ভয়াবহ বন্যায় স্বজাতির পাশে নেই কোন আঞ্চলিক নেতা।

0

হান্নান সরকার, মানবাধিকার কর্মী:

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার লক্ষাধিক স্বজাতি যখন বন্যার পানিতে দিশেহারা তখন পার্বত্য চট্টগ্রামের তথাকথিত আঞ্চলিক দলগুলোর নেতারা নিজেদের আখর গোছাতে ব্যস্ত৷ আঞ্চলিক দলের নেতারা জাতির অধিকারের কথা বলে সারাবছর পাহাড়ি জনগণ থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেছে। কিন্তু স্বজাতির এই দুর্দিনে পাশে নেই কোন আঞ্চলিক নেতা। বিষয়টি দুঃখজনক ও বিস্ময়কর হিসেবে অভিহিত করেছে পাহাড়ের বিশিষ্টজনেরা।

গত দু’দিন ব্যাপী সমগ্র খাগড়াছড়ি জেলা ও রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যায় প্লাবিত ছিল। এসময় দু’টি জেলার অন্তত তিন শতাধিক পাড়ার লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়। গত ২২ বছরের মধ্যে এমন বন্যা কেউ দেখেনি।

স্থানীয় পাহাড়িরা জানান, সেনাবাহিনী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা বন্যার পানিতে আটকা পড়াদের উদ্বার করেছে। সে সাথে দুর্গত এলাকার মানুষের মাঝে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। রাস্তায় ধসে পড়া মাটি সরিয়ে সড়ক যোগাযোগ সচল করার কাজ করছে সেনাবাহিনী। আমরা আঞ্চলিক দলের উপর যে আশা আর ভরসা করেছি কিন্তু তারা আমাদের হতাশ করেছেন!

জানা যায়, চেঙ্গি, মাইনি ও কাসালং নদীর পানি বিপৎসীমার দুই থেকে ছয় ফিট অতিক্রম করায় আশেপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অন্তত লক্ষাধিক মানুষ চরম বিপাকে পড়ে। নদীর তীরবর্তী বসতবাড়ি গুলো ভেসে গেছে। চেঙ্গি, মাইনি ও কাসালং নদীতে এখনো স্রোত বয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় মানুষজন বলছেন, পাহাড়িরা যখন বিশুদ্ধ পানি আর খাদ্যের অভাবে তখন দেখা গেছে আঞ্চলিক দলগুলোকে অখ্যাত কল্পনা চাকমা, তথাকথিত শাসনবিধি ও কথিত আদিবাসী শব্দসহ অহেতুক দাবিদাওয়া নিয়ে সরব থাকতে। এটি যেমন দুঃখজনক তেমনি তীব্র নিন্দনীয় বটে।

স্থানীয় সংবাদকর্মীদের তথ্য অনুযায়ী, পানি নামার পর ক্ষত চিহ্ন ফুটে উঠছে সমগ্র খাগড়াছড়ির। কারো ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, কারো কৃষি জমিতে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে, আবার কারো গৃহপালিত পশুপাখি ভেসে গেছে। এমন করুণ চিত্র খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি বাঘাইছড়ির।

লক্ষাধিক মানুষ যখন পানিবন্দী ছিল তখন আঞ্চলিক দলের নেতারা পাশে ছিলনা। আঞ্চলিক দলের নেতাদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে অনেক স্বজাতি:
দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া এলাকার কামিনী মোহন চাকমা জানান, “বন্যার পানিতে আমার ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। কয়েকটি পাড়ার হাজারের অধিক মানুষ প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় সন্ধানে। আমি নিরুপায় হয়ে অসুস্থ স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে পাড়ার একটি স্কুলে ঠাঁই মিলে। এখানে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটে পড়তে হয়। আমাদের এই বিপদে সেনাবাহিনী, সেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এগিয়ে আসলেও আমাদের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম কারী সংগঠনের নেতাদের দেখা যায়নি! তারা এই মূহুর্তে কোথায়? জাতি জানতে চায়।”

অংচিং মারমা নামে খাগড়াছড়ি পেরাছড়ার এক বাসিন্দা জানান, “সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার প্রশ্ন সারাবছর জাত গেল জাত গেল বলে মুখে ফেনা তোলা আঞ্চলিক দলগুলোর নেতারা বন্যার সময় কেন স্বজাতির পাশে দাঁড়ায়নি? তারা যদি এই ভয়াবহ বন্যার বিপর্যয়ে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ও উদ্ধার কাজে সহযোগিতার মাধ্যমে মানবিকতা না দেখায় তাহলে কখন তারা পাহাড়িদের পাশে দাঁড়াবে? নাকি তারা জাতির অধিকারের কথা বলে তারা সারাবছর স্বজাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে? আমাদের চাঁদার টাকায় তাদের ভরণপোষণ ও বিলাসবহুল জীবনযাপন! আমরা কী এই বিপদের মহূর্তে সামান্য ত্রাণ সামগ্রী পাওয়ার অধিকার রাখি না?”

পর্যটন খ্যাত জেলাটির দীঘিনালা, রামগড় ও সদর বন্যার পানিতে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়।
এসময় বন্যাদুর্গত এলাকায় নিরাপদ বিশুদ্ধ পানির অভাবে পড়েন মানুষ। অনিরাপদ পানির মাধ্যমে নানা রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। দিশেহারা স্বজাতির হাহাকার মূহুর্তে আঞ্চলিক দল — ইউপিডিএফ প্রসিত, জেএসএস সন্তু, গণতান্ত্রিক বর্মা ও সংস্কার এম.এন নেতারা ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে পাশে না দাঁড়ানোর বিষয়টি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ি জনগণের মধ্যে৷ পাহাড়িরা জানান, আঞ্চলিক দলের নেতারা মানবিক বিপর্যয়ের মূহুর্তে পাশে না দাঁড়িয়ে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আদায়ে ব্যস্ত। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তারা যেভাবে নিজেদের আখর গোছাতে ব্যস্ত ঠিক সেভাবে যদি বন্যাকালীন সময় আমাদের পাশে দাঁড়াত তাহলে আমাদের ক্ষতির পরিমাণটা কমে আসত। কিন্তু দুঃখজনক আমরা তাদের কাউকে আপদকালীন পাশে পায়নি।

আঞ্চলিক দলগুলোর গঠন ও কার্য যদি পাহাড়িদের কল্যাণে হয়ে থাকে তাহলে কেন তারা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত পাহাড়িদের পাশে দাঁড়ায়নি? সন্দেহহীনভাবে বলা যায় আঞ্চলিক দলের নেতারা শুধুমাত্র নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে পাহাড়িদের অধিকার প্রশ্নে কথা বলে।

গত দু’দিন বৃষ্টিপাত না হওয়ার ফলে খাগড়াছড়ি জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে ঠিক কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি অনেকেই। কারন তাদের কাঁচাপাকা ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। কিছু মানুষ এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে। জীবন যাত্রাও স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। পানি নেমে যাওয়ায় জমে থাকা কাদা, ময়লা, আবর্জনা সরিয়ে ঘরবাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন লম্বা সময়ের ব্যাপার। পানি নামতে শুরু করায় সর্বত্র ক্ষতের চিত্র দৃশ্যমান হচ্ছে। সবমিলিয়ে আঞ্চলিক দলের নেতাদের ভূমিকা সারাজীবন মনে রাখবে স্বজাতি।

আগের পোস্টখাগড়াছড়ির ভয়াবহ বন্যায় নিশ্চুপ রানী ইয়েন ইয়েন।
পরের পোস্টসন্তু লারমাকে দেখা যায়নি কোন ত্রাণ শিবিরে!

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন