পার্বত্য চুক্তি উপজাতীয়দের জন্য আদিবাসী বলতে কেউ নেই।

0

পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৩ টি ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর লোকের বসবাস রয়েছে। যাদের সবাইকে উপজাতি বলা হয়। উপজাতি শব্দটিতেই তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো। বাংলাদেশ সংবিধান এবং ৯৭ সালের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তিতে উপজাতি হিসেবে তাদের পরিচয় নির্ধারণ করা হয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারী চাকরি এবং স্কলারশিপসহ বিভিন্ন যায়গায় ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী লোকেরা উপজাতি কোটার সুবিধা পেয়ে থাকে এবং আনন্দ চিত্তে তা গ্রহণ করে।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির সাথে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে সম্পাদিত পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে অত্যন্ত সঙ্গতকারণে ‘উপজাতি’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। চুক্তির ‘ক’ ধারার ‘১’ উপধারায় উল্লেখ করা হয়েছে—‘উভয়পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করিয়া এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ এবং এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন অর্জন করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করিয়াছেন’। চুক্তির ‘খ’ ধারার ‘১’ উপধারায় বলা হয়েছে—‘পার্বত্য জেলা পরিষদের আইনে বিভিন্ন ধারায় ব্যবহূত উপজাতি শব্দটি বলবৎ থাকিবে’। এখানে আদিবাসী শব্দ একবারের জন্যও উল্লেখ করা হয়নি।
বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩ (ক) ধারায় উপজাতিদের অধিকার এবং স্বার্থ সংরক্ষনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে , “রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। ” এখানে স্পষ্ট ভাবে উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলার পরও কেউ যদি তাদেরকে আদিবাসী বলে তা হবে রাষ্ট্রের সাথে বিদ্রোহের শামিল।
২০০৫ সালের ২৫ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অনুবিভাগ কর্তৃক উপজাতি ও আদিবাসী বিতর্ক অবসানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের উপজাতি গোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে আখ্যায়িত না করে উপজাতি হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে মর্মে নির্দেশনা প্রদান করে। ২৮ জানুয়ারি ২০১০ সালে বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন উপজাতির সম্প্রদায়কে কোনো অবস্থাতেই যেন উপজাতির পরিবর্তে আদিবাসী হিসেবে উল্লেখ করা না হয়, সে বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করে।
পাহাড়ের উপজাতিরা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘাত সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তাদের গ্রুপ গুলোর মধ্যে প্রধান ৪ টি হলো জেএসএস, ইউপিডিএফ, সংস্কার এবং গনতান্ত্রিক। এই চারটি সসস্ত্র গ্রুপের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী হচ্ছে ইউপিডিএফ। যারা নিজেদেরকে এখনো আদিবাসী বলে স্বীকৃতি দেয় না। ইউপিডিএফ নিজেদের উপজাতি হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে।প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউপিডিএফ কখনো আদিবাসী দিবস পালন করেনি। গত ২৪ আগষ্ট ২০২৪ খ্রীঃ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট ইউপিডিএফ’র ৮ দফা দাবি পেশ করে, সেখানে একবারের জন্যও আদিবাসী শব্দটি উচ্চারণ করা হয়নি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে বিগত সরকার যখন ৫% কোটা রেখে সব কোটা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন আদিবাসী ব্যানারে উপজাতি কোটা বহাল রাখতে আন্দোলন করতে দেখে সবাই আশ্চর্য হয়েছিলো। আবার অনেকে উপজাতি কোটায় চাকরিরত অবস্থায় নিজেকে আদিবাসী হিসেবে দাবি করে যা আসলেই হাস্যকর।
উপজাতি নেতারা যদি শান্তিচুক্তি সত্যিই বাস্তবায়নে আগ্রহী হয় তাহলে নিজেদেরকে আদিবাসী বলা বন্ধ করে উপজাতি বলতে হবে। কারণ আদিবাসীদের সাথে সরকার কোন চুক্তি করে নি; চুক্তি করেছে উপজাতিদের সাথে।

চুক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে হঠাৎ আদিবাসী দাবির কারণ:

২০০৭ সালে রহস্যজনকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ৫টি দেশের রাষ্ট্রদূত। ২০ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত ৩ দিন ফ্রান্স, সুইডেন, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক ও জার্মানির রাষ্ট্রদূতরা পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যান। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য কোনো আলোচনা হয়নি। সফরকালে রাষ্ট্রদূতরা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি (জেএসএস) ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার সঙ্গে দু-দফা গোপন বৈঠক করেন। বৈঠককালে জনসংহতি সমিতির শীর্ষ নেতা রুপায়ন দেওয়ানসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক হারুনুর রশিদ খান ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ৫টি দেশের রাষ্ট্রদূতের পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরের কথা স্বীকার করেন।

এ সফর বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় পশ্চিমারা চাচ্ছেন পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি খ্রীষ্টান রাষ্ট্র গঠন করতে। ভূ-রাজনৈতিক ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য প্রয়োজন ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা যদি আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পায় জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী গণভোটের মাধ্যম পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড বানাতে সহজ হবে।
এ কারনেই পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বিরুদ্ধে গিয়ে উপজাতিদের একাংশ নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবি করে।

আগের পোস্টআদিবাসী বিষয়ে দেবাশীষ রায়ের একমুখে দুই কথা।
পরের পোস্টখাগড়াছড়ি নিউজিল্যান্ড থেকে বাঙালি মামুনের লাশ উদ্ধার।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন