ইউপিডিএফ অধিকৃত এলাকায় জেএসএসের অনুপ্রবেশ।

0
79

পাভেল করাচিন, খাগড়াছড়ি: পার্বত্য চুক্তি পক্ষ ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস), ও পার্বত্য চুক্তি বিরুদ্ধী বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ‘ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)’ মধ্যকার ২০১৬ সালে সংঘাত পরিহারের অংশ হিসেবে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। ২০১৫ সালে একাধিক বৈঠকের পর ২০১৬ সালে যুদ্ধ বিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে সংঘাত বন্ধ হয়। উক্ত যুদ্ধ বিরতি চুক্তি প্রতিবছর নবায়ন হয়।

এই চুক্তির মৌলিক উদ্দেশ্য ছিল-
১. জেএসএস ইউপিডিএফ একে অপরের সঙ্গে গোলাগুলিতে লিপ্ত হবেনা।
২. রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ঐকবদ্ধভাবে আন্দোলন করবে।
৩.নির্বাচনে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থী চুড়ান্ত হবে, সিদ্ধান্ত মোতাবেক এক সাথে কাজ করবে।
৪. জেএসএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ইউপিডিএফ অনুপ্রবেশ করবে না এবং ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় জেএসএস অনুপ্রবেশ করবে না।

এমন শর্তেই একটি যুদ্ধ বিরতি চুক্তি সম্পাদিত হয়। উক্ত চুক্তি বাস্তবায়নের আলোকে পার্বত্য বিচ্ছিন্নতাবাদী দু’টি সন্ত্রাসী সংগঠন দীর্ঘ ৮ বছর ধরে নিজেদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে যায়নি। ব্যাপক সংঘর্ষে না গেলেও কিন্তু তাদের মধ্যে এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে পরস্পরবিরোধী অভিযোগ ছিল। সে পরস্পরবিরোধী অভিযোগ এতদিন মৌখিকভাবে থাকলেও বর্তমানে তাদের সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে প্রভাব পড়েছে।

ইউপিডিএফ অধিকৃত খাগড়াছড়ি জেলারপানছড়ি উপজেলার কিছু এলাকায় জেএসএস সন্তুর সশস্ত্র সদস্যদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। সকাল থেকে জেএসএস ইউপিডিএফ এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেন। এই নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। গত ৪ অক্টোবর পানছড়িতে ইউপিডিএফের সংগঠক নিকোলাস চাকমা কে জেএসএস (সন্তু) এর সশস্ত্র গ্রুপের কোম্পানি কমাণ্ডার কলিন্স চাকমা হুমকি দেয় বলে জানা যায়। এই সূত্র ধরে আঞ্চলিক দল দু’টি মুখামুখি অবস্থানে চলে যায়। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় চরম উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয় পাহাড়ি জনপদে। এক পর্যায়ে জেএসএস ইউপিডিএফ মুখামুখি অবস্থান থেকে সরে যায়।

এছাড়াও রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি সাজেক ও লংগদু উপজেলার মাইনীর উগুদো ছড়ি, নাড়েইছড়ি ও ধীরের হেডম্যান পাড়ায় জেএসএস সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র গ্রুপের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে৷ উক্ত এলাকাগুলোতে জেএসএস সন্তু গ্রুপ অনুপ্রবেশ করায় ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়ে তাদের অধ্যুষিত এলাকায় চলে গেছে।

এই থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পার্বত্য দুই পরাশক্তি সন্ত্রাসী গ্রুপ যে, কোন মূহুর্তে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারে৷ যদিও তাদের মধ্যে এর আগেও এমন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে পরবর্তীতে দুই গ্রুপের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শীতল হয়েছে।

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, জেএসএস সন্তু গ্রুপ এবং ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপ মধ্যকার দীর্ঘদিনের যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে ফাটল ধরার ধারপ্রান্তে। জেএসএস-ইউপিডিএফ নেতারা একে অপরের প্রতি বিষোদগার। ইউপিডিএফ প্রসিত জেএসএস সন্তুর প্রতি আর বিশ্বাস আনতে পারছে না৷ হয়তো অচিরেই তাদের এই যুদ্ধ বিরতি চুক্তি ভেঙে যাবে৷

সূত্রটি আরো জানায়, ইউপিডিএফ প্রসিত গোপনে-প্রকাশ্যে জেএসএস সংস্কার এম.এন এর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে। গত ৩০ মার্চ ২০২২ খ্রিস্টাব্দ খাগড়াছড়ি সদরে ইউপিডিএফ প্রসিত ও জেএসএস সংস্কার এম.এন মধ্যকার একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত মোতাবেক, তাদের কর্মীরা একে-অন্যের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিজ নিজ ঘর-বাড়ীতে যেতে পারবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে একটি সহজ বার্তা প্রকাশ পায় যে, ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপ ও জেএসএস সন্তু গ্রুপের মধ্যকার সম্পর্কে ভাটা পড়েছে।

আগের পোস্টপাহাড়ে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দ্রুত তুলে নেওয়া হবে: পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
পরের পোস্টশিক্ষক সোহেল রানা হত্যা নিয়ে জ্যোতিছরা ভান্তের মিথ্যাচার।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন