বিলাত ফেরত ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় একজন আত্মস্বীকৃত কুখ্যাত রাজাকার ত্রিদিব রায়ের পুত্রসন্তান। পিতা ত্রিদিব রায় ছিলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের বিরোধিতাকারী যুদ্ধাপরাধী। ৭১ সালের দালাল আইনে তার নামের তালিকা ছিল। পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে সেদেশের নাগরিক বনে গিয়ে অমৃত মন্ত্রী মর্যাদা ভোগ করেন। ছিলেন আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক মিশনে। তার মৃত্যুর পর তাকে বাংলাদেশের মাটিতে শায়িত করতে দেওয়া হয়নি একজন আত্মস্বীকৃত রাজাকার হিসেবে।
ত্রিদিব রায় সম্পর্কে আরো জানা যায়, রাজা ত্রিদিব রায়-এর রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা ব্যাখ্যা করার জন্যই প্রিয়জীত দেবসরকার তাঁর বই-এর নামে তাঁকে ‘পশ্চিম পাকিস্তানের শেষ রাজা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মি: দেবসরকারের মতে, ১৯৫৩ সালে সিংহাসনে আরোহণ থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ত্রিদিব রায় নিজেকে পশ্চিম পাকিস্তানের এক জাতিগোষ্ঠীর রাজা হিসেবে দেখেছেন। রাজা ত্রিদিব রায় খুব চিন্তা-ভাবনা করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
মি: দেবসরকারের গবেষণা মতে, ত্রিদিব রায়-এর সিদ্ধান্ত ছিল আত্মস্বার্থ-কেন্দ্রিক। নিজের রাজত্ব এবং স্বায়ত্তশাসন টিকিয়ে রাখতেই ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন।
তদুপরি বিলাত ফেরত ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ও তার আত্মস্বীকৃত রাজাকার পিতার বিপরীত নয়। তার ডাবল স্ট্যান্ড বাজির খোলস ইতোমধ্যে মানুষের মধ্যে প্রকাশিত হচ্ছে। রাজা পরিবর্তন হয় কিন্তু তার নীতি পরিবর্তন হয়না এই নীতির প্রমাণ দিয়েছেন দেবাশীষ রায় বাংলাদেশে আদিবাসী কনসেপ্ট অনুমোদন না করার পরও শব্দটি স্বীকৃতি আদায়ে উপজাতি জনগোষ্ঠীকে উস্কে দিচ্ছেন।
এই দেবাশীষ রায় ১৯৭৭ সাল থেকে চাকমা সার্কেল চিফ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে উপজাতি হিসেবে উল্লেখ করেছে। ১৯৯২ সালে লোগাং গণহত্যা নিয়ে রাস্ট্রীয় বাহিনী ও বাঙালির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিথ্যাচার করতে গণহত্যার চিত্র প্রদর্শনীর জন্য ডকুমেন্টারি ক্যাসেট তিনি তৈরি করেছিলেন। সেই ডকুমেন্টারি ক্যাসেটে উপজাতি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। যদিও হংকং এসব ভিডিও ক্যাসেট পাচার করতে হবে যাওয়ার আগেই বিমানবন্দর থেকে তিনি আটক হন। উপজাতি শব্দ বিষয়ে দেবাশীষ রায়ের নীতি পরিবর্তন কেন? অথাৎ পিতা যেমন রাজপ্রথা বা রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেন ঠিক পুত্রও তার রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে উপজাতি শব্দের বিরোধিতা করতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেননি। চাকমা রাজ পরিবারের এই দেশদ্রোহীতা, বিশ্বাসঘাতকা উপজাতি জনগোষ্ঠীর প্রতি দেশের জনগণের যে সহানুভূতি, আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধাবোধ ছিল তা দিনদিন তলানিতে নিয়ে যাবে। কারণ আদিবাসী এমন একটি শব্দ যা স্বায়ত্তশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করার একটা হাতিয়ার। এই অধিকারের অন্তরালে থাকে সবসময় দেশভাগের চাবিকাঠি। জাতিসংঘের আইএলও কনভেনশনের ১৬৯ এর ১ সাধারণ পার্টের একটি অনুচ্ছেদ তাকে আদিবাসী দাবির পক্ষে ধাবিত করে এবং ২০০৭ সালের আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের ঘোষণাপত্র পাশ হওয়ার পর সে পুরোপুরি পল্টি মেরে উপজাতি শব্দ পরিহার করেই আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবিতে পত্রপত্রিকা, টিভি টকশো ও সভা-সেমিনারে মিলিত হয়েছে। এজন্য পশ্চিমা, ইউরোপীয় এনজিও সংস্থা ও কূটনীতিক মিশনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করে আদিবাসী দাবি আন্দোলনে অর্থ যোগান দিচ্ছে।
রাঙ্গামাটির সাবেক এমপি মন্ত্রী দীপংকর তালুকদার যখন পার্বত্য চুক্তির সম্পাদন করার সময় সন্তু লারমা ও দেবাশীষ রায়কে বলেছিলেন আদিবাসী হিসেবে চুক্তি সম্পাদিত করার জন্য তখন তারা বলেছিল এদেশে কিছু উপজাতি আছে কিন্তু আদিবাসী নেই। তখন তারা চুক্তিতে নিজেদের উপজাতি হিসেবে উল্লেখ করেছিল। চুক্তির খ খন্ডের জেলা পরিষদ আইনে উপজাতি হিসেবে বিবৃত হয়েছে।
আইনজ্ঞ, সাংবাদিক ও জাতিগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা বলছেন,
কয়েক বছর ধরে দেবাশীষ রায় আদিবাসী শব্দটির পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনের অপব্যাখা দিচ্ছেন। দেবাশীষ রায় একজন আইনজ্ঞ হয়ে কীভাবে আইনের ভূল ব্যাখা দেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। আদিবাসী বিষয়ে দেবাশীষ রায়ের একমুখে দুই কথা তার ব্যক্তিত্ব নষ্ট করবে। যদিও তার ব্যক্তিত্ব আছে কীনা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ তৈরি হয়েছে! প্রবাদ আছে হাকিম পরিবর্তন হয় কিন্তু তার হুকুম পরিবর্তন হয়না। কিন্তু দেবাশীষ রায় এই প্রবাদটি লঙ্ঘন করেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, আদিবাসী শব্দটি বহুল প্রচারে দেবাশীষ রায় তার সার্কেলের বাসিন্দাদের আদিবাসী নাগরিক হিসেবে নাগরিক সনদ প্রদান করে আসছে৷ তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ইতোমধ্যে কয়েক দফায় এসেছে।
জানা গেছে, দেবাশীষ রায়ের একমুখে দুই কথার কারণেই গত ১১/১০/২০২০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহানারা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে দেবাশীষ রায়কে নাগরিক সনদ প্রদানে সংবিধান অনুযায়ী শব্দ ব্যবহার করতে জানানো হয়।
১নং স্মারকের আলোকে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি তথা পার্বত্য শান্তি চুক্তির “খ” খন্ডের ১ নং ধারায় পরিষদের আইনে “উপজাতি” শব্দটি বলবৎ থাকবে মর্মে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৩ ক অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে, “রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন”। স্মারকে সংশ্লিষ্ট সকলকে সংবিধানে উল্লেখিত শব্দাবলী ব্যবহারের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।
২। বিশেষ সূত্রে জানা যায় যে, উপরোক্ত নির্দেশনার বিষয়টি ‘বোমাং সার্কেল’ ও ‘মং সার্কেল’ কর্তৃক যথাযথভাবে পালন
করলেও ‘চাকমা সার্কেল’ কর্তৃক তা নাগরিক সনদপত্র প্রদানে উপেক্ষা করে যাচ্ছেন।
৩। বর্ণিত্যবস্থায়, নাগরিক সনদ প্রদানে বা দাপ্তরিক কাজে ‘আদিবাসী’ শব্দের পরিবর্তে সংবিধানের উল্লেখিত শব্দাবলী
সংবিধানের শব্দ ব্যবহারের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হল।
কিন্তু দেবাশীষ রায় তা প্রত্যাখান করে দ্বিমুখী আচরণ করে আসছে। তার এই আচরণে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে তিনি যে, দেশের বিরুদ্ধে পিতার মত অবলম্বনকারী।
লেখক: জুনায়েদ চৌধুরী, কাপ্তাই।