স্ত্রী সন্তান ও ছেলে মেয়েসহ বিনোদনের জন্য গত ১৯ সেপ্টেম্বরে সাজেকে আশি। প্রথম দুই দিন ভালোই যাচ্ছিল যেদিন ফেরার পালা শনিবার উপজাতি সম্প্রদায়ের ডাকা হরতালে ও সড়ক অবরোধে কারণে ফেরা বন্ধ হয়ে গেলো। প্রথমে ভালোই লাগছিল যে, আরো একদিন বেশি থাকতে পারবো। কিন্তু দুপুর থেকেই বুঝলাম যে, এই বারের অভিজ্ঞতা হয়তো ভালো হবে না কারণ অবরোধ ডাকার এক ঘন্টা পর বিদ্যুৎ চলে গেলো এবং সাজেক থেকে ফেরার আগে পর্যন্ত সেই বিদ্যুৎ এর দেখা মিলল না। দুপুর বেলা গরমে শিশু এবং মহিলাদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেল। বিকাল নাগাদ পানি ফুরিয়ে গেল একই সাথে পানি সরবারহ বন্ধ হয়ে গেল। বিদ্যুৎ এর আশা করতে করতে ঘুমিয়ে পরলাম এবং ভাবলাম সকালে উঠে হয়তো দেখব বিদ্যুৎ আসছে। ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি ফ্যান চলছে ভাবলাম বিদ্যুৎ আসছে কিন্তু কিছুখন পরেই দেখলাম সেটা বন্ধ হয়ে গেল পরে হোটেল ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম এতক্ষন জেনারেটর চলছিল বিদ্যুৎ গতকাল দুপুরের পর থেকে এখন পর্যন্ত আসেনি। ভাবলাম দুপর নাগাদ বিদ্যুৎ এর দেখা পাওয়া যাবে। হোটেল ম্যানেজার বললেন, পানির সরবারাহ বন্ধ, পানি হিসাব করে খরচ করতে হবে। এভাবে দুপুর ও বিকাল পাড় করার পর আশায় থাকলাম যে সন্ধা বেলায় হয়তো বিদ্যুৎ আসবে। কিন্তু সন্ধ্যা বেলায়ও বিদ্যুৎ এর দেখা পাওয়া গেল না এবং হোটেল ম্যানেজার বললেন, যে তেল ফুরিয়ে গিয়েছে এই জন্য জেনারেটরও চালানো যাচ্ছে না। এরই মধ্যে মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে গেল। পরবর্তী দিন ভোরে দেখলাম জেনারেটরও চলছে পানিও আসছে জানতে পারলাম যে, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় স্থানীয় উপজাতিদের সাথে সমন্বয় করে কিছু পানি এবং তেল সরবারহের ব্যবস্থা করা গিয়েছে। তবে এই সুখও খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। চারপাশে শুধু বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। স্থানীয় পাহাড়ীরা জানালো রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ব্রীজ উপড়ে দিয়ে সন্ত্রাসীরা রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে, এমনকি অস্ত্র-সহ তারা সেই সকল জায়গায় পাহারা দিচ্ছে এমনকি বাঙ্গালীদের দেখামাত্র গুলি করার মতো পরিস্থিতি। ভয়ে ও আতঙ্কে সবারই দিশেহারার মত অবস্থা। এরমধ্যে জানতে পারলাম যে, বিকাল নাগাদ পাহাড়ি অবরোধকারীরা হয়তো আমাদের যেতে দিবে। সাথে থাকা টাকা পয়সা শেষ হয়ে এলো, অন্যদিকে হোটেল ভাড়া এবং খাওয়ার ভাড়া জমছে। দুপুর নাগাদ প্রস্তুতি নিচ্ছি ফেরার এরই মধ্যে খবর আসলো অবরোধকারীরা বিকেলও আসতে দিবে না। সামর্থ্যবানদের অনেকেই দেখলাম হেলিকপ্টার যোগে সপরিবারে সাজেক ত্যাগ করছে, এতে করে ভয় আরো বেড়ে গেল এবং নিজেকে আরও অসহায় ভাবা শুরু করলাম। একটা কিছু হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাব। এরই মধ্যে সন্ধ্যা বেলা সেনাবাহিনীর লোকজনের কাছে আশ্বাস পেলাম যে আগামীকাল ভোরবেলা যদি সবকিছু স্বাভাবিক থাকে তাহলে হয়তো ফেরা হবে। যাহোক পরবর্তী দিন সকাল ৭ টায় সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় অবরোধাকারী কর্তৃক বিভিন্ন অচল ব্রিজ সচল এবং বাঁধা সরিয়ে আর্মি পরিবেষ্ঠীত হয়ে সকাল সাড়ে ১০ টায় নামলাম খাগড়াছড়ি। সবাই আমরা স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম। পরিশেষে ঢাকায় ফেরার মুহুর্তে একটা কথাই বার বার মনে পরছে যে ইউটিউবের ভিডিও, টেলিভিশনে এবং ফেসবুকের পোষ্ট দেখে যেভাবে আগ্রহ নিয়ে সাজেক এসেছিলাম তার থেকে দ্বিগুণ বিতৃষ্ণা এবং তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি। আমার মনে হয় এ জীবনে নিজ ইচ্ছায় আর কখনও সাজেক আসা হবে না এবং আমি মনে করি আমার সাথে যারা এই তিনদিন আটকা পরেছিল সাজেকে তাদের সবারই একই অভিজ্ঞতা মনে কাজ করছে। অন্যান্য যারা সাজেক ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন বা বিভিন্ন ধরণের ভিডিও ছবি দেখে আসার জন্য চিন্তাভাবনা বা পরিকল্পনা করছেন তাদেরকে একটা কথা বলবো আসার আগে অনিশ্চয়তার প্রস্তুতি এবং একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্য প্রস্তুত হয়ে তবেই সাজেকের পথে পা বাড়াবেন।