দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ প্রসিত বিকাশ খীসা) বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটি জনস্বার্থ পরিপন্থী কর্মকান্ডে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পাহাড়ে পাহাড়ে ইউপিডিএফের সশস্ত্র টহলের ভয়ভীতি প্রদর্শন, মিছিল মেটিং আর অপহরণ, নির্যাতন চলছে। স্বার্থসিদ্ধি করতে উস্কানিমূলক ও কুরুচিপূর্ণ গ্রাফিতি এঁকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উপজাতিদের খেপিয়ে তোলার ষড়যন্ত্রে মেতেছে। এই ষড়যন্ত্রের ধারায় তিন পার্বত্য জেলার উপজাতিদের সেনাবাহিনী বিরোধী বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। ১৯৯৬ সালে স্বজাতির অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রে নিখোঁজ কল্পনা চাকমাকে পূঁজি করে সেনা বিরোধী প্রোপ্রাগান্ডা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সয়লাব করেছে। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে পার্বত্য চট্টগ্রামে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটি।
শেখহাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে উপজাতি মানুষজনকে অপহরণ করে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করে আসছে৷ রাজনীতিতে সক্রিয় নয় এমন অনেক সাধারণ মানুষ শিকার হচ্ছে ইউপিডিএফের নির্মম নির্যাতন ও চাঁদাবাজির। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন কয়েকজন উপজাতি প্রভাবশালী নেতা জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে গেলে ৬ আগস্ট খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ইউপিডিএফ অধ্যুষিত এলাকার মানুষজনদের অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায় সশস্ত্র সংগঠনটি৷ বেশিভাগ অপহরণের ঘটনা ঘটে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার কারণে এবং জাতীয় রাজনীতি করা কারণে। জানা যায়, সর্বনিম্ন ২ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। যা মুক্তিপণ বা চাঁদাবাজির অংশ৷ যারা এ জরিমানার টাকা দিতে পারেনি তাদের মুক্তি মেলেনি। ইউপিডিএফের এই আগ্রাসী ভূমিকার শিকার হয়েছেন অনেক খেটে খাওয়া নিরীহ উপজাতি। যারা সাধ্যের বাইরে মুক্তিপণ দিতে বাধ্য হচ্ছে।
ইউপিডিএফ অধ্যুষিত এলাকার মানুষজন জানাচ্ছে, গত ৬ আগস্টের পর থেকে এলাকায় ইউপিডিএফের সশস্ত্র কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। মানুষজনদের অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে খামখেয়ালি অভিযোগে জরিমানার মাধ্যমে টাকা আদায় করেছে। এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্তত ১৩টি উপজেলার উপজাতি মানুষজন হামলা, নির্যাতন ও চাঁদাবাজির শিকার হন। হাজারের অধিক উপজাতি ইউপিডিএফের সন্ত্রাসের শিকার।
রাঙামাটি জুরাছড়ির বাসিন্দা সুবিমল চাকমা জানান, দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে পার্বত্য চট্টগ্রামের পুরাতন আঞ্চলিক দল জেএসএস সন্তু সহ অন্যান্য দলগুলো বর্তমান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যাবেক্ষণ করলেও ইউপিডিএফ নিজেদের বিএনপির সমর্থক গোষ্ঠী দাবি করে পাহাড়ে সংঘাত উস্কে দিচ্ছে। সেনা বিরোধী মনোভাব থেকে সেনা প্রত্যাহার আর অখ্যাত কল্পনা চাকমা ইস্যুকে পূঁজি করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে লিপ্ত।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউপিডিএফ নিজেদের বিএনপি সমর্থক মনে করেন। এই চেতনা থেকে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও জনস্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের কয়েক লক্ষাধিক সাধারণ মানুষ ইউপিডিএফের সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি পানছড়ির উপজেলার বাসিন্দা, অমিত চাকমা জানান, পাহাড়ের কয়েকটি এলাকা ইউপিডিএফের হামলা, অত্যাচারের শিকার মানুষদের কান্নায় বাতাস ভারী হচ্ছে। ইউপিডিএফ অধিকার নামে মানুষ হত্যার রাজনীতি করে। তাদের প্রদান টার্গেট এখন অস্ত্রবাজির মাধ্যমে চাঁদাবাজি। তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধে প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা একান্ত কাম্য।