রুহুল আমিন তুহিন, হিল নিউজ বিডি: বহু জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠন ঘোষণা করা হয়েছে।
অদ্য বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় পরিষদ শাখা-১ এর সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলিমা বেগম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করে পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠনের নামের তালিকা প্রকাশ করে।
প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার অধিবাসীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে পছন্দের মনোনীত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছে একই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে এই নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব কয়টি উপজেলা থেকে সদস্য মনোনীত না করার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপজেলা গুলোর বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা থেকে কোন সদস্য মনোনীত না করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবি বাসিন্দারা।
মানবজমিন খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি দীঘিনালার বাসিন্দা সাংবাদিক আব্দুর রউফ পোস্ট করে লিখেন, “অবশেষে বৈষম্য দিয়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন হলো!
খাগড়াছড়ি সদর থেকেই ৬ জন সদস্য, মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে ৪, মানিকছড়ি ২, পানছড়ি ১, লক্ষ্মীছড়ি ১, মহালছড়ি ১।
ত্রিপুরা থেকে ৫ জন সদস্য, চাকমা ৩ জন, মারমা ৩ জন এবং বাঙ্গালী থেকে মাত্র ৪ জন।
এ কেমন হাস্যকর পরিষদ গঠন হলো!”
খাগড়াছড়ি বিভিন্ন উপজেলার বঞ্চিত বাসিন্দারা পোস্ট করে তীব্র সমালোচনাসহ অভিযোগ বলেন, খাগড়াছড়ি সদর এলাকা থেকে ৬ জন ও মাটিরাঙা থেকে ৪ মনোনীত করলেও দীঘিনালা, রামগড় ও গুইমারা থেকেও কোনো সদস্য মনোনীত করা হয়নি। এটি বৈষম্যমূলক আচরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন স্থানীয়রা।
একই অভিযোগ উঠে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রেও। এই জেলার জুরাছড়ি, বরকল, কাউখালী ও রাজস্থলী উপজেলা থেকে কোন সদস্য মনোনীত না করার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছে স্থানীয় পাহাড়ি বাঙালিরা। Asain Tv রাঙামাটি প্রতিনিধি, সাংবাদিক আলমগীর মানিক লিখেন, “স্বৈরাচারের দোসরদের কবল থেকে রাঙামাটিবাসীকে রক্ষায় বারংবার ব্যর্থ হচ্ছে অন্তবর্তীকালীন সরকার
ফ্যাক্টঃ রাঙামাটি জেলা পরিষদ”
বান্দরবান লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে কাউকে মনোনীত না করায় প্রতিবাদ জানিয়েছে পাহাড়ি ও বাঙালি সম্প্রদায়। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আবুল হাসেম লিখেন, “নব গঠিত বান্দরবান জেলা পরিষদে লামা উপজেলা থেকে সদস্য অন্তরর্ভুক্ত না করায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”
লামার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম জানান, বান্দরবান জেলা পরিষদ গঠনে লামা উপজেলা থেকে কাউকে প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে লামার ছেলে হিসেবে লামা বাসীর পক্ষ থেকে আপত্তি এবং ক্ষোভ প্রকাশ করছি। কমিটি যথাযথ হয়নি। দায়িত্বশীলদের নীতি ও নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ,বৃহত্তর একটি উপজেলাকে বাদ দেওয়া মেনে নেওয়া যায় না। ২০২২ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী বান্দরবান জেলার ৭টি উপজেলার জনসংখ্যা-
বান্দরবান সদর উপজেলা- ১১১০৯৬ জন
রুমা উপজেলা ৩২৫৩৩ জন আচ্ছা ভ
থানছি উপজেলা ২৯৭৯০ জন
রোয়াংছড়ি ২৭৭১৯ জন
আলীকদম ৬৩৭৯৯ জন
নাইক্ষ্যংছড়ি ৭৬৪৭৫ জন
লামা উপজেলা ১৩৯৬৮১ জন।
এছাড়াও পরিষদ পুনর্গঠনে বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতা করার অভিযোগ তুলে স্থানীয় বাঙালি সম্প্রদায়। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংখ্যায় (৫০.০৬%) বাঙালি। অর্ধেকের বেশি বাঙালি জনগোষ্ঠী হলেও ৪৫ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ১০ সদস্য বাঙালি করা হয়েছে। বাকী ৩৫ জন্য সদস্য উপজাতি সম্প্রদায় থেকে করা হয়েছে! স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠী বলছে সারাদেশে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন হয়েছে। যার প্রতিফলন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন। দুঃখজনক হল পরিষদ গঠনে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে বাঙালিদের সাথে।
আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর ছাত্র সংগঠন পিসিপি ও কিছু পাহাড়িরাও পরিষদ পুনর্গঠন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে পোস্ট করেছে। জেলা পরিষদের অন্তবর্তীকালীনপরিষদ গঠন নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।
পরিষদে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলো এবং আঞ্চলিক দলগুলোর প্রাধান্য কতটুকু তা এখনো স্পষ্ট না হলেও হয়তো সহসাই প্রকাশিত হবে।
পার্বত্য তিন জেলা পরিষদে মনোনীত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নামের তালিকা:
স্মারক নম্বর-২৯,০০,০০০০,০০০,২১৪,১৮,০০২২,২৪-১২০ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ নিম্নরূপভাবে পুনর্গঠন করা হয়। ১৫ সদস্য বিশিষ্ট পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হন, জিরুনা ত্রিপুরা।
সদস্যরা হলেন:
১. জিরুনা ত্রিপুরা, পিতা- খজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা
২. বঙ্গমিত্র চাকমা, পিতা- বীর কুমার চাকমা
৩. অনিময় চাকমা, পিতা- প্রবীন্দ চাকমা
৪. নিটোল মনি চাকমা, পিতা- রমনী মোহন চাকমা
৫. জনাব কংজপু মারমা, পিতা- শন্ত চৌধুরী
৬. কুমার সুইচিংপ্রু সাইন, পিতা- মি: রাজীব রায়
৭. সাথোয়াই প্রু চৌধুরী, পিতা- কেকাই চৌধুরী
৮. ধনেশ্বর ত্রিপুরা, পিতা- মনো বিকাশ ত্রিপুরা
৯. শেফালিকা ত্রিপুরা, পিতা- গোপাল কৃষ্ণ ত্রিপুরা
১০. প্রশান্ত কুমার ত্রিপুরা, পিতা:তিলক কুমার ত্রিপুরা
১১. মো: শহিদুল ইসলাম (সুমন), পিতা- মৃত আব্দুল জলিল
১২. প্রফেসর আবদুল লতিফ, পিতা- মো: শহিদুল্লাহ মোল্লা
১৩. মো: মাহবুবুল আলম, পিতা- মো: কুদ্দুস গাজী
১৪. জয়া ত্রিপুরা, পিতা- রাজী সিংহ ত্রিপুরা
১৫. এ্যাডভোকেট মনজিলা সুলতানা, পিতা- আব্দুল মতিন
স্মারক নম্বর-২৯,০০,০০০০,০০০,২১৪,১৮,০০২২,২৪-১১৯ মূলে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ নিম্নরূপভাবে পুনর্গঠন করা হয়। ১৫ সদস্য বিশিষ্ট পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হন,
১ কাজল তালুকদার পিতা- জ্যোতি প্রকাশ তালুকদার।
সদস্য যারা হলেন:
২. দেব প্রসাদ দেওয়ান পিতা- যোগেশ চন্দ্র দেওয়ান
৩. প্রনতি রঞ্জন ধীসা পিতা-মৃত ননী পুতুল খীসা
৪. প্রতুল চন্দ্র দেওয়ান পিতা- প্রফুল্ল কুমার দেওয়ান
৫. বরুন বিকাশ দেওয়ান
পিতা- রনজিত কুমার দেওয়ান
৬. কাওসিংমং
পিতা- চাইখোয়াই হলা
৭. নাইণ্ড প্রু মারমা, স্বামী- বাচ্চু মং
৮. ড্যানিয়েল লাল মুয়ান সাং পাংখোয়া
পিতা- সুমসুমা পাংখোয়া
৯. জনাব রাঙানী তঞ্চঙ্গ্যা
স্বামী- লাল ছোয়াক লিয়ান পাংখোয়া
১০. জনাব সাগরিকা রোয়াজা পিতা- সুরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা
১১. জনাব সয়াল দাশ পিতা- দেবেন্দ্র লাল দাশ
১২. জনাব মোঃ হাবীব আজম পিতা- মোঃ চান মিঞণ
১৩ জনাব মিনহাজ মুরশীদ
পিতা- মৃত সামসু আলম
১৪ জনাব বৈশালী চাকমা শিতা- সমর বিজয় চাকমা
১৫ জনাব লুৎফুন্নেসা বেগম পিতা- আবুল খায়ের
স্মারক নম্বর-২৯,০০,০০০০,০০০,২১৪,১৮,০০২২,২৪-১২১ মূলে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ নিম্নরূপভাবে পুনর্গঠন করা হয়। ১৫ সদস্য বিশিষ্ট পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হন,
১. অধ্যাপক থানজামা লুসাই পিতা- তাইয়া লুসাই
২. জনাব রাজুময় তঞ্চঙ্গ্যা পিতা- গোলাপ কুমার তঞ্চঙ্গ্যা
৩. জনাব ম্যা ম্যানু পিতা- চাইং থোয়াইং প্রু
৪. এ্যাডভোকেট উবাথোয়াই মার্মা পিতা- হলা চিং থেয়াই মার্মা
৫.জনাব উম চিং মারমা পিতা- মংবা মারমা
৬.জনাব খামলাই মো পিতা- মৃত ডিংতে ম্রো
৭. জনাব মং এ চিং চাক পিতা- মং মং চাক
৮. ডা. সানাই প্রু ত্রিপুরা পিতা- মৃত বিশ্ব চন্দ্র ত্রিপুরা
৯. লাল জারলম বম পিতা- দিরচেও বম
১০. জনাব নাংফ্রা খুমী পিতা- লিংসে খুমী
১১. জনাব সাইফুল ইসলাম পিতা- ছাবের আহম্মদ
১২. জনাব মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন পিতা- মো: কামাল উদ্দিন
১৩. মুহাম্মাদ আবুল কালাম পিতা- আলী আহমদ
১৪.এ্যাডভোকেট মাধবী আমা পিতা- লাখাই মামা
১৫.জনাব খুরশিদা ইসহাক
পিতা: নুরুল হক
প্রজ্ঞাপনের কপি সমূহ