হান্নান সরকার, হিল নিউজ বিডি: পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি বা জেএসএস সন্তু গ্রুপ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চেতনা বিরোধী একটি পাহাড়ের সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। জেএসএস বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অংশ গ্রহণ করেনি, এই আন্দোলনের সঙ্গে কোনভাবেই সংশ্লিষ্ট ছিল না। ২০২৪ জুলাই আন্দোলনের ৫ আগস্টের পর দেশে যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে তারা তার তীব্র বিরোধী ছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে মনোভাব পোষণ করে আছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ও বাঙালিরা মনে করেন, জেএসএস পাহাড়ে শান্তি-সম্প্রীতি বিনষ্টকারী একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী দল। তারা দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীর ইন্ধনে বা ব্যক্তি স্বার্থ ও স্বার্থন্বেষী মহলের ইশারায় পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে। যদিও তারা বলে আসছে চুক্তি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করার জন্য তাদের এই আন্দোলন। কিন্তু তাদের আন্দোলনের ধরন, সশস্ত্র সংগ্রাম ও কর্মকাণ্ড থেকে প্রতীয়মান তারা বিচ্ছিন্নতাবাদে জড়িত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে সরকার জেএসএসের দাবিদাওয়া পূরণ করার পরও তাদের বর্তমান সশস্ত্র সংগ্রাম ও বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা নিঃসন্দেহে গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস। এই প্রেক্ষাপট থেকে তাদের আন্দোলন ও যাবতীয় কর্মকাণ্ড রাস্ট্রীয়ভাবে ত্বরান্বিত করার দাবি রাখে।
দীর্ঘদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা অভিমত, জেএসএস অস্ত্রবাজির মাধ্যমে পাহাড়ে চাঁদাবাজি টিকিয়ে রাখতে সাধারণ মানুষদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যবহার করে আসছে। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মানুষদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় ও রসদ সংগ্রহ এবং আশ্রয়-প্রশ্রয় গ্রহণ করার মাধ্যমে পাহাড়ে সাংগঠনিক টিকিয়ে রেখেছে।
চুক্তির দুই যুগের বেশি সময় ধরে জেএসএস পাহাড়ি ও বাঙালিদের উপর স্টিমরোলার চালিয়েছে আসছেন। জেএসএসের হাতে হতাহত হয়েছে অগণিত পাহাড়ি-বাঙালি। বর্তমানে পাহাড়ে সাধারণ পাহাড়িরা জেএসএসের অস্ত্রের কাছে জিম্মি। এই দ্বারা অব্যাহত থাকলে দিনদিন অশান্তি বাড়তে থাকবে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, চুক্তির পূর্বের মতোই এখনো পাহাড়ে আঞ্চলিক দল কর্তৃক নিহত, আহত ও অপহরণের ঘটনা ঘটে চলেছে। যা নিয়ে মানবাধিকার কর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জেএসএস জড়িত।
খাগড়াছড়ি পানছড়ি লোগাং এলাকার বাসিন্দা কুসুম প্রিয় চাকমা জানান,
“পাহাড়ে এসব অপরাধের ঘটনার অন্তরালে রয়েছে জেএসএসের বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ড–চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজি প্রশ্নে আধিপত্য বিস্তার। পাহাড়িরা জেএসএসের আন্দোলনে সম্পৃক্ত নই। এসব ঘটনার সাথে সাধারণ মানুষের নূন্যতম দায়বদ্ধতা নেই৷ জেএসএস নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি হাসিল করতে সাধারণ পাহাড়িদের ভিকটিম করে।”
জেএসএসের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চেতনা বিরোধী এবং বর্তমানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরোধীতা ছিল উগ্র চেতনাবাদ ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে এযাবৎ জেএসএসের ভাবনা কখনো রাস্ট্রের অনুকূলে ছিল না। একটি বিচ্ছিন্নতাবাদ মনোভাবাপন্ন সংগঠন কখনো রাস্ট্রের জন্য কখনো ইতিবাচক হতে পারে না। জেএসএস এমন একটি সংগঠন যারা পার্বত্য চুক্তির আগে পরে পাহাড়ের প্রায় ৩৮ হাজার নিরস্ত্র পাহাড়ি-বাঙালিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। সংগঠনটি ১৯৯৭ সালে সকল অপরাধ থেকে দায়মুক্তি লাভ করে! এতে ক্ষুদ্ধ হয় পাহাড়ের লাখ লাখ পাহাড়ি বাঙালি। পাহাড়ের গণহত্যার মূলহোতা সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন এই জেএসএস। এই সংগঠনটি চুক্তির পরও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে বের হতে পারেনি। এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্রবাজির মাধ্যমে পাহাড়ি-বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে দিনদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে সংগঠনটির বিরুদ্ধে মানুষের অবস্থান বাড়ছে।