খাগড়াছড়িতে প্রথমবারের মতো মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা শিখন কেন্দ্র। মারমা ও ত্রিপুরা ভাষার চর্চা বৃদ্ধি এবং ভাষা সংরক্ষণের লক্ষ্যে এমন উদ্যোগ নিয়েছে গুইমারা উপজেলা প্রশাসন। এতে নিজস্ব বর্ণমালায় লিখতে ও পড়তে পারছে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা। নতুনভাবে নিজস্ব মাতৃভাষায় জানতে ও শিখতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা।
খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে সিন্দুকছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠ কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে নিজস্ব মাতৃভাষায় বর্ণমালায় লিখতে ও পড়তে শেখা। মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। এর মাধ্যমে নিজস্ব বর্ণমালায় স্বরবর্ণ ,ব্যাঞ্জনবর্ণ, সাত দিনে নাম ও সংখ্যায় সর্ম্পকে জানতে পারছে মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীল শিক্ষার্থী সম্প্রীতি ত্রিপুরা, প্রিয়শি ত্রিপুরা জানান, আগে তারা নিজস্ব মাতৃভাষার কিছুই জানতেন না। নিজস্ব মাতৃভাষা না জানলে মাতৃভাষা এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আগে ত্রিপুরা ভাষায় বর্ণ, শব্দ, বাক্য, সংখ্যা আগে জানতাম না। এখানে এসে শিখতে পেরেছি। সপ্তাহের নাম জানতাম না, এখন তাও জানতে পারছি।
বিদ্যালয়ের পড়ুয়া মারমা শিক্ষার্থীরা জানান, তারা এখন মারমা ভাষায় স্বরবর্ণ, ব্যাঞ্জন বর্ণ, চিহ্ন শিখতে পারছি। আগে এসব জানতেন না তারা। নিজের ভাষা নিয়ে জানতে পেরে খুব ভালো লাগছে তাদের।
ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছে সংশ্লিষ্টরা। প্রাথমিকভাবে ৩০ মারমা ও ৩০ ত্রিপুরা শিক্ষার্থীকে ৬ মাসের কোর্সের পাঠদান চলছে। মাতৃভাষায় প্রশিক্ষিত শিক্ষকের মাধ্যমে পাঠদান চলছে। এমন উদ্যোগ আরো সম্প্রসারিত করার দাবি শিক্ষকদের।
ভাষা প্রশিক্ষক সাইপ্রু মারমা বলেন, ‘মাধ্যমিক পর্যায়ে নিজস্ব মাতৃভাষায় পাঠদানের উদ্যোগ খুবই দরকারি। এখানে যারা শিখতে আসছে তাদেরও আগ্রহ বেশি। ইতোমধ্যে তারা অনেক কিছুই আয়ত্ত করেছে। মারমা ও ককবরক ভাষায় শেখানো হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলায় এটি ছড়িয়ে দিতে হবে।’
আরেক শিক্ষক বিকাশ ত্রিপুরা জানান, নিজস্ব ভাষায় বর্ণ,শব্দ,বাক্য,সংখ্যা শেখানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের রেসপন্স খুবই ভালো। তারা খুব দ্রুত ভাষাজ্ঞান রপ্ত করছে। তবে এমন উদ্যোগ পুরো জেলাব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। ৬ মাস ব্যাপী এই কোর্স চলবে।
মাতৃভাষায় শিখন প্রশিক্ষণ টেকসই করতে নানামুখী উদ্যোগের পাশাপাশি আরো দুইটি কেন্দ্র চালু করবে বলে জানিয়েছেন গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিলুপ্তপ্রায় ভাষা রক্ষায় আমরা হাফছড়ি ও গুইমারাতে আরো দুটি কেন্দ্র চালু করব। এছাড়া জেলা পরিষদের কাছে অনুরোধ করব চাকরি বিধিমালায় মাতৃভাষার উপর দক্ষতাকে আলাদা যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনায় নেয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ আরো বাড়বে।’
প্রসঙ্গত ২০১৭ সালে প্রাক-প্রাথমিকে মাতৃভাষায় বই বিতরণ শুরু করে সরকার। তবে প্রশিক্ষিত শিক্ষের সংকট, শ্রেণি কক্ষের অভাবসহ নানা কারণে সেই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি।