জীবন চাকমার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকের জ্ঞাতার্থে হুবহু তুলে ধরা হলো-
একটা কথা না বললেই নয়।
সম্প্রতি জুরাছড়িতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর ঘটনার বিষয়কে কেন্দ্র করে তিলকে তাল বানানোর মতো করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সত্যি বলতে, জুরাছড়ির পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ক্ষমতার জোরে অনেক আগে থেকেই আমাদের সাথে জোর, জুলুম, চাঁদাবাজি ও নানারকম অন্যায় করে আসছে। গত কয়েক বছর ধরেই এই পুলিশরা জুরাছড়ি ঘাটে প্রতি নৌকা থেকে ১০০০ টাকা করে চাঁদা নিতো, যা এখন বাড়িয়ে ৮০০০ টাকা করেছে। আর তাই আমাদের জুরাছড়ি এলাকার সাধারন মানুষেরা অনেক আগে থেকেই এই পুলিশদের উপর অতিষ্ঠ। আসল কাহিনী হচ্ছে, গত ২৭ তারিখ জুরাছড়ি জোন কমান্ডারের নেতৃত্বে একটি আর্মি টহল যক্ষাবাজার এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখার জন্য আসে। বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে জোন কমান্ডার সাহেব বাজার এলাকা পার হয়ে যক্ষাবাজার আর্মি ক্যাম্পের দিকে চলে যান। এ সময় রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা তিনজন পাহাড়ী পুলিশ সদস্য সেনাবাহিনীকে তাচ্ছিল্য করে কথা বলতে থাকে এবং বলে যে এদের জন্য হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে, এরা নিমকহারাম। একথা শুনে সাদা পোশাকে দলের পিছনে থাকা সেনাবাহিনীর একজন গোয়েন্দা সদস্য পুলিশ সদস্যদের পরিচয় ও জোন কমান্ডারকে সালাম না দেয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করে। জবাবে তারা উদ্ধত আচরণ করে এবং জোন কমান্ডারকে চেনার টাইম নাই বলে মন্তব্য করে। এ ধরণের কথাবার্তা চলার মধ্যে একজন পুলিশ কনস্টেবল সেনাবাহিনীর ঐ সার্জেন্টকে ধাক্কা দিলে সে পড়ে যায়। তখন ০২ জন কনস্টেবল তাকে ধরে মারতে থাকে। ৩য় জন তাকে মারার জন্য লাঠি আনতে গেলে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ঘটনাটি দেখতে পেয়ে বাজারের কিছু লোকজন কাছেই যক্ষাবাজার আর্মি ক্যাম্পে খবর দেয়। তখন জোন কমান্ডার দলসহ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। কিন্তু উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে তাদের সাথেও ঐ তিনজন পুলিশ সদস্য ও কিছু পাহাড়ী লোক হাতাহাতি ও মারামারি করে। পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, বিশেষ করে স্থানীয় জনগন পুলিশের বিরুদ্ধে চরমভাবে ক্ষেপে ওঠে। ওই সময় জোন কমান্ডার তিন/ চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং ঐ তিন পুলিশ সদস্যকে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে জোন কমান্ডার পুলিশ সদস্যদেরকে নিয়ে যাবার জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ক্যাম্পে যেতে বলেন। কিন্তু ওসি সাহেব ক্যাম্পে যাবার সময় স্থানীয় জনগণ পুলিশ সদস্যদেরকে আক্রমণ করে। পরে ক্যাম্প থেকে একটি টহল দল তাদের উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এরপর উত্তেজিত লোকজন পুলিশ ফাঁড়ির সামনে গিয়ে একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় ও পুলিশ ফাঁড়িতে ভাঙচুর করে। সেখানেও সেনাবাহিনীরা গিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও আগুন নিভায়। পরে আহত পুলিশ সদস্যদেরকে আর্মিরা যক্ষাবাজার ক্যাম্পে চিকিৎসা দিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। পুলিশ সদস্যরা থানায় ফিরে আসার আগ পর্যন্ত সেনাবাহিনী তাদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র-গোলা বারুদ সহ থানাও পাহারা দেয়। আসলে পুলিশের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকান্ডের কারণে জুরাছড়ির লোকজন খুবই সংক্ষুব্ধ ছিল। এই হচ্ছে ঘটনা। সেনা ক্যাম্প না থাকলে পাহাড়ের থানাগুলিতেও হয়তো আক্রমন, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর হতো। অথচ এই ঘটনাটাকে কতজন কত ভাবে বর্ণনা করছে।
সংগৃহীত জীবন চাকমার ফেসবুক ওয়াল থেকে