জিহান মোবারক, হিল নিউজ বিডি: বাংলাদেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস নেই। এখানকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলো দেশের সংবিধান ২৩ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ সরকার বারবার বিষয়টি স্পষ্ট করেছে৷ তারপরও কুচক্রী মহল উপজাতি জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে সোচ্চার। তারা জাতিসংঘে ভুল বার্তা দিয়ে এখানকার জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে উপস্থাপন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, বাঙালি ও সেনাবাহিনী সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য জাতিসংঘে পাঠানো হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ গত ১৪ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ অন্তর্বর্তী সরকারকে বিবৃতি দিয়েছে।
বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলেছে, “আদিবাসী ইস্যুতে জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামের বিবৃতি এবং আদিবাসীদের অধিকারের বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদক।
আদিবাসী ইস্যুতে জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরাম এবং আদিবাসী ইস্যুতে বিশেষ প্রতিবেদক বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের (সিএইচটি) আদিবাসীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার প্রতিবেদনে তাদের গভীর অভিমান প্রকাশ করেছে।
পারমানেন্ট ফোরাম তার অধিবেশন চলাকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জনগণ এবং বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে শুনেছে, যা সেপ্টেম্বর 2024-এর উদ্বেগজনক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সহিংসতা আদিবাসীদের বৃহত্তর বৈষম্য এবং প্রান্তিককরণের পটভূমিতে তৈরি করা হয়েছে। জুম্ম জনগণ, যারা কয়েক দশক ধরে জোরপূর্বক উচ্ছেদ এবং এই অঞ্চলের সামরিকীকরণের শিকার হয়েছে।
স্থায়ী ফোরাম এবং বিশেষ প্রতিবেদক অন্তর্বর্তী সরকারকে সহিংস ও নির্বিচার আক্রমণ থেকে জুম্ম জনগণকে রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য, সহিংসতার অভিযোগের তদন্তের একটি নিরপেক্ষ কমিশন পরিচালনা এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে অপরাধীদের বিচার করার আহ্বান জানিয়েছে।
ব্যবসায় ও মানবাধিকারের নির্দেশক নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, আদিবাসী ইস্যু এবং বিশেষ র্যাপোর্টুরের স্থায়ী ফোরাম সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে তাদের প্ল্যাটফর্মগুলিকে আদিবাসী জুম্ম জনগণের বিষয়ে ঘৃণাত্মক বক্তৃতা এবং ভুল তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত রাখতে সমস্ত প্রাসঙ্গিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়৷
ফোরাম এবং বিশেষ প্রতিবেদক অন্তর্বর্তী সরকারকে 1997 সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের আদিবাসীদের অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণার বিশেষ করে অনুচ্ছেদ 7-এর মধ্যে থাকা বিধানগুলি বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়। যে “আদিবাসীদের স্বতন্ত্র জনগণ হিসাবে স্বাধীনতা, শান্তি ও নিরাপত্তায় বসবাসের সম্মিলিত অধিকার রয়েছে এবং তারা গণহত্যা বা অন্য কোনো সহিংসতার শিকার হবে না।”
অধিকন্তু, ফোরাম এবং বিশেষ প্রতিবেদক অন্তর্বর্তী সরকারকে এই অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত ও প্রতিবেদনের জন্য জাতিসংঘকে আমন্ত্রণ জানাতে এবং অন্তর্বর্তী সরকার, আদিবাসী জনগণের প্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে পরিস্থিতি নির্বিঘ্নে পর্যবেক্ষণ করার আহ্বান জানায়। প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডাররা, আদিবাসীদের প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার এবং তাদের সম্মিলিত ও ব্যক্তিগত অধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে।
স্থায়ী ফোরাম এবং বিশেষ প্রতিবেদক তাদের সহায়তা প্রদান করে, তাদের নিজ নিজ দায়িত্বের শর্তাবলীর মধ্যে, সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা ও পুনর্মিলন গড়ে তোলার জন্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে আরও সহিংসতা প্রতিরোধে স্বাধীন পরামর্শ প্রদানে।
আদিবাসী ইস্যুতে জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামের চেয়ারপারসন হিন্দো ওমারু ইব্রাহিম
জনাব জোসে ফ্রান্সিসকো ক্যালি জাই আদিবাসীদের অধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টার।”
উপরোক্ত বিবৃতি বা চিঠির তথ্য উপাত্ত কতটুকু সত্য তা বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই বলা যায় যে, বাংলাদেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদে জড়িত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এদেশের ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিক মহলকে ম্যানেজ করে ভূল বার্তা পাঠিয়েছে৷ সে বার্তার আলোকে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সেনাবাহিনী নিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট শাখা।
জাতিসংঘের বিবৃতিতে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার এবং এখানকার প্রকৃত ঘটনার বাহিরে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য উপাত্ত সংবলিত চিঠি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দিবে। একই সাথে এ অঞ্চলের স্থায়ী শান্তি বিনষ্ট হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশ নিয়ে চরম মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য জাতিসংঘে যারাই প্রেরণ করে নিঃসন্দেহে তারাই দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক। তারা ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থসিদ্ধি হাসিল করার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য রটিয়েছি। এই তথ্য যে বিভ্রান্ত ও অসত্য তা কিন্তু ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে।
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভূল তথ্য প্রেরণ এবং তার ভিত্তিতে জাতিসংঘের এমন বিবৃতি বাংলাদেশের জনগণ বিব্রতবোধ করে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।