কেএনএফের চাঁদাবাজির কাছে জিম্মি রুমা থানচির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী

0

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও অস্থিরতা কাটেনি পাহাড়ের তিন জেলা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান। হত্যা-গুম, অপহরণ আর চাঁদাবাজি হয়ে উঠেছে নিত্য দিনের ঘটনা। কয়েক বছরে নানা দলে-উপদলে হানাহানি ও সহিংসতা বেড়েছে। চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণই এসব সংঘাতের মূল কারণ বলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলোর অভিমত। পাহাড় উপত্যকার জনপদ তিন জেলাতে বিবদমান আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর বছর জুড়ে অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে পার্বত্য চুক্তির কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছেন না জেএসএসের স্বজাত প্রীতি, বৈষম্যের কারণে।
বান্দরবানের বম হলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যেই একটি উপজাতি সম্প্রদায়, যাদের মোট জনসংখ্যা ১২ হাজারের কাছাকাছি। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এই সম্প্রদায় থেকে সৃষ্ট সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হিসাব অনুযায়ী এ সংগঠনের সদস্য সংখ্যা কমবেশি আড়াইশ। ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পর যৌথবাহিনী কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। এই অভিযানের পর থেকে কেএনএফ অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। সাম্প্রতিক কেএনএফের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসছে শুরু করেছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায় থেকে। কেএনএফের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে বান্দরবানে পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায়। দেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম হিসেবে পরিচিত রুমা উপজেলার মুনলায় পাড়া হয়ে পড়ে পর্যটকশূন্য। একটি বিশাল এলাকায় জনজীবনে বিপন্নতা নেমে আসে।
পাহাড়ে নিজেদের অধিকার আদায়ের নামে, আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে সংগঠনটির অর্থের জোগান দিতে তারা গুম, খুন, অপহরণ সহ নানা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। মূলত দেশের বাইরে থাকা সংগঠনটির হাই কমান্ডের ইশারায় সংগঠনের সদস্যরা এভাবেই সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অর্থ সংগ্রহ করে দেশের বাইরে পাচার ও সংগঠনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, অবৈধ অস্ত্রের মজুদ করে থাকে।

জানা যায়, বান্দরবান জেলা সদর থেকে রুমা উপজেলার দূরত্ব ৫৪ কিলোমিটার এবং থানচির দূরত্ব ৯৩ কিলোমিটার। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের অবস্থান কিন্তু এই বান্দরবান জেলায়। তাজিংডং ও কেওক্রাডং এই জেলায় অবস্থিত। সরু সড়ক তাই সেখানে চাইলেই খুব দ্রুত যানবাহন চলাচল করতে পারে না। খাড়া পাহাড়ের কোলঘেঁষে নির্মিত সড়কগুলো তুলনামূলক সরু। ফলে এখানে জায়গাভেদে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার গতিতে যাওয়া যায়। পাহাড়ে গাড়ি চলে সময় ধরে, গতি ধরে নয়। কেএনএফ দুর্গম রুমা ও থানচিকেই তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য বেছে নেয়। একসময় রোয়াংছড়ির আলেক্ষ্যং, নোয়াপতং, তারাছা থাকলেও বর্তমানে রুমা-থানচির পাসিং পাড়া, সুংসাং তলাবং, মুয়ালপি পাড়া, তামলাওপাড়া কেএনএফের সশস্ত্র গ্রুপ ও কালেকশন গ্রুপের অবস্থান বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়৷

স্থানীয়রা বলছেন, যৌথবাহিনীর অভিযানের কারণে কেএনএফ দীর্ঘদিন সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় পালিয়ে থাকলেও সাম্প্রতি অর্থনৈতিক ও রসদ সংকটে পড়ে সশস্ত্র সংগঠনটি। রুমা উপজেলার ১নং পাইন্দু ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড চাইনাগ্রো পাড়ায় কেএনএফ এর একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী চাঁদার টাকা কালেকশনের জন্য যায়। উক্ত পাড়াবাসীরা চাঁদার টাকা দিতে রাজী না হওয়ায় পাড়াবাসীকে একত্রিত করে এবং চাঁদা কেন দিবে না সে বিষয়ে জানতে চায়। এসময় তারা আতঙ্ক ও ভয় ভীতি প্রদর্শন করে এবং চাঁদার টাকা না দিলে সকলকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে। বর্ণিত পাড়াগুলো দুর্গম হওয়ার কারণে নিয়মিত কেএনএফ চাঁদার জন্য হানা দেয়।
কেএনএফের চাঁদা থেকে কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না পাড়াবাসী। বম, খিয়াং ও খুমিদের গৃহপালিত গবাদিপশুও তারা নিয়ে যাচ্ছে। রসদ হিসেবে ঘরের চাল, ডাল ও নিত্যপণ্য জিনিসপত্র লুটপাট করে নিচ্ছে। রুমা ও থানচি উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ২০টি পাড়ায় কেএনএফ চাঁদাবাজির বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। পাড়াবাসী বলছে, ক্ষুদার্ত বাঘের মত কেএনএফ চাঁদার জন্য হানা দিচ্ছে। এর আগে কেএনএফের চাঁদাবাজি, নির্যাতন ও হামলার ভয়ে ৩১৯টি পরিবার বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি ছেড়ে পাশে ভারতের মিজুরাম ও মিয়ানমারে চলে যায়।

কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলছে, কেএনএফ রুমা ও থানচির দুর্গম পাড়া গুলোতে সাম্প্রতিক চাঁদাবাজির নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে৷ এই নেটওয়ার্ক অনেক বিস্তৃত। পাড়াবাসী তাদের অস্ত্র শক্তির কাছে অসহায়। কয়েক হাজার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। চাঁদা না দিলে বমসহ কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিস্তার নেই।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে,
সশস্ত্র কেএনএফ সন্ত্রাসীরা কালেকশন গ্রুপের মাধ্যমে চাঁদা উত্তোলন করে নিজেদের অর্থনৈতিক ও রসদ সংকট মিটিয়ে বর্তমানে চাঁদাবাজির বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে অবৈধ অস্ত্র ক্রয় করবে৷ এ অস্ত্রের ঝনঝনানি বান্দরবানকে আরো অশান্ত করবে। তাই কেএনএফের চাঁদাবাজি বন্ধে দুর্গম এলাকাগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান জরুরি হয়ে পড়ছে।

আগের পোস্টচলমান পরিস্থিতির আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরপেক্ষ বলতে আমরা কাদের বুঝবো?
পরের পোস্টঅন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে সুপ্রদীপ চাকমার নিয়োগের বিরোধিতা করেছে কারা?

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন