১৪৯২ সালে ক্রিস্টোফার কলম্বাস সমুদ্র পথে ইন্ডিয়া আসার বিকল্প পথ আবিষ্কার করতে গিয়ে তার জাহাজ নিয়ে নতুন একটা দ্বীপে চলে যায়। এই দ্বীপটাকে সে ইন্ডিয়া ভেবে বসে। কিন্তু সে দেখতে পায় সেখানকার বাসিন্দাদের চামড়ার রঙ লাল ফর্সা। ইউরোপীয়দের মত সাদা না, তামাটে লাল।
কলম্বাস তাদের নাম দিল রেড ইন্ডিয়ান।
কলম্বাস এই নতুন ভূখণ্ডে আসার পর সেটি আবিষ্কৃত হয় বাকী দুনিয়ার কাছে। এই নতুন আবিষ্কৃত ভূখণ্ডটির বর্তমান নাম আমেরিকা। সেখান থেকেই শুরু হয় আমেরিকার ইতিহাস।
তো এই ইতিহাস শুরুর আগে থেকে অর্থাৎ প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে সেখানে রেড ইন্ডিয়ান নামের লাল চামড়ার যে মানুষগুলা সেখানে বসবাস করতো, তারাই আমেরিকার আদিবাসী। সেখানকার ভূমিপুত্র। তাদেরকে পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তাদের মত ভাষায় পৃথিবীর আর কোনো অঞ্চলের মানুষ কথা বলেনা। আমেরিকা আবিষ্কারের সাথে সাথে তারাও আবিষ্কৃত হয় বাকী পৃথিবীর কাছে।
এরপর ইউরোপীয়রা সেখানে গিয়ে ৪শ বছর ধরে বসতি স্থাপন করে চলেছে, তারা দেশটি শাসন করছে। সারা দুনিয়া থেকে মানুষও গেছে। কিন্তু তারা আদিবাসী হতে পারে নাই।
তাহলে আদিবাসী কারা?
আদিবাসীরা হচ্ছে অঞ্চলের ভূমিজ পূত্র।
কোনো জনপদের সৃষ্টির শুরু থেকে বসবাসকারী অথবা সেই অঞ্চলের প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে অর্থাৎ সেই জনপদের ইতিহাস লেখা শুরুর আগে থেকে সেখানে বসবাসরত জনগণকে সেখানকার আদিবাসী বলা হয়।
এটি হলো আদিবাসীর সংজ্ঞা।
যেমন আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানরা।
জাতিসংঘের ভাষায় আদিবাসীদের আরো একটি সংজ্ঞা আছে। যেখানে বলা হয়েছে কোনো জনগোষ্ঠীর খাদ্যাভ্যাস, ভাষা ও সংস্কৃতি আলাদা হল তারা নিজেদেরকে আদিবাসী বলে দাবী করতে পারবে। যা পৃথিবীর অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সম্পূর্ণ ইউনিক।
তারাও আদিবাসী। এটা আদিবাসীদের জন্য জাতিসংঘের এডাপ্টিভ সংজ্ঞা। যেটা সবাই মানেনি।
এক কথায় আমরা বলতে পারি কোনো অঞ্চলের প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, যাদের ভাষা, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস সম্পূর্ণ আলাদা তারাই হলো সেই অঞ্চলের আদিবাসী।
যেমন আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানরা। নিউজিল্যান্ডের মাওরি।
ডাচ নাবিক আবেল তাসমান যখন নিউজিল্যান্ড আবিষ্কার করে, তখন সেখানে কিছু মানুষ বসবাস করতো। যাদের ভাষা দুনিয়ার আর কেউ বুঝতো না। বাকী দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন। এরা সেখানকার আদিবাসী। যাদেরকে মাওরি বলা হয়।
আবেল তাসমান নিউ জিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া আবিষ্কার করে। সেখান থেকেই অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাস শুরু হয়। তার নামে অস্ট্রেলিয়ার একটা প্রদেশ আছে, তাসমানিয়া।
সেখানে এখনো অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীরা বসবাস করে।
আদিবাসী স্বীকৃতি পেলে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা আছে।
আদিবাসী এলাকায় তাদের একক স্বায়ত্তশাসন থাকবে। সেখানে তাদের বাইরের পুলিশ থাকবে না। সেনাবাহিনী প্রবেশ করতে পারবে না। বাইরের কেউ জমি কিনতে পারবে না। ইতিমধ্যে থাকা জমি উদ্ধার করে ফেরত দিতে হবে।
তারা যেকোনো ব্যাপারে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চাইতে পারবে এবং জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করতে পারবে।
১৭শ শতাব্দী থেকে বার্মা এবং কম্বোডিয়া থেকে পালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আসা ট্রাইবাল গোষ্ঠীগুলো নিজেদেরকে আদিবাসী দাবী করা শুরু করেছে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্টিফেক্ট গুলো কার্বন ডেটিং ৩-৪ হাজার বছরের পুরনো। অর্থাৎ ২-৩ হাজার বছর আগে থেকেই এখানে মানুষজন বসবাস করতো। সেখানে ২-৪শ বছর আগে আসা লোকজন কীভাবে নিজেদের আদিবাসী দাবী করতে পারে? তারা কি প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে বা জনপদের শুরু থেকে এখানে বসবাস করতো? তারাই এখানকার আদিবাসিন্দা?
তাদের ভাষা, সংস্কৃতি আর খাদ্যাভ্যাস কি পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না?
তাহলে ১৭শতাব্দীতে অন্য অঞ্চল থেকে এসে এখানে এসে তারা কীভাবে হঠাৎ গত বিশ বছরে নিজেদেরকে আদিবাসী দাবী করা শুরু করলো?
তারা হলো ট্রাইবাল বা উপজাতি। উপজাতি কোনো খারাপ শব্দ নয়। এখানে উপ মানে অর্ধেকও নয়। এখানে উপ মানে নৈকট্য, কাছাকাছি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গুলো একে অপরের সাথে কাছাকাছি এবং তাদের গোত্র ও গোষ্ঠীকে একত্রে বুঝাতে উপজাতি শব্দ ব্যবহার করা হয়। যাকে ইংরেজিতে ট্রাইবাল বলা হয়।
আদিবাসী শব্দটি বাংলাদেশের সংবিধান পরিপন্থী। তারপরও অনেকে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। যাতে তারা যেকোনো প্রয়োজনে বাইরের দেশের হস্তক্ষেপ নিতে পারে। আদিবাসী না হয়েও আওয়ামীলীগের সাথে হওয়া শান্তিচুক্তির কারণে তারা আদিবাসীর মত অনেক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। সমতলের বাঙালী অবাঙালী কেউ পাহাড়ে জায়গা কিনতে পারে না।
আর পাহাড় সম্পর্কে কম জানা সুশীল সমাজ তাদেরকে আদিবাসী বলছে।
এর বাইরে অন্যপক্ষটি হচ্ছে, যারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাইরের শক্তির সাথে মিলে বিচ্ছিন্ন করতে চায়।
তাদের ষড়যন্ত্র আমাদের রুখে দিতে হবে।