সুপ্রদীপ চাকমা সপ্তম বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন তিনি। এছাড়া রাবাত, ব্রাসেলস, আঙ্কারা এবং কলম্বোর বাংলাদেশ মিশনে তিনি বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আওয়ামীলীগ শাসন আমলে নিযুক্ত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্তব্যরত আছেন। ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে দুই বছরের জন্য সচিব পদমর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে সুপ্রদীপ চাকমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আওয়ামীলীগ শাসন আমলের একজন আমলাকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা করার কারণে একটি আঞ্চলিক দলের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়তে হচ্ছে তাকে। এজন্য তার প্রবল বিরোধিতা করেছে তথাকথিত নারীবাদী চাকমা রানী ইয়েন ইয়েন।
গত ৮ আগস্ট সুপ্রদীপ চাকমাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করায় কিছু নির্দিষ্ট আঞ্চলিক দল বিরোধিতা করে আন্দোলনে নেমেছিল। নিয়োগের একদিন পর গত (৯ আগষ্ট) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে চাকমা রানী উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমাকে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ আখ্যায়িত করেছেন এবং সেই সাথে তাকে সরানোর দাবিতে প্লে-কার্ড, ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন। একই সাথে অবিলম্বে সুপ্রদীপকে সরিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে গ্রহণযোগ্য কাউকে উপদেষ্টা নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। একই দাবিতে রাঙামাটিতে কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুপ্রদীপ চাকমাকে আওয়ামীলীগের দালাল ও জাত বিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্যাপক প্রচারনা চালানো হয়।
আন্দোলনকারী তথাকথিত নারীবাদী রাণী ইয়েন ইয়েনের অভিযোগ, “উপজাতিদের সাথে যেহেতু উপজাতিদের প্রতিনিধি নির্বাচনের আগে কোন সংলাপ করা হয়নি, গতকাল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের গেটের বাইরে থেকে আমরা তাঁর সাথে প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে প্রতীকি সংলাপ করেছি। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ, সমতল ও পাহাড়ের উপজাতিদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা আছে, সমতল ও পাহাড়ের উপজাতিদের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন এবং উপজাতি জনগণের অধিকার সুরক্ষার লড়াইয়ে সম্পৃক্ত ছিলেন এমন ব্যক্তি কাম্য। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, উপজাতিদের জন্য এই পদের নিয়োগ, কিছুদিনের জন্য স্থগিত করুন। আলাপ করুন, সংলাপ করুন। উপজাতিদের নিজস্ব প্রতিনিধি নির্বাচনের যে স্বীকৃত অধিকার, সে অধিকার কেড়ে নিবেন না। অনুরোধ এটাই, দাবীও এটাই”।
Karuna Bijoy Talukdar বলেন, “সুপ্রদীপ চাকমা আওয়ামীলীগ শাসন আমলে সুবিধা ভোগী ব্যাক্তি। আমরা নিরপেক্ষ নেতৃত্ব চাই। যে ভূমিপুত্র পাহাড়ের কান্নার আওয়াজ না শোনে, না বোঝে তাকে কীভাবে উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয়া হয় তা পাহাড়ের মানুষ কখনো মেনে নেবে না। আমরা উপদেষ্টা হিসেবে চাকমা রানী মা কে দেখতে চাই। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপদেষ্টা হিসেবে দেয়া হোক জনসাধারণের ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদবিরোধী পুরস্কারে ভূষিত বাংলাদেশের চাকমা রানী কে”।
একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার উপদেষ্টা হিসেবে তৎকালীন নিযুক্ত হন চাকমা সার্কেল চীপ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। কিন্তু এবার তার দ্বিতীয় পত্নী রাণী ইয়েন ইয়েন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হতে মুখিয়ে ছিলেন৷ সর্বশেষ সুপ্রদীপ চাকমাকে নিযুক্ত করায় আন্দোলনে নামেন ইয়েন ইয়েন। জানা যায় নারীবাদী ইয়েন ইয়েন একজন সাম্প্রদায়িক।
তবে চাকমা রানীর এহেন জনবিস্থিন্র আন্দোলনের অপপ্রয়াশকে শুরুতেই ম্লান করে দিয়েছেন তারই স্বামী ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। তিনি নিজ ফেসবুক একাউন্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন যে ইয়েন ইয়েন এর কর্মকান্ডের সাথে চাকমা সার্কেলের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই এবং তার একটা দাবি চাকমা জনগোষ্টীর প্রতিনিধিত্বও করে না। বস্তত এর মাধ্যমে তিনি উস্থাপিত দাবিতে যে একান্তই তার স্ত্রীর ব্যাক্তিগত অভিমত তা নিশ্চিত করেন। অপর দিকে বিষয়টি নিয়ে চাকমা রাজপরিবারের মধ্যে অন্তদ্বন্দের সুত্রপাত হয়েছে বলেও অনেকে আশাংকা প্রকাশ করেছেন।
বস্তুর এরুপ জনবিছিন্ন দাবি আর কোন প্রার্থীর প্রস্তাবনা উস্থাপন না করে (কতিপয় সমর্থক গোষ্ঠী কতৃক নিজ নামে প্রচারনা) চালানোর বিষয়টি নিশ্চিতভাবে পেমান করে যে, উপদেষ্টা পরিষদে সুপ্রদীপ চাকমার উপস্থিতির বিরোধিতার করার বিষয়টি একান্তই কথিত চাকমা রানী ইয়েন ইয়েন এর ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাসেরই প্রমাণ। তবে সাধারণ পাহাড়ি কর্তৃক বিষয়টি চরমভাবে প্রত্যাক্ষিত হওয়াটা ভবিষ্যতে তার গ্রহণ যোগ্যতাকে চরমভাবে বিপন্ন করবে বলে প্রতিয়মান