বিনামূল্যে গরু না দেওয়ায় যুবককে ধরে নিয়ে বেদম প্রহার করেন ওসি। ঘটনাটি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায়। এএসআই জামান মিয়া ও রাশেদুল নামে দুই পুলিশ ঘটনার দিন রাতে জালাল উদ্দীনকে আলীকদম উপজেলার নয়াপাড়া এলাকা থেকে ধরে থানায় নিয়ে যান। নির্যাতনের পরেরদিন সকালে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে থানা থেকে ছাড়া পান নির্যাতিত যুবক। এমন বর্ণনা দিয়ে আইজিপি ও পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেছেন নির্যাতিত যুবক জালাল উদ্দিন।
প্রাপ্ত অভিযোগে প্রকাশ, আলীকদম উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়নের মোক্তার সর্দার পাড়ার বাসিন্দা মোঃ ইউনুছের ছেলে জালাল উদ্দিন গত ১৯ মার্চ আনুমানিক রাত আটটার দিকে স্থানীয় আজিজের দোকানে বসা ছিলেন। এ সময় সেখানে হাজির হন আলীকদম থানার এএসআই জামান মিয়া ও রাশেদুল ইসলাম। তারা জালাল উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তোমাকে থানায় যেতে হবে, ওসি স্যার ডেকেছেন।’ কেন জিজ্ঞেস করা হলে তাকে বলা হয়, ‘তোমার সাথে ওসি স্যার কথা বলবেন।’
জালাল অভিযোগ করেন, তাকে ওসির কক্ষে নেওয়ার পর ওসি খন্দকার তবিদুর রহমান জানতে চান, ‘তোমাকে জামান মিয়া একটি গরু দিতে বলছিল, দাওনি কেন?’ জালাল প্রতিউত্তরে বলেন, ‘আমি গরু ব্যবসা করি না, কোথা থেকে দিবো’। এরপর ওসি রেগে গিয়ে নির্দেশ দেন, ‘এরে মেঝেতে শুইয়ে দাও।’ নির্দেশ মতো এএসআই জামান জালালকে ওসির কক্ষের মেঝেতে শুইয়ে দেন। এরপর ওসি স্বয়ং জালালের পায়ের ওপর পা দিয়ে চেপে ধরে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে পেটাতে থাকেন।
আলীকদম থানার ফ্লোরে নির্যাতনের শিকার জালাল উদ্দিন যেভাবে পড়ে ছিল। ছবি-পাহাড়বার্তা
জালালের দাবী, থেমে থেমে তাকে প্রায় ২ ঘন্টা মারধর করা হয়। পরে ওসি তার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা দাবী করেন। অন্যথায় মাদক মামলা দেয়ার হুমকী দেন। এ সময় ওসির টেবিলে ৪ প্যাকেট ইয়াবা ট্যাবলেট রাখা ছিলো। দাবীকৃত টাকা না দিলে এসব ইয়াবা দিয়ে চালান করার হুমকী দেওয়া হয়।
অভিযোগে প্রকাশ, রাতে জালালের পিতা মোঃ ইউনুচ খবর পেয়ে থানায় গেলে ৫ লাখ দাবী করা হয়। পরে ২ লাখ টাকায় ওসি রাজিন হন। পরেরদিন সকালে জালালের পিতা থানায় গিয়ে স্থানীয় কফিল চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় নগদ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে মারধরে গুরুতর জালালকে থানা থেকে নিয়ে আসেন।
এ ঘটনার বিষয়ে নয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন বলেন, ‘টাকা দিয়ে জালালকে থানা থেকে নিয়ে আসা হয়। পরে শুনেছি তাকে বেদড়ক মারধর করা হয়েছিল।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আলীকদম থানার এএসআই জামান মিয়া বলেন, এবিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে চান না।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার তবিদুর রহমান বলেন, একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে আনা হয়েছে। সমাধান হলে পরে চেয়ারম্যান হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। মারধর ও টাকা নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা।
চেয়ারম্যান টাকা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, কেন চেয়ারম্যান এ ধরণের কথা বলছেন জানি না, জালাল উদ্দিন মাদকের সাথে জড়িত।
প্রসঙ্গে, মোহাম্মদ জোহার নামে এক মোটর সাইকেল চালককে থানায় ধরে নিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫শ’ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ওসির বিরুদ্ধে গত ১৬ অক্টোবর ‘আলীকদমের জনসাধারণ’ ও ‘আলীকদম সচেতন ছাত্র জনতা’ নামে পৃথক দু’টি ব্যানারে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনের পরদিন ১৭ অক্টোবর পুলিশ হেডকোয়াটার্স এর পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট-২ শাখা’র প্রজ্ঞাপন (স্মারক নং- ১০১৫ তারিখ: ১৭/১০/২০২৪) এ বলা হয়, ‘জনস্বার্থে’ এ বদলী করা হয়। ওসি খন্দকার তবিদুর রহমানকে বান্দরবান জেলা থেকে স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসিব) ঢাকায় বদলী করা হয়।