বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে এদেশের অতন্দ্র প্রহরী হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দেহের শেষ রক্ত ফোঁটা অবশিষ্ট থাকতেও তারা দেশের জন্য লড়ে যেতে প্রস্তুত। জন্মভূমির প্রতিটি ধূলিকণা যেন তারা মায়ার আদরে গায়ে মাখেন। হাড়ভাঙা ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলেন দেশরক্ষার লড়াকু সৈনিক হিসেবে। নামেমাত্র বেতনে চাকরি করে এদেশের মানুষের জন্য জীবনটাও উৎসর্গ করতে তারা দ্বিধাবোধ করেন না। দেশের জন্য যারা নিজের জীবনটাও বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত দেশের সেই সূর্য সন্তানদের নিয়েও আজ পার্বত্য চট্টগ্রামে চলছে গভীর ষড়যন্ত্র!
পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে বিভিন্ন দেশ থেকে বিতারিত হয়ে আসা অভিবাসী উপজাতি (বিশেষ করে চাকমা জনগোষ্ঠী) আজ আমার দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আঙুল তুলছে। পাহাড় থেকে সেনা হটাতে তারা উঠেপড়ে লেগেছে। অবশ্য এর পেছনে রয়েছে মাথা হেট হওয়ার মতো ষড়যন্ত্র! যে বাহিনী দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও প্রস্তুত সেই বাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রামের অভিবাসী তথা উপজাতি জনগোষ্ঠী কেনইবা উচ্ছেদ করার দাবি জানাচ্ছে? এর পেছনে কারণ কী? আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলে যত উপজাতি জনগোষ্ঠী রয়েছে তারা ভারত, তিব্বত, চীন, মায়ানমার ও অন্যান্য দেশ থেকে শরনার্থী হিসেবে বাংলায় আশ্রয় নিয়েছিলো। তারা তাদের আদি জন্মভূমিতেও অরাজকতা, বিচার বহির্ভূত হত্যা, একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের জন্য বিতাড়িত হয়ে এই বাংলায় আশ্রয় নিয়েছিল। বাংলায় আশ্রয়ের পর থেকে তারা এদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিচয়েই বসবাস করে আসছিল।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার এমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই যা তাদেরকে প্রদান করেনি। সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগের পরেও তারা নিজেদের অনগ্রসর তথা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী দাবি করে শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কোটার সুবিধা ভোগ করে আসছে। বর্তমানে প্রথম শ্রেণীর চাকরি থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি সেক্টরে তাদের উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। মেধা না থাকা সত্ত্বেও কোটার সিঁড়ি বেয়ে তারা সর্বক্ষেত্রে স্বাক্ষরতার অনন্য উচ্চতায় বিচরণ করছে!
বাংলাদেশের সামগ্রিক শিক্ষার হার ৭৪ পার্সেন্ট হলেও তিন পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধুমাত্র উপজাতিদের শিক্ষার হার ৭৫ পার্সেন্ট! অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠীর শিক্ষার হার মাত্র ২৩ পার্সেন্ট!
১৯৯৭ এর শান্তি চুক্তি নামক কালো চুক্তির মাধ্যমেও তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠীর স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ডসহ সকল সেক্টরে গুটিকয়েক বাঙালি সদস্য রেখে তারা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। এরপরেও প্রতিনিয়ত গিরগিটির মত নিজেদের পরিচয় বদলাতেও তারা ব্যস্ত! বাংলায় আশ্রয়ের পর থেকেই তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি হিসেবে বসবাস করে আসছিলো। বাংলাদেশ সৃষ্টির ২৬ বছর পর ১৯৯৭ এর শান্তি চুক্তি নামক কালো চুক্তিতেও নিজেদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিচয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। এই গিরগিটি জাতি কালো চুক্তির ১১ বছর পর এসে রং বদলিয়ে ২০০৮ সাল থেকে আবার নতুন করে নিজেদের আদিবাসী দাবি করে আসছে। আর এই আদিবাসী দাবির মূল উদ্দেশ্য হলো পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে জুম্মোল্যান্ড নামক আলাদা রাষ্ট্র গঠন করা!
নিজেদের আদিবাসী দাবি করে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রকৃত আদিবাসী বাঙ্গালিদের উচ্ছেদ, সায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, সেনাবাহিনীদের উচ্ছেদ ইত্যাদির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম কে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করে নতুন রাস্ট্র গঠন করা। এক্ষেত্রে তাদের প্রধান বাধা হল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তারা জানে দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী এই অঞ্চলে থাকলে তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হওয়া আকাশের চাঁদ হাতে নেওয়ার মতোই অসম্ভব। তাই তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীকে উচ্ছেদ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলে এককভাবে কেউ কখনও স্থায়ী নন। রাস্ট্রের গুরুদায়িত্ব পালন শেষে তারা বিভিন্ন স্থানে বদলি হন। আবার পর্বতে আসেন নতুন সেনাবাহিনী। তারাও ফিরে যান নির্দিষ্ট সময় শেষে। আবারও আসেন নতুন সেনা অফিসার বা সদস্য। সুতরাং এ অঞ্চলে সেনাবাহিনী যে শাসন করেন না বরং নিরাপত্তা রক্ষায় রাস্ট্রের গুরুদায়িত্ব পালন করতেই পার্বত্য অঞ্চলে আসেন তা যেকেউ বুঝার ক্ষমতা রাখে।
যেই সেনাবাহিনী এদেশের প্রতিটি মানুষের আবেগের স্থল, যেই সেনাবাহিনী দেশ ও জনতার পাহারাদার, যেই সেনাবাহিনী সমতলের প্রতিটি মানুষের আস্থার প্রতীক, যেই সেনাবাহিনী সম্পর্কে পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো বাঙালি কখনো নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেনি, যেই সেনাবাহিনী পাহাড়ে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য সমান হারে কাজ করে যাচ্ছেন সেই সেনাবাহিনী সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে তাদের উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের পর্বত ও সমতলের জনগণ কখনও বাস্তবায়ন হতে দিবে না।
ষড়যন্ত্রকারীদের স্পষ্ট জানা উচিত শুধুমাত্র সেনাবাহিনীই নয় পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত একজন দেশপ্রেমী বাঙালির শরীরে শেষ রক্ত ফোঁটা অবশিষ্ট থাকতেও এই অঞ্চল ছেড়ে তারা কোথাও যাবে না। পাশাপাশি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও দেশ রক্ষায় তাদের দায়িত্ব থেকে চুল পরিমাণ পিছপা হবে না। উচ্ছেদ যদি হতেই হয় তবে পার্বত্য অঞ্চলে অভিবাসী উপজাতিরাই উচ্ছেদ হবে কোন বাঙালি বা সেনাবাহিনী নয়।
লেখক: সত্যান্বেসী
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক লেখক।