আমির হোসেন, হিল নিউজ বিডি: স্থানীয় সূত্রের তথ্য মতে জানা যায়, কাউখালী উপজেলার ৪ নং কলমপতি ইউনিয়নের ৩ নং বড়ঢুলু গ্রামের বাসিন্দা সাবেক সেনাসদস্য রুইচাউ মারমা (৭০) নামে এক পাহাড়িকে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফ প্রসিত মূলদল কর্তৃক অপহরণের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে অপহৃত সাবেক সেনাসদস্য রুইচাউ মারমা দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে বড়ঢুলু গ্রাম বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছিলেন। এলাকাবাসীর ধারণা সাবেক এই সেনাসদস্য দীর্ঘদিন থেকে ইউপিডিএফের কার্যক্রমের বিরোধিতা করে আসছেন। এমনটা বিভিন্ন সূত্রের তথ্য থেকেও জানা গেছে৷ যার কারণে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ইউপিডিএফ রুইচাউ মারমাকে নজরদারির মধ্যে রাখেন। এর আগেও ইউপিডিএফ তাকে সর্তক করেন।
একটি সূত্র জানিয়েছে, রুইচাউ মারমার সঙ্গে স্থানীয় পাড়া কার্বারীর জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার অংচিং মারমার সঙ্গে বিরোধ রয়েছে৷ তবে বিষয়টি গোপন সূত্র থেকে প্রাপ্ত।
সূত্র বলছে গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে সকালে তাকে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ অপহরণ করে।
অপহরণের সঙ্গে জড়িত রয়েছে, বড়ডুলু পাড়ার বাসিন্দা চিংনিয়ুই মারমার পুত্র ইউপিডিএফ বরইছড়ি সাব-পোস্টের কালেক্টর রিমনসু ওরফে টুইক্কা মারমা (মোবা: ০১৫৭২৮৫৫২০২) এবং একই ইউনিয়নের মাইগ্যামাছড়া ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইউপিডিএফ সংগঠক চাইসিউ ওরফে অভি মারমার নেতৃত্বে ১২/১৪ জনের একটি সশস্ত্র দল তার বাড়ির সামনে থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, সাইসিউ মারমা ওরফে অভি মারমা গত ২০২২ সালের ১ জুলাই বিকালে সেনাবাহিনীর হাতে চাঁদাবাজির অভিযোগে নিজবাড়ি থেকে আটক হন। জামিনে বের হওয়ার পর থেকে তার চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। তাকে প্রায় সময় এলাকায় সশস্ত্র টহল দিতে দেখা যায়। তার বিরুদ্ধে কাউখালী থানায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে৷ এই ইউপিডিএফ সংগঠক ফটিকছড়ি ইউনিয়নের ডাবুয়া এলাকার কালেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব রয়েছে বলে জানা গেছে। তার চাঁদাবাজির টাকা দিয়ে তার স্ত্রীর আলিশান জীবন যাপন করছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তুমুল সমালোচনাও হচ্ছে।
সূত্র বলছে, রুইচাউ মারমাকে অপহরণ করে প্রথমে বরইছড়ি শীলছড়ি পরে ফটিকছড়ি ইউনিয়নের ডাবুয়ার দিকে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। ধারণা করা হয় চট্টগ্রাম রাউজান ও কাউখালী ফটিকছড়ি সংলগ্ন বিন্দাবন/বর্মাছড়ি ইউপিডিএফ ঘাঁটিতে নিয়ে গেছে।
অপহরণের পর থেকে ভয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়। পরিবার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রদান করেছে৷ গতকাল রাত পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, রুইচাউ মারমা সুস্থ আছেন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরে স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাকে এখনো ছেড়ে দেওয়া হয়নি। কিন্তু একটি সূত্র বলছে, ইউপিডিএফ মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিতে পারে। হয়তো পরিবারের সঙ্গে ইউপিডিএফের যোগাযোগ হচ্ছে এই নিয়ে।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে ইউপিডিএফ চাঁদাবাজির অংশ হিসেবে অপহরণ বাণিজ্যে বৃদ্ধি করেছে। ৫ আগস্টের পর (গত ২ মাস) পাহাড়ে ইউপিডিএফ অপহরণ পূর্বক পাহাড়ি জনগোষ্ঠী থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করেছে।