প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেনাবাহিনী ছাড়া আর কাউকেই পাশে পায়নি পাহাড়িরা।

0

পাহাড়ে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা ফেনীর বন্যার পরিস্থিতির কারণেই অনেকটাই দামাচাপা ছিল। সারাদেশের মানুষ ছুটছিল ফেনীবাসীকে বাঁচাতে৷ আর এদিকে পর্দার আড়ালে রয়ে গেছে পাহাড় বেষ্টিত খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা নিমজ্জিত পাহাড়িরা। এই বন্যার ভয়াবহতা কতটা মারাত্মক ছিল তা হয়তো লেখনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই এর কিছু প্রভাব তুলে ধরার চেষ্টা করছি-
প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো একপ্রকারের প্রাকৃতিক ঘটনা, যাতে মানুষের আর্থ-সামাজিক ক্ষতি হয়ে থাকে। যদিও তা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবেই ঘটে থাকে। সাধারণ ভাষ্যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলাতে অতিভারী বৃষ্টি, ভারতের পানি ও পাহাড়ি ঢলের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি জনসাধারণের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন করেছে৷ প্রবল বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল মাইনি, কাচালং, চেঙ্গী, কাপ্তাই ও সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় অঞ্চল জুড়ে বসবাসরত জনসাধারণের ঘরবাড়ি ও মূল্যবান জিনিসপত্র অতিরিক্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একইসাথে পাহাড়ি জনসাধারণ এক ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়। পানির স্রোত নাব্যতা হারিয়ে ফেলে অতিরিক্ত পানি সমুদ্রে গিয়ে নামার আগেই নদী কিংবা নিম্নাঞ্চল উপচে আশেপাশের এলাকা প্লাবিত করে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বন্যা পাহাড়ি জনসাধারণকে ক্ষতির সম্মুখীন করেছিল। এই বন্যার পানি কোনো সাময়িক জলাবদ্ধতা নয়, বরং একটি দীর্ঘকালীন দুর্যোগ, যা কয়েক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হচ্ছে। অতিবৃষ্টির প্রভাবে বন্যায় প্লাবিত বিস্তৃত জনপদ — বন্যার কারণে খাগড়াছড়ি জেলার নয়টি উপজেলা ও রাঙামাটি এবং বান্দরবানের জেলার বেশকিছু নিম্নাঞ্চলে জনসাধারণ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বাঘাইছড়ি বঙ্গলতলির বাসিন্দা ইন্টু মনি চাকমা বলেছেন, পাহাড়িরা এই বন্যায় সবচেয়ে বেশি আর্থ-সামাজিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। আমি বন্যায় কোন সাহায্য সহযোগীতা পাইনি। আমার মত অনেক পাহাড়ি দুর্যোগ সময়ে অনাহারে ছিল। হাত পেতে লজ্জা ছাড়া কিছু পায়নি। এটি বড় কষ্টের কিন্তু পাহাড়ের যাতায়াত পরিস্থিতি নাজুক তাই সব জায়গাতে প্রশাসনের তৎপরতা চালানো সম্ভব না। হতাশার বাণী হচ্ছে, বন্যাকালীন সময়ে তা প্রতিরোধে স্থানীয় তথাকথিত পাহাড়ি অধিকার সংগঠনগুলোর কোন ভূমিকাই ছিল না। আরো দুঃখজনক হলো বন্যার পরবর্তী সময়েও এখানকার পাহাড়ি সংগঠনগুলোকে খুঁজে পাওয়া যায়নি! ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সংগঠনগুলোর মীরজাফরি ভূমিকা পালন প্রতিবার মতই এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি! পাহাড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেনাবাহিনী ছাড়া আর কাউকেই পাশে পায়না পাহাড়ি জনসাধারণ এই কথাটি চিরসত্য হিসেবে রূপ দিয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যাই।

বিপদসীমা অতিক্রম করে পানি খাগড়াছড়ির নিম্নাঞ্চল আর রাঙামাটি ও বান্দরবান ডুবে যাচ্ছে তখন পাহাড়ি জনসাধারণের মধ্যে নেমে আসে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই দুর্যোগের ভয়াবহতা এমন ছিল যে পানির স্রোত ঘরবাড়ি ও মূল্যবান জিনিসপত্র কয়েক সেকেন্ডে নিয়ে যাচ্ছে। হু হু করে বাড়তে থাকা পানি নদীর কিনারায় ঘরবাড়ি টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এই পানি বাঘাইছড়ি, দীঘিনালা অতিক্রম করে দেশের সবচেয়ে উঁচু খাগড়াছড়ি শহর ডুবিয়ে দিয়েছে! লংগদু রুমা ও থানচি পানিতে ভাসমান ছিল। পাখির চোখে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল বিস্তীর্ণ জলারাশি। মূহুর্তে হাজার হাজার পাহাড়ি মানুষ জীবন বাঁচাতে আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর দিকে আকুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল কিন্তু সংগঠনগুলো একটিবারের জন্যও ফিরে তাকায়নি বিপদগ্রস্ত পাহাড়িদের দিকে৷ হায় মানবতা। জাতির ক্রান্তিলগ্নে পাশে না থাকলে আর কখন থাকবে জাত বিক্রি করা সংগঠনগুলো? বিপদসীমা অতিক্রম করেছে পানি, ঘর বাড়িতে তলিয়ে গেছে কী হবে পাহাড়িদের? প্রাণ বাঁচাতে পাহাড়িরা যখন আর্তনাদ করছে ঠিক তখনই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় এগিয়ে আসে। যে পাহাড়িদের ইস্যু করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এতদিন আঞ্চলিক দলগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট অপপ্রচার করেছিল সেই সেনাবাহিনী এখন রক্ষকের ভূমিকা। এখন পাহাড়িদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, তাহলে কী এতদিন ধরে আঞ্চলিক দলগুলো সেনাবাহিনী সম্পর্কে মিথ্যের চাষ করেছিল?

সেনাবাহিনী এমন এক বাহিনী তারা দেশ ও জনগণের কল্যাণ ছাড়া কিছু ভাবা তাদের অভিধানে নেই আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মূহুর্তে তো পিছনে ফিরে তাকানোর সময়ও নেই। তাই পাহাড়িদের রক্ষায় প্রবল স্রোত উপেক্ষা করে জনসাধারণকে উদ্ধার করে আশ্রয় শিবিরে নিয়ে আসে। পাহাড়িদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সরবরাহ করে এবং অসুস্থদের খাবারের স্যালাইন, ঔষধ প্রদান করে। বিপর্যয় পরিস্থিতি অনূকূল আসা পর্যন্ত সার্বক্ষণিক সেনাবাহিনী পাহাড়ি জনসাধারণের পাশে ছিল। কিন্তু পাহাড়িদের এই বিপদে যাদের এগিয়ে আসার কথা অথাৎ যারা পাহাড়ি জনগণ থেকে চাঁদা নিচ্ছে অধিকার প্রশ্নে তারা কিন্তু একটিবারের জন্যেও এগিয়ে আসেনি! আজকে যদি পাহাড়িদের বিপদে সেনাবাহিনী সঠিক সময়ে এগিয়ে না আসতো স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হাজার হাজার পাহাড়ি বানের জলে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কিন্তু সেনাবাহিনী যে একটি মানবিক বাহিনী তা তারা তাদের কার্য পরিচালনার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেনাবাহিনীর এই দেশপ্রেম এবং মানবিকতা সর্বদা পাহাড়ি জনগণের জন্য থাকবে৷ এমনটা বরাবরই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানিয়ে আসছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর(আইএসপিআর)।

 

সূত্রহান্নান সরকার
আগের পোস্টসেনাবাহিনীর হাত ধরে বন্যার ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠেছে পর্বতের লোকজন।
পরের পোস্টআঞ্চলিক নেতারা কতটা স্বার্থপর বর্তমান বন্যাই তার উদাহরণ।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন