খাগড়াছড়িতে শিক্ষক সোহেল হত্যা পূর্বপরিকল্পিত: হিমেল বাবু।

0
66

শিক্ষক সোহেল রানা হত্যাকান্ড পূর্বপরিকল্পিত। তবে শিক্ষকের চারিত্রিক বিষয় নিয়ে আমি কোন সাফাই গাইব না। আমরা পাহাড়ের প্রত্যেক ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীর বিচার চাই। জাতি ধর্ম তুলে কোন অপরাধীর পক্ষে সাফাই গাওয়া উচিত নয়। আসুন আসল বিষয়ে আলোকপাত করা যাক।

গতকাল সোহেল রানাকে পিটিয়ে হত্যার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিক্টিম ছাত্রীর দুটি সাক্ষাৎকার ভাইরাল হয়েছে। একটিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, অন্যটিতে না। এখানেই লুকিয়ে আছে সকল ঘটনার রহস্য।

ভিক্টিম ছাত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী তিনি সকাল সাতটায় বিদ্যালেয় এসেছেন। প্রায় আধ ঘন্টা কথিত ধর্ষক সোহেল রানার সাথে সময় কাটান। ধরে নিলাম সেই সময়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়। সকাল ৮ টায় তার ক্লাস।
ধর্ষণ করে সোহেল রানা ক্লাসে চলে গেলেন, মেয়েটা থেকে গেল রুমে। আচ্ছা ওই সময় মেয়েটা চিৎকার করেছিল? না করেনি। কেন করেনি? ধর্ষণ করে একটি রুমে মেয়েটিকে তালাবদ্ধ করে রাখা হলো। কিন্তু মেয়েটির চিৎকার না করা সন্দেহজনক?

সকালেই বিদ্যালয়ে গুজব ছড়ানো হলো ৭ম শ্রেণির ছাত্রী নিখোঁজ। গুজবের নামে তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু। শুরু হয় ক্যাম্পাসে চাকমা সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ, তারা সংঘবদ্ধ হতে থাকে।

সকালে মেয়েটা বিদ্যালয়ে এসেছে, তখনো ক্লাস ছুটি হয়নি। কিভাবে জানা গেল মেয়েটি নিখোঁজ? মেয়েটির পরিবার কি চাকমা সন্ত্রাসীদের তথ্য দিয়েছিল যে তার মেয়ে নিখোঁজ? বিদ্যালয়ের কোন মেয়ে নিখোঁজ হলে অভিভাবক বিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিহিত করবে, এরপর থানা পুলিশ। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ায় না গিয়ে সরাসরি নিখোঁজের গুজবে বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হওয়া অবশ্যই পূর্ব পরিকল্পিত।

তারপরেও ধরে নিলাম গতকাল সোহেল রানা মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণ করে নিজে বাইরে চলে গেলেন, মেয়েটিকে কেন রেখে গেলেন? তথ্য মতে, ঘটনা ঘটেছে গতকাল মঙ্গলবার। সোহেল রানা তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল হতে সোমবার খাগড়াছড়ি এসেছেন। বাড়ি থেকে এসে এরকম একজন কিশোরীকে ডেকে রাতারাতি ধর্ষণ – কিভাবে সম্ভব?
আচ্ছা শিক্ষক সোহেল রানা ওই মেয়েটির নাম্বার পেলো কোথায়? ৭ম শ্রেণীর বাচ্চা মেয়ের নিজস্ব মোবাইল ফোন, যেই নম্বরে ফোন করে সোহেল রানা তাকে আসতে বলেছিল। বাচ্চা মেয়ের নিজস্ব নম্বর কেন থাকবে?

এবার আসুন আসল রহস্যে:
শিক্ষক সোহেল রানা হত্যায় আসল মাস্টার মাইন্ড হলেন একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক উদয়ন চাকমা। গত কালকের ঘটনাকে পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছেন উদয়ন চাকমা। চূড়ান্ত রূপ দিয়েছেন কতিপয় চাকমা সন্ত্রাসীরা।

তথ্য মতে, সোহেল রানা ছিলেন বিদ্যালয়ের ভাইস প্রিন্সিপাল। একই সময়ে উদয়ন চাকমা ভাইস প্রিন্সিপাল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, যোগ্যতায় সোহেল রানা ভাইস প্রিন্সিপাল হয়। এই হতে উদয়ন চাকমার সাথে সোহেল রানার প্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্ব ছিল।

কথিত ধর্ষিতা মেয়েটিকে বিদ্যালয় ডেকে আনা, তাকে স্কুল ড্রেসের সাথে আরেকটি ড্রেস আনা, সেই ড্রেস পরিধান করিয়ে কক্ষে আটকে রাখা সবকিছু করা হয়েছে পরিকল্পিত হবে। হতে পারে শিক্ষক সোহেল রানার আচরণ বিতর্কিত। আর পার্বত্য ইস্যুতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাকমা সন্ত্রাসীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের পথে এই শিক্ষককে বেছে নিয়েছে।

ছাত্রী নিখোঁজ এবং বিদ্যালয়ে আছে – এত নিশ্চিত হয়ে কিভাবে তারা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে আক্রমণ চালালো?

বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক বিতর্কিত হলে তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের সর্বস্তরের ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ থাকে। কিন্তু, এখানে দেখা গেছে ভিন্ন রূপ। বিদ্যালয়ে বাঙালি ছাত্র-ছাত্রী ছিল। শিক্ষকের বিচারের দাবিতে সম্মিলিত আন্দোলন হলে কখনোই কোন ঘটনা সম্প্রদায়িক রূপ নিত না। কেন বিতর্কিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীদের/অভিভাবকদের রাখা হলো না?

তবে পূর্বে সোহেল রানার বিরুদ্ধে যে ধর্ষনের অভিযোগ ছিল আদালত কর্তৃক মিথ্যা প্রমাণিত হয়। সোহেল রানা চাকরিতে পুনর্বহাল হয়। তিনি যদি ধর্ষক হতেন, তবে কেন তার মামলার বিরুদ্ধে আপিল করা হলো না? পূর্বের ঘটনার জের ধরে নতুন করে ধর্ষণ নাটক সাজিয়ে তাকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হলো।

আমরা পাহাড়ে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই। সোহেল রানা ধর্ষক হলেও, তাকে এভাবে হত্যা করা রাষ্ট্রের/পৃথিবীর কোন আইন প্রশ্রয় দেয় না।
আমরা চাই অপরাধীর বিচার আইনি প্রক্রিয়ায় হোক।
এভাবে হত্যা করে পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল।

লেখক: হিমেল বাবু, লেখক ও পার্বত্য বিষয়ক গবেষক।

আগের পোস্টখাগড়াছড়িতে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান সেনাবাহিনীর।
পরের পোস্টকী হচ্ছে পাহাড়ে হঠাৎ সমতলে অবস্থানরত উপজাতিরা নিরুদ্দেশ হচ্ছে কেন?

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন