বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গ্রুপ তথা আঞ্চলিকদল গুলোর দাবিকৃত দুই কোটি টাকা চাঁদা পরিশোধ না করায় মৌসুমের শুরুর দিন মৎস্য আহরণ উৎসবে কাপ্তাই হ্রদে জাল ফেলতে পারেনি ৬০ শতাংশ জেলে। সকাল থেকেই রাঙামাটির স্থানীয় বাজারগুলোতে কাপ্তাই হ্রদের মাছের উপস্থিতি অন্যান্য বছরের মতো লক্ষ্য করা যায়নি।
স্থানীয় একাধিক মৎস্য ব্যবসায়ী জানান, ৪মাস ৭দিন সরকারী সিদ্ধান্তে বন্ধ থাকার পর শনিবার মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন পাহাড়ি ঘোনায় জাল ফেলতে যায় কয়েক হাজার জেলে। কিন্তু পাহাড়ে সশস্ত্র তৎপরতায় লিপ্ত উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠনের চারটি গ্রুপ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোতে জেলেদের জাল ফেলতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এসময় ভারী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়াও দিয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে। তারা জানান, আমরা প্রাণভয়ে জাল না ফেলে শহরের নিকটবর্তী বাঙ্গালী জনবহুল এলাকায় চলে এসেছি।
ব্যবসায়ীদের কয়েকজন প্রতিবেদককে জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আমরা যথারীতি আঞ্চলিক দলগুলোর কাছ থেকে টোকেন কেটেছি। কিন্তু মাছ ধরার দিন তারা আমাদের কাছে চারটি গ্রুপের জন্য প্রায় দুই কোটি টাকা চাঁদা চেয়ে খবর পাঠায়। দীর্ঘদিন মাছের ব্যবসা বন্ধ থাকার সময়ে জেলেদের প্রয়োজনীয় খরছ চালাতে হয়েছে। এরপর মাছ ধরার শুরুর প্রাক্কালে অন্যান্য বছরের ন্যায় ধারাবাহিক চাঁদাও পরিশোধ করেছি। কিন্তু ব্যবসার শুরুর দিনটাতে নতুন করে প্রতি গ্রুপের ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করায় আমরা পথে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
কাপ্তাই মৎস্যজীবি সমিতির কয়েকজন নেতৃৃবৃন্দ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জেএসএস (সন্তু) সমর্থিত কিছু সদস্য কাপ্তাই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নিকট হতে অতিরিক্ত বাৎসরিক চাঁদা দাবি করে। যা অন্যান্য বছরে তুলনায় অনেক বেশি। তাদের কথামতো চাঁদা না দেয়ায় জেলেদের মাছ ধরতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। এরফলে জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত রয়েছে।
কাপ্তাই মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের উপকেন্দ্র প্রধান জসিম উদ্দিন সকাল সাড়ে ৭ টায় মুঠোফোনে স্থানীয় সাংবাদিককে বলেন, রোববার সকাল পর্যন্ত কাপ্তাই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কাপ্তাইয়ের জেলেরা কোন মাছ অবতরণ করেন নাই। কি কারনে জেলেরা মাছ ধরা হতে বিরত আছে তা জানি না।
রাঙামাটিতে নৌ-পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর জানান, আমরা এই ধরনের কোনো খবর পাইনি কেউ আমাদেরকে এসব বিষয়ে কিছু জানায়নি।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১২৭ দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ির প্রায় ২৬ হাজার জেলে পরিবার কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণে নামার কথা ছিলো। মৌসুমের প্রথমদিনে উৎসবমুখর পরিবেশে কাপ্তাই হ্রদ থেকে বিপুল পরিমাণ মাছ আহরণের মাধ্যমে পাহাড়ের অর্থনীতি নতুনভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠার কথা থাকলেও উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিপুল অংকের চাঁদা পরিশোধ করতে না পারায় প্রাণ রক্ষার জন্য হ্রদে জাল ফেলেনি নিরীহ জেলেরা।