আগে ধারণা করা গেছে। মূলত সন্ত্রাসবাদ কায়েম করার জন্যেই সরকারি বাহিনীগুলোকে বিতর্কিত করতে তারা নানামুখী মিথ্যাচারে লিপ্ত বম সংগঠন।

কুকি-চিন কারা এই বিতর্ক অবসানে নিমিত্তে আগে কুকি জনগোষ্ঠীর ইতিহাস জানা প্রয়োজন।
কুকি ও লুসাই শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে শ্রী রমাপ্রসাদ দত্তের গবেষণামূলক “লুসাই কুকিদের ইতিকথা” বইটি থেকে জানা যায়, ‘লুসাই’ শব্দটি বর্তমান সময়ে ব্যাপক অর্থ বহন করছে। ‘লুসাই’ বলতে এখন বহু পরিবারের লোকদের বুঝিয়ে থাকে। ‘লুসেই’ শব্দটির ভুল Transliteration-এর ফলেই ‘লুসাই’ শব্দ সৃষ্টি হয়েছে, ‘লুসেই’ হল বংশের নাম। এই বংশ থঙ্গুর, পড়ুআও ছংতে, ছোংতে, ছোআছেং প্রভৃতি অনেক পরিবারে বিভক্ত। প্রত্যেক পরিবারেও রয়েছে বেশ কয়েকটি করে শাখা।

আজকে যাদেরকে আমরা মিজো বলি তারাও লুসাইয়ের একটি শাখা। ত্রিপুরার জম্পুই পাহাড়ে যারা বাস করে তাদেরকে আমরা মিজো বলে থাকি।

ক্যাপ্টেন সেক্সপীয়ার তাঁর গ্রন্থে সেখানকার অধিবাসীদের বলেছিলেন লুসাই কুকি জাতীয়। সেই থেকে অ-মিজোদের নিকট মিজোরা লুসাই নামে পরিচিত। মিজোদের ভাষায় কুকি মানে শিং এবং অতীত কালে মিজো ও অন্যান্য কুকিরা শৃঙ্গ সমন্বিত টুপি পরতো কিন্তু তা কুকিরা ‘কুকি’ বলতে বুঝত মস্তক শিকারী। মিজোদের ভাষায় ‘লু’ অর্থ হচ্ছে শির, আর ‘সেই’ অর্থ বড়। কুকি ভাষাতেও ‘কুকি’র প্রতিশব্দ রয়েছে- তারা বলে ‘হায়েম’।

মিজোরা অনেকগুলি উপজাতিতে বিভক্ত। যেমন লুসাই, মার, রংরাইতে, জাংতে, রাখমে, সাইলো, জদেং, থাংলিয়া, রিবোং ‘রাংখম’ পাঁচুহীন, শিয়াক, কলনে, তাংজিরা ইত্যাদি। মিজোদের মধ্যে অনেকগুলি কথ্য ভাষা আছে। তার মধ্যে লুসাই ভাষাই সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয়, মিজোদের কোন ভাষারই নিজস্ব বর্ণমালা নেই। খ্রীষ্টান ধর্ম প্রচারকেরা লসাই’ ভাষাকে রোমান হরফে ট্রেন্সলিটারেশন বা উচ্চারণ অনুসারে অক্ষরীকরণ দ্বারা মিজো অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রচলন করেছেন। মিজো ছেলে মেয়েরা রোমান হরফে লুসাই ভাষার ইতিহাসে ভুগোল অধ্যায়ন করে, লুসাই ভাষায় ‘x’, ‘y’ ও ‘a’ এর ব্যবহার নেই।

উপরোক্ত ইতিহাসভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত ও অন্যান্য গবেষণামূলক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, লুসাই বা কুকি জাতীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বম জনগোষ্ঠীর কোনপ্রকার সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই; কুকি-লুসাই জনগোষ্ঠীর বর্ণিত অনেক শাখা-প্রশাখা আছে। সেসব শাখা-প্রশাখায় বম জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই। গোষ্ঠীগত বা বংশপরম্পরায় কুকিদের কোন শাখা না বম জনগোষ্ঠী। বর্তমানে ভারত ত্রিপুরা, মিজোরাম ও বাংলাদেশে কুকিদের অবস্থান। কিন্তু উৎপত্তিস্থল ত্রিপুরা ও মিজোরামে। ভারতসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতে এদের আদিনিবাস। এদের আদিনিবাস কোনভাবেই বাংলাদেশে না। তা কুকি পন্ডিতরা স্বীকার করে। ঐতিহাসিকদের গবেষণা অনুযায়ী, কুকিরা ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে বা তার কিছু সামান্য আগে পরে যাযাবর হিসেবে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করে।

আর এদিকে বম জাতির আবাসভূমি হচ্ছে মায়ানমারের চিন প্রদেশ। এখনো ইতিহাস ভিত্তিক বইপুস্তক ঘাটলে এটাই পাওয়া যাবে। উল্লেখ যোগ্য তথ্য হচ্ছে, উইকি। সুতরাং বম জনগোষ্ঠী সরাসরি কুকি বা লুসাই জনগোষ্ঠীর কোন শাখা-প্রশাখা নয়। অনুরূপভাবে কুকিদের মত বমরাও পার্বত্য চট্টগ্রামে যাযাবর জনগোষ্ঠী হিসেবে বসতিস্থাপন করে। বমদের পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি দাবি বা ভূমিপুত্র হিসেবে স্বায়ত্তশাসন (রাজ্য) দাবি কতটুকু ন্যায় সঙ্গত সেটা ইতিহাসের পাতা বলে দিবে। কুকিদের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে দুর্নাম আছে এ দুর্নামের কেন্দ্র বিন্দুতে কিন্তু জড়িত বম জনগোষ্ঠী৷ সবসময় কুকি জনগোষ্ঠীর নাম ও পরিচয় বহন করে অপকর্ম করেছে বম জনগোষ্ঠী। হতাশাজনক হচ্ছে, তারা অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগোষ্ঠীর সঙ্গেও বিরোধ তৈরি করেছে। যে বিরোধ শতাব্দীর পরেও বিরাজমান। যার কারণে আজকে সম্প্রীতির বান্দরবানে কালো মেঘে ছেয়ে আছে। বমদের অন্য জাতির প্রতি হিংসাত্মক আচরণ এতদিন ধরে অপ্রকাশিত থাকলেও চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য কুকিরা বিশ্বাসঘাতক বামদের সন্ত্রাসবাদ ও অশান্তির দাবানল সৃষ্টিকে দায় করে আসছে। এরপর থেকে বিষয়টি নানাভাবে প্রকাশ পেতে থাকে।

বম জনগোষ্ঠীর উৎপত্তি ও ইতিহাস সম্পর্কে যথা উপর্যুক্ত তথ্য উপাত্ত থেকে জানা যায়, মায়ানমারের চিন প্রদেশে বসবাসরত চিনভিত্তিক লাই জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগোষ্ঠীর বসবাস আছে। এসব জনগোষ্ঠীগুলো ‘লাই জনগোষ্ঠীর’ অন্তর্ভুক্ত। আর বম জনগোষ্ঠী চিনভিত্তিক লাই জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত শাখা। এ বম জনগোষ্ঠী মূলত চিন অন্তর্ভুক্ত কিন্তু কুকি অন্তর্ভুক্ত নয়। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে, লাই তথাকথিত চিন-কুকি-মিজোর প্রভাবশালী উপজাতিগুলোর মধ্যে একটি। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী/ উপজাতি পরিচয় বিচারে তারা এক কিন্তু গোষ্ঠীগত স্ব পরিচয়ে এক নয়। বম জনগোষ্ঠী যে কুকিদেরই গোষ্ঠী বা বংশপরম্পরায় উৎপত্তি এমন কোন শক্ত তথ্য প্রমাণ বমদের হাতে নেই। চিন লাই জনগোষ্ঠী কুকি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে উপজাতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয় নিয়ে নানান বিতর্ক ও মতবাদ বিদ্যমান। উপজাতি পরিচয়ে বা স্বীকৃতিতে সমগ্র পৃথিবীর সব উপজাতি সংজ্ঞা এক এটা ঠিক। তাই এ বিষয়ে জাতিসংঘের ILO Convention ঘোষণাপত্র তথা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে একমত কিন্তু গোষ্ঠীগত, বংশপরম্পরায়, বর্ণগত, ভাষাগত, সংস্কৃতি-ঐতিহ্যগত ও নানাবিধ দিক দিয়ে স্ব স্ব পরিচয়ে উপজাতিগুলো একে অন্য থেকে সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা। সবার স্ব-স্ব পরিচয় আছে। বিষয়বস্তু বুঝার সুবিধার্থে একই শব্দ ও বাক্য স্থানবেধে বিবৃত হয়েছে। সুতরাং মায়ানমারের চিন প্রদেশের লাই জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত চিন পরিচয়ের বম জনগোষ্ঠী আর কুকি জনগোষ্ঠী এক নয়। কেউ যদি কুকি শব্দের সঙ্গে চিন শব্দ যুক্ত করে ‘কুকি-চিন’ পরিচয় বহন করেই ভারতের বিশাল মিজো কুকি লুসাই জাতীয় ও বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের কুকিভুক্ত জাতিগোষ্ঠীগুলোর অধিকার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অসাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার দাবিদাওয়া পেশ করে তখন সেটা কুকিভুক্ত জনগোষ্ঠীর দাবি হয়না। তখন সেটা হয় উদ্দেশ্যমূলক প্রতারণা। অস্ত্র হাতে নিয়ে সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে নিজেদের কুকি-চিন দাবি করা যেমন হাস্যকর তেমনি কুকিভুক্ত জনগোষ্ঠীর নাম ব্যবহার করা অর্থহীন। ইতিহাস পর্যালোচনা করে আমরা যেটা পায় সেটা হল, মায়ানমারের চিন প্রদেশে চিনভিত্তিক লাইন জনগোষ্ঠী চিন নামের বম জনগোষ্ঠী কিন্তু কুকি জাতি নয়। এবং কুকি-চিনও নয়। বরং কুকি-চিন সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী দ্বারা গঠিত উপজাতি হতে পারে অথাৎ কুকি-চিন গোষ্ঠীগত বা বংশপরম্পরায় কোন একক জাতি নয়। কুকি-চিন শব্দটি একটি ভূল শব্দ তাও বলছি না শুধু বলছি কুকি-চিন শব্দটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করা হয়েছে৷ যেমন চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের স্ব-স্ব পরিচয় আছে সামগ্রিকভাবে তারা উপজাতি। কিন্তু এই বলে তারা একই গোত্র বা বংশপরম্পরায় তা কিন্তু না। কুকিদের পরিচয় হবে কুকি বা লুসাই আর বমদের পরিচয় হবে বম জনগোষ্ঠী। উল্লেখ যোগ্য তথ্য হচ্ছে, বম জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের চিনভিত্তিক লাই জনগোষ্ঠী (মিয়ানমারে চিন ও ভারতে পাওয়ি নামে পরিচিত)। এখন প্রশ্ন হল, তারা কীভাবে পাহাড়ে কুকি জাতীয়তাবাদের ধারণা করে? চিন ভিত্তিক লাই জনগোষ্ঠীর ‘চিন’ নামটি কুকি জাতির সঙ্গে পাশাপাশি জড়িয়ে তারা ‘কুকি-চিন’ জাতিভুক্ত দাবি করছে কেন? অনুসন্ধানে জানা যায়, বমদের উৎপত্তি মিয়ানমারে হলেও সেখানেই এখন সবচেয়ে কমসংখ্যক বমদের দেখা পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচিতে। মূলত সেখানে তারা জাতিগত নিপীড়নের শিকার হওয়ার ফলে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে দিকে অগ্রসর হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। একে তো যাযাবর জনগোষ্ঠী অন্যদিকে উগ্র ও সাম্প্রদায়িক পরিচায়ক হিসেবে বিভিন্ন স্থান থেকে তারা নিপীড়নের মাধ্যমে বিতাড়িত হচ্ছে। স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যান্য উপজাতি জনগোষ্ঠী কর্তৃক বিতাড়নের মাধ্যমে ভূমি হারানোর শঙ্কা করছে ‘বম জনগোষ্ঠী’। হয়তো এই ভয় থেকে বম একটি উগ্র অংশ নাথান বমের নেতৃত্বে হয়তো বা ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীর নীল নকশা বাস্তবায়নে কুকি জনগোষ্ঠীর নাম পরিচয় ধারণ করে সশস্ত্র গেরিলা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের কথিত অস্তিত্ব বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা করতে অপরাধের দিকে ধাবিত হয়েছে। সাধারণ বমদের সঙ্গে কথা বলেও তাদের ভূমি হারানোর শঙ্কার মনোভাব জানা গেছে৷ তারা পার্বত্য মাটি থেকে উচ্ছেদ হবে তাদের মধ্যে এধরণের একটি প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম একসময় তাদের স্বাধীন কুকিল্যাণ্ড ছিল এমন গল্পকাহিনী নির্ভর কথাও সাধারণ বমদের মধ্যে রেয়াজ আছে৷ কোন স্বার্থনীশি বিশেষ মহল বমদের দিয়ে এসব করাচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা। কিন্তু তাদের এ ভূমি হারানো বা বিতাড়নের আশঙ্কা একদম সত্যি নয় এটা খোদ পাহাড়ের চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরারা স্বীকার করেন। কারণ বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকার প্রতিটি উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ে আন্তরিক। পাহাড়ে প্রতিটি জাতি যেন তার অধিকার নিয়ে বেছে থাকতে পারে সরকার সে মানসেই কাজ করে আসছে।

আগের পোস্টপাহাড়ে চাঁদাবাজির এক ভয়ঙ্কর নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করেছে জেএসএস।
পরের পোস্টবাঙালিদের কোটায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে স্মারকলিপি: ছাত্র পরিষদ বান্দরবান।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন