পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু উপজাতীয়দের বাস বলেছেন দেবাশীষ রায়।

0

দেবাশীষ রায় কোন সাধারণ একজন ব্যক্তি নই। তিনি পাহাড়ের একটি প্রভাবশালী জাতির দলনেতা এবং সরকারের অর্পিত গুরু দায়িত্বও পালন করছেন। যেহেতু প্রসঙ্গটি তাকে ঘিরে তাই তার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি সম্মানিত পাঠকগণের ওয়াকিবহাল অত্যাবশ্যক বলে মনে করি। পার্বত্য চট্টগ্রাম তিনটি সার্কেলে বিভক্ত। রাঙামাটি অবস্থিত সার্কেল টি হল চাকমা সার্কেল। চাকমা সার্কেল একটি বংশগত সর্দার দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে, যার ভূমিকা বিচারিক, প্রশাসনিক, আনুষ্ঠানিক ও আইনি এবং সামাজিক দায়িত্বগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। রাজনৈতিক ক্ষমতা পিতার কাছ থেকে প্রথম পুত্রের কাছে চলে যায়। চাকমা সার্কেল চীফ জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে থাকে। জেলা প্রশাসক নিযুক্ত একজন পরামর্শক বা প্রতিনিধি। যার কাজ সার্কেলের আওতাধীন মৌজা হেডম্যানদের খাজনা আদায়ের কাজ তরান্বিত করা এবং নিজ সার্কেলের উপজাতি লোকদের বিচারিক, সামাজিক, রীতিনীতি ও অন্যান্য দিকগুলো দেখা।

চাকমা ইতিহাসের সংকলন (১৮৭৬-১৯৩৪ CE) চাকমা বিজোক অনুসারে বর্তমান প্রধান প্রধান হলেন দেবাশীষ রায় (জন্ম ১০ এপ্রিল ১৯৫৯)। এই চাকমা সর্দার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উপদেষ্টা পরিষদেও বসেন। চাকমা সর্দার একটি রাজপুণ্যাহ উৎসবে নেতৃত্ব দেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা দেবাশীষ রায় বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু উপজাতিদের বসবাস। ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ২০০৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন কালে রাষ্ট্রীয়ভাবে অফিসিয়ালি লিখেছেন বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নাই। এখানে আছে কিছু উপজাতি জনগোষ্ঠী। তার এই বক্তব্য প্রকাশিত হয় ‘দৈনিক পূর্বকোণ: ১১ আগস্ট, ২০১৪’। দেবাশীষ রায় পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা প্রতিনিধিত্বকারী একজন সর্দার বা দলনেতা। সরকারি পদ গতভাবেই তিনি সার্কেল চীফ হিসেবে স্বীকৃত কিন্তু চাকমা সমাজে তাকে রাজা হিসেবে ভূষিত করেন। তার বিষয়ে উপরোক্ত আলোচনা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় তিনি যে একজন চাকমা দলনেতা। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে উপজাতি বিষয়ক বক্তব্যটি প্রমাণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জনগোষ্ঠী কোনভাবেই আদিবাসী নয় বরং উপজাতি। আজকে যে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগোষ্ঠীর কিছু অংশ নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করছে! এখন কেন আদিবাসী দাবিতে সংগ্রাম সংঘর্ষের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটি কোন ষড়যন্ত্রের আলামত? তারা তো কোনভাবেই আদিবাসী হওয়ার দাবি রাখেনা। পার্বত্য চট্টগ্রামের অতীত ইতিহাস এবং জনগোষ্ঠীর ইতিহাস নিয়ে ৫ ডজনের বেশি বই প্রকাশিত হয়। সব বইয়ে এখানকার জনগোষ্ঠীকে উপজাতি হিসেবে বর্ণনা করেছে। কোথাও আদিবাসী বর্ণনা পাওয়া যায়নি। সরকারি নথিপত্র, পাশের দেশ ভারতের নথিপত্র কিন্তু উপজাতি হিসেবে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

আমরা যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস ঘেঁটে দেখি-
পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রশাসনিক কারণে ইংরেজ শাসানমলে চট্টগ্রামের পূর্বের অরণ্য এলাকাটি পৃথক করে এর নামকরণ করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম।
১৯০০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যানুয়েলে ব্রিটিশরা এ অঞ্চলকে নন-রেগুলেটড এরিয়া বা অশাসিত-এলাকা হিসেবে উল্লেখ করে। তখন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলছে সেই ১৯০০ সালের বৃটিশ শাসিত আইন। এ অঞ্চল নিয়ে প্রণীত ১৯০০ ম্যানুয়েলের বিভিন্ন অংশে উপজাতি শব্দটি ব্যবহার হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীর সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ করতে ১৯৯৭ সালে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী প্রতিনিধিদের সাথে বাংলাদেশ সরকারের যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তাতেও তারা নিজেদের উপজাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। প্রকৃত পক্ষে পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের প্রতিনিধিগণ রাষ্ট্রীয়ভাবে সকল কার্যক্রমে নিজেদের উপজাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তারা কখনো নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দেননি।

লেখক: আতিকুর ইসলাম শুভ

আগের পোস্টকথিত আদিবাসী প্রশ্নে উপজাতিরাই দ্বিধা বিভক্ত।
পরের পোস্টআদিবাসী বিষয়ে দেবাশীষ রায়ের একমুখে দুই কথা।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন