হান্নান সরকার, হিল নিউজ বিডি: সাম্প্রদায়িক সংঘাতের সৃষ্টিকারী ইউপিডিএফের দিকে আঙ্গুল সবার। পাহাড়ি নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ইউপিডিএফ দিকে আঙ্গুল তুলেছে। জানা গেছে, দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে ইউপিডিএফ পাহাড়ে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পাহাড়ি জনসাধারণকে রাস্ট্রের মুখামুখি দাঁড় করাতে গত ৫ আগস্টের পর থেকে অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে৷ অনুমতি ছাড়া সভা-সমাবেশ করে সড়কে প্রতিবান্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমেই নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। প্রশাসনের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণই বলে দিয়েছিল ইউপিডিএফ রাস্ট্রের আইনকানুন তোয়াক্কা করছে না। তারা তথাকথিত আন্দোলনের নামে যা করছিল তা ছিল সম্পূর্ণ বে-আইনি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের বিরোধী ইউপিডিএফ এখন দেশের ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে ব্যবহার করার জন্য তৎপর। পর্যাবেক্ষক মহল বলছেন, ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও সংবিধান সম্মত দাবির বাহিরে ঘিরে প্রথমে অসাংবিধানিক দাবিদাওয়া নিয়ে জনসাধারণকে নিয়ে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে কিন্তু প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও সর্বমহল সতর্ক অবস্থায় থাকায় এই ষড়যন্ত্র বেশি দূর এগুতে পারেনি। কিন্তু গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি নিউজিল্যান্ড এলাকায় মামুন নামে এক বাঙালি যুবকের পাহাড়ি নারী-পুরুষরা পিটিয়ে হত্যা করে। এই ধরনের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে ন্যায় বিচারের স্বার্থে বাঙালিরা লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও পরবর্তীতে ১৯ সেপ্টেম্বর বিকালে জেলার দীঘিনালা উপজেলায় ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভ চলাকালীন, বিচ্ছিন্নতাবাদী ইউপিডিএফ প্রসিত মূলদল সহযোগী অঙ্গসংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম মিছিলে অতর্কিতভাবে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্রসহ নিয়ে হামলা করে৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দিঘীনালা ডিগ্রি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত মিছিলটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে লারমা স্কোয়ারে যেতে চাইলে ইউপিডিএফ হামলা চালায়। এসময় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিও করা হয়। তখন লারমা স্কোয়ার সংলগ্ন দোকানপাটে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
বিশেজ্ঞ মহল থেকে বলছেন, পার্বত্য বাঙালিরা নিরস্ত্র, তাদের কোন সশস্ত্র সংগঠন নেই৷ পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন রয়েছে একমাত্র পাহাড়িদের। তাছাড়া মিছিলে হামলাকারীদের স্থানীয় জনসাধারণ ইউপিডিএফ হিসেবে চিহ্নিত করেন। হামলার পর ইউপিডিএফ নেতাকর্মীরা দীঘিনালা বাঙালিদের ৫৫ টি দোকানে আগুন দেয়। এই আগুন ছড়িয়ে পড়ে বাজারের শতাধিক আগুনে৷ শেষ পর্যন্ত এই আগুন পাহাড়িদের ৫০টির বেশি দোকান আগুনে ছাই করে দেয়৷ পাহাড়ি বাঙালি দাঙ্গা ও অগ্নিসংযোগ মোকাবেলায় ঘটনার স্থলে আসতে চাইলে সেনাবাহিনীকে পথে পথে বাধা প্রদান করে ইউপিডিএফ। এসব বাধা ও উগ্র বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রণ সোশ্যাল মিডিয়া গুলো থেকে দীঘিনালায় বাঙালি ও সেনাবাহিনী কর্তৃক পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যা হচ্ছে বলে এইধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া হয়। উত্তাপের শুরু এখান থেকে। তারপর থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্তব্য বাকি দুই জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ি-বাঙালি মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়। তার চেয়ে বেশি মাত্রায় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে প্রচুর গুজব ছড়িয়েছে, যা পরিস্থিতিকে অবনতির দিকে টেনে নিয়েছে। ফেসবুকে গুজব, অপতথ্য ও ভুল ছবি ছড়ানোর পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সহিংসতাও বাড়তে থাকে।
উস্কানী ও গুজবের কারণে ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি জিমনেসিয়াম মাঠ প্রাঙ্গণে কয়েক হাজার পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রী ও জনতা মিলিত হন। পাহাড়ি ছাত্র সংগঠন পিসিপি’র নেতৃত্বে কয়েক হাজার পাহাড়ি জিমনেসিয়াম মাঠ থেকে মিছিল নিয়ে বনরূপার দিকে এগিয়ে যায়। মিছিল থেকে উত্তেজিত পাহাড়িরা বনরূপা কেন্দ্রীয় মসজিদকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে মসজিদের একটি গ্লাস ভেঙে যায়। মূলত সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্য ছিল মসজিদে আক্রমণ করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উত্তেজিত করে পাহাড়ি বাঙালি দাঙ্গা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য আদায় করা। বাঙালিরা প্রকৃত বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এই ঘৃন্য ঘটনার কোন জবাব দেয়নি। তারপরও থেমে থাকেনি উগ্র পাহাড়িরা। উস্কানিমূলক স্লোগান মিছিল থেকে বাঙালিদের বেশ কিছু দোকানপাটে হামলা চালানো হয়েছে। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বাঙালিদের বাড়িঘরে।
এই ঘটনার জন্য স্থানীয় পাহাড়ি বাঙালিরা ইউপিডিএফ এর দিকে সরাসরি আঙ্গুল তুলছেন। বলছেন, ঘটনার কয়েকদিন আগে থেকে ইউপিডিএফ পাহাড়ে এধরণের একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে উদ্বুদ্ধ ছিল। যার প্রতিফলন খাগড়াছড়ি দীঘিনালা ও রাঙামাটির সহিংসতা।
সচেতন সমাজ বলছেন, ইউপিডিএফ যেহেতু পাহাড়ি বাঙালি সংঘাতের মূলহোতা হিসেবে অভিযুক্ত সেহেতু নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনা হতে পারে একটি সঠিক বিচারের দৃষ্টান্ত৷ যার ফলে ভবিষ্যতে অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলো জাতিগত সংঘাত উস্কে দিতেই সাহস পাবে না ফলশ্রুতিতে পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে সহাবস্থান, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় থাকবে।