পার্বত্য চট্টগ্রামে টানা তিনদিন ক্লাস বর্জনের নামে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ নষ্ট করছে ইউপিডিএফ।
সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে ইউপিডিএফ পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুস্থ পরিবেশ নষ্ট করছে। এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা (ইউপিডিএফ) রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য আদায়ে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে পাহাড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি বাঙালি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষর এখন পর্যন্ত ৪ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা গেছে। এই জাতিগত সংঘর্ষে পাহাড়ি বাঙালি উভয় সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাগড়াছড়ি নিউজিল্যান্ড এলাকায় মামুন নামে বাঙালি যুবককে পাহাড়ি কর্তৃক পিটিয়ে মারার অভিযোগে দীঘিনালা কলেজে বাঙালি ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করলে ইউপিডিএফ সমর্থিত উগ্র ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাধা সৃষ্টি করে৷ এসময় দেওয়া আগুনে দীঘিনালায় পাহাড়িদের ৫০ টি দোকান আর বাঙালিদের ৬০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে দেয়। এরপর রাঙামাটি জিমনেসিয়াম মাঠ থেকে বের হওয়া মিছিল থেকে পাহাড়ি ছাত্ররা বনরূপা একটি মসজিদ ভাংচুর করে এবং শতাধিক বাঙালির উপর হামলা করে। এসময় পাহাড়ি বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
নিহত ও আহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবিতে ইউপিডিএফ গত ৩০ সেপ্টেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করে।
এই বিক্ষোভ মিছিল থেকে অদ্য ১ অক্টোবর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত টানা তিনদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে স্কুল কলেজ ক্লাস বর্জন করে। সামনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা এসময় তাদের ক্লাস করা জরুরী কিন্তু ইউপিডিএফ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ক্লাস বর্জন করতে বাধ্য করেছে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে অভিভাবকবৃন্দ। তারা বলেন, ইউপিডিএফ শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ নষ্ট করছে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা মানসিক বিকাশে উগ্র চেতনা অর্জন করবে৷ যা একসময় তাদের মধ্যে বাঙালি ও রাস্ট্র বিরোধী মনোভাব তৈরি করবে। তাই শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ইউপিডিএফের নৈরাজ্য বন্ধে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান অভিভাবকবৃন্দ।
কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, ইউপিডিএফ আমাদের ক্লাস বর্জন রাখতে হুমকি দিয়েছে। আমরা এখন নিরূপায়৷ এভাবেই চলতে থাকলে সামনে পরীক্ষায় তার প্রভাব পড়বে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে উগ্র মনোভাব তৈরি হবে।
শিক্ষার্থীরা জানান, ইউপিডিএফের ক্লাস বর্জন ডাকে সাড়া না দিলে পরবর্তীতে তাদের তালিকা করে যে কোন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করবে। তাই তারা একপ্রকার বাধ্য হয়ে ক্লাস বর্জন করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দারা বলেন, পাহাড়ে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটনাগুলোর প্রকাশ্য ইন্ধনদাতা ইউপিডিএফ৷ রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য আদায়ে তারা নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে পাহাড় অশান্ত করছে। অসাংবিধানিক দাবিদাওয়া ও ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলন পাহাড়ের পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে। এমনটা চলতে থাকলে পাহাড়ে শান্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আমরা চাই বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ইউপিডিএফ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য বন্ধ করে সুস্থ রাজনীতিতে ফিরে আসুক। পাহাড়ে হানাহানি ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ পাহাড়ি বাঙালি কারো জন্য কাম্য নয়। এই মূহুর্তে ইউপিডিএফকে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণকে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে।