পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি ব্যতিক্রম অঞ্চল। যেখানে হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রীস্টান, বাঙালি-অবাঙালির একত্রে বসবাস রয়েছে। যা অন্যান্য অঞ্চল থেকে পাহাড়কে ব্যতিক্রম হিসেবে উপস্থাপন করতে সহায়তা করে। বিস্তীর্ণ জলরাশি, উর্বর ভূমি, বনজ সম্পদে ভরপুর এবং ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এ অঞ্চলটির প্রতি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলমান রয়েছে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জাতিসত্তার লোকদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক বিপদগামী মানুষ দ্বারা গঠিত হয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সসস্ত্র সংগঠন জেএসএস। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তারা উপজাতি সমাজকে বোঝাতে চেষ্টা করে তারা তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব একটি জুম্মল্যান্ড রাষ্ট্র গঠন করবে। কিন্তু তারা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর খুন-গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সকল অপকর্মে জড়িয়ে যায়।পাহাড়ি জনগণের পক্ষে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ তারা দেখাতে পারেনি। একটি থেকে কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। জেএসএস, ইউপিডিএফ, সংস্কার, গণতান্ত্রিক, বম পার্টি ও মগ পাটি ইত্যাদি। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো তাদের অপকর্ম আড়াল করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উপর সর্বদা অপপ্রচার চালাতে থাকে।
সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং পাহাড় সমান অপপ্রচারকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার প্রশিক্ষণ, মেধা এবং পরিশ্রম দ্বারা মোকাবেলা করে প্রমাণ করেছে পাহাড়ের প্রকৃত বন্ধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
পাহাড়ি জনগণের সেবায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মানবিক কাজের সামান্য কয়েকটি উদাহরণ :
১. ১২-ই মে ২০১৯ সালে রাঙামাটির সাজেক থানায় পণবিকাশ ত্রিপুরা নামের এক কিশোর বুনো হাতির আক্রমনে ক্ষত বিক্ষত হয়। সেনাবাহিনী বিষয়টি অবগত হলে দ্রূত চিকিৎসার জন্য হেলিকাপ্টার যোগে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানোর ব্যাবস্থা করে।
২. দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল খাগড়াছড়ি জেলার আলুটিলা পুনর্বাসন এলাকায় ১৬০টি উপজাতি পরিবার দীর্ঘদিন যাবত পানির সমস্যায় ভুগছিল। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে সেনাবাহিনী কর্তৃক ১০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পানির ট্যাংক স্থাপন করে পানির ব্যবস্থা করে।
৩. খাগড়াছড়ি সদরের হাজাপাড়া নামক দূর্গম এলাকায় অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প নির্মাণ করে ১৫০-১৬০ জন মহামারি আক্রান্ত উপজাতি রোগীদের পরম যত্নের সাথে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলে সেনাবাহিনী।
৪. ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে গুইমারা রিজিয়নের পুরাতন কমান্ডার বাংলোতে একটি কম্বল ও ব্যাগ ফ্যাক্টরি উদ্বোধন করা হয়। এতে ঐ এলাকার স্থানীয় জনগণের ক্ষুদ্র কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় বেশ কিছু পাহাড়ি ব্যক্তিবর্গ শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ লাভ করায় তাদের পারিবারিক ভরণপোষণ ক্ষমতা ও স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
৫. ৪-ই ফেব্রুয়ারি ২০২১ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাটিরাঙ্গা পৌরসভায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
৬. ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা প্রদান করেছে সেনাবাহিনী।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর উন্নয়ন এবং মানবিক সহায়তার দৃশ্যমান কয়েকটি পদক্ষেপের অন্যতম হল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন, বনজ সম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও ক্রীড়া খাতে উন্নয়ন ইত্যাদি।
সেনাবাহিনী এসব মানবিক এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে তারাই পাহাড়ের প্রকৃত বন্ধু। এছাড়াও পাহাড়িদের নিরাপত্তায় সবসময় সেনাবাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।