পার্বত্য চট্টগ্রামে লাখো যুবকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করেছে উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো।

0

পার্বত্য চট্টগ্রাম, বাংলাদেশে অবস্থিত একটি বিশেষ ও বৈচিত্র্যময় অঞ্চল, যা প্রাকৃতিক সম্পদ, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। তবে, এই অঞ্চলের অন্যতম একটি বড় সমস্যা হল উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সহিংস কর্মকাণ্ড, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠী, বিশেষত যুব সমাজের জীবন ও ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার কারণে পার্বত্য অঞ্চলের যুব সমাজ শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, এবং উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে তাদের ভবিষ্যৎ এক অন্ধকারাচ্ছন্ন পথে পরিচালিত হচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা এবং সমস্যা
পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত তিনটি পার্বত্য জেলা – বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, ও খাগড়াছড়ি নিয়ে গঠিত। এ অঞ্চলে প্রধানত বাঙালী, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, এবং ম্রোসহ মোট ১৩টি জাতিগোষ্ঠীর লোক বসবাস করে। পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যা মূলত জাতিগত সংঘাত ও জাতিসত্তার সংরক্ষণের জন্য পরিচালিত আন্দোলনগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে গত কয়েক দশকে উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো এই সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করেছে এবং বর্তমানে তারা সন্ত্রাস ও সহিংস কার্যক্রমের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে।

সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড ও প্রভাব
উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে বিপর্যস্ত করছে। তাদের সহিংস কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে অপহরণ, চাঁদাবাজি, হত্যা, এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রম। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। যুব সমাজ এ অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অংশ, কারণ সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো এদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে টেনে নিচ্ছে, এবং যারা এই সকল কাজে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করছে, তারা হুমকির মুখে পড়ছে।
অতিরিক্তভাবে, এসব সন্ত্রাসী সংগঠন স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করছে এবং নিজেস্ব নীতি ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। তারা অঞ্চলভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শক্তি প্রদর্শন করছে, যা শুধু সাধারণ জনগণকেই নয়, বরং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকেও ব্যাহত করছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প প্রায়ই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

যুবসমাজের অবস্থা: ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
পার্বত্য চট্টগ্রামের যুবসমাজের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তাদের জীবনযাত্রা এবং ভবিষ্যতের অস্পষ্টতা। শিক্ষা, চাকরি, এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগগুলো এই অঞ্চলে অত্যন্ত সীমিত। অন্যদিকে, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সহিংসতার ফলে তারা বাহিরে গিয়ে কাজের সুযোগও গ্রহণ করতে পারছে না। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে এলাকার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা শিক্ষার গুণগত মানকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বিশেষ করে, যারা উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে বড় হয়েছে তাদের কাছে নিজেদের ভবিষ্যৎ খুবই অনিশ্চিত বলে মনে হয়। নিরাপত্তার অভাবে অনেকেই উন্নত শিক্ষার জন্য অন্যত্র চলে যাচ্ছে এবং ফিরে আসার অনুপ্রেরণাও হারিয়ে ফেলছে। এছাড়া, কর্মসংস্থানের জন্য যারা নিজ এলাকায় অবস্থান করতে চায়, তাদেরও উপযুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে না।

সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো থেকে যুবকদের সরিয়ে আনার প্রয়োজন:
পার্বত্য অঞ্চলের যুবকদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে হলে তাদেরকে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন কর্মসূচি, যা তাদের জীবনের উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনী এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

১. শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন: পার্বত্য চট্টগ্রামের যুবসমাজকে শিক্ষায় উন্নতি করতে হলে উন্নত মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা জরুরি। মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা সঠিক দিকনির্দেশনা পায় এবং উন্নত জীবন গঠনের স্বপ্ন দেখতে পারে।

২. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি: কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব যুবকদের অন্য পথে পরিচালিত করে। তাই বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কর্মসংস্থান প্রকল্প গড়ে তুলতে হবে। সেইসাথে, স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসা ও উদ্যোগকে সহায়তা করে যুবকদের জীবিকায়ন ও স্বনির্ভরতা গড়ে তুলতে হবে।

৩. নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা: পার্বত্য অঞ্চলের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে তারা পার্বত্য এলাকায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং যুবকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।
এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন স্থানে নতুন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চৌকি নির্মাণ করতে হবে।

৪. সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি: এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী সচেতনতা কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার, যাতে সাধারণ জনগণ সন্ত্রাসের কুফল সম্পর্কে অবগত হয় এবং তাদের যুব সমাজকে এই ধরনের কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে পারে। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলোও এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সরকার ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা
সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, এবং সমাজের অন্যান্য অংশীদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের যুবসমাজকে সন্ত্রাসের প্রভাব থেকে মুক্ত করা যায়। এর মাধ্যমে তারা একটি শান্তিপূর্ণ ও উন্নত জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি জটিল হলেও, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর প্রভাব কমিয়ে যুবসমাজকে শিক্ষায়, কর্মসংস্থানে, এবং সামাজিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত করে তাদের ভবিষ্যৎকে সুসংহত করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে একটি সামগ্রিক এবং সমন্বিত উদ্যোগই পারে পার্বত্য চট্টগ্রামের যুবকদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে। পিতা-মাতার সচেতনতা এবং সচেতন মহলের বিভিন্ন দিক নির্দেশনায় যুবসমাজ অন্ধকার জীবন থেকে আলোকিত জীবনে আসতে অনেক সহায়ক হবে।

লেখক: অপূর্ব সাচিং, বান্দরবান, ১৩/১১/২০২৪

আগের পোস্টদীঘিনালা সেনা জোনের উদ্যোগে মানবিক সহায়তা প্রদান।
পরের পোস্টবান্দরবান সেনা অভিযানে কেএনএফ আস্তানা থেকে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন