পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বা স্বাধীনে নয়াদিল্লির হস্তক্ষেপ কামনা কথিত জেএসএস নেতার!

0

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ভারতীয় সংবাদ সংবাদমাধ্যমে উস্কানিমূলক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশের শান্তি-সম্প্রীতি বিনষ্ট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদকে উস্কে দিতে এমন উস্কানিমূলক সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে বলে দাবি করছেন বিভিন্ন পেশাজীবি মহল।

অনন্ত অসীম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ প্রতিনিধি হিল নিউজ বিডি: পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বা স্বাধীন রাস্ট্র গঠনে নয়াদিল্লির হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন, এক অজ্ঞাত কথিত জেএসএস নেতা। নাম পরিচয় বিহীন ব্যক্তির একটি কল রেকর্ডকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে ভারতীয় Calcutta Television Network এর (Calcutta News) নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৪ নভেম্বর হাইভোল্টেজ ভারত শিরোনামে ২৬ মিনিট ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সংবাদ প্রকাশিত করেছে।

প্রকাশিত সংবাদের তথ্য-উপাত্ত, রেফারেন্স ও বিশ্লেষণকে উদ্দেশ্যপ্রণোদীত বলে প্রতীয়মান হয়েছে। উগ্রবাদ, হিংসাত্মক মনোভাব এবং সাম্প্রদায়িকতা থেকে এই ধরনের একটি সর্বৈব মিথ্যা ও গালগল্প সংবাদ ছিল বলে দাবি বিভিন্ন পেশাজীবি মহলের। সংবাদ ভিডিও’র ১৮ মিনিট পর থেকে ৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ড পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে অজ্ঞাত কথিত জেএসএস নেতার কল রেকর্ড ও রিপোর্টার, উপস্থাপক এবং বিশ্লেষকের মতামত ছিল একটি ড্রামা।

বাংলাদেশের বিভিন্ন ঘটনা ও অজ্ঞাত কথিত জেএসএস নেতার বক্তব্য বিচার-বিশ্লেষণ করেন, সত্যাজিৎ মুখোপাধ্যায় চিপ রিপোর্টার ও রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী নামে এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। এসময় বাংলাদেশের অনেক চাকমা নেতারা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এই মূহুর্তে সন্তু লারমা ভারতে পালিয়ে আছেন দাবি ছিল তাদের। সন্তু লারমার ভারতে পালিয়ে থাকার বিষয়টির সত্যা নিয়ে কথা বলে জানা গেছে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন খবর।

যে বক্তব্য নিয়ে পাহাড়ে তোলপাড় চলছে সেই অজ্ঞাত জেএসএস নেতার বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হল:
“পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রধান ভূমি সমস্যা। জেলা উপজেলাতে বাঙালিদের সেটেলমেন্ট করা হয়েছে। ভূমি দখল, গণহত্যা, লুটপাট ও নারী নির্যাতনে সেনাবাহিনী ও বাঙালি জড়িত। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে বা স্বাধীন হিসেবে প্রতিনিয়ত নয়াদিল্লীর হস্তক্ষেপ কামনা করি। ভারত যদি হস্তক্ষেপ না করেন, ১৫/২০ বছর পরে দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। কুষ্টিকালচার, সংস্কৃতি ও ধর্ম মুছে যাবে। রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় দল ও ইউপিডিএফ কার্যক্রম চালায়।”

এই অজ্ঞাত ব্যক্তির বক্তব্যের সূত্র ধরে ভারতীয় কথিত সংবাদমাধ্যমের উপস্থাপক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে হত্যাযজ্ঞ চলছে। যেহেতু সময়সাপেক্ষের ব্যাপার ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এর কথা বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকের কাছে ফিরে যান। এসময় রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, আপাতত দৃষ্টিতে ভারত সরকার কিছু করবে না বলে জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয়দের আন্দোলন জোরদার করার ওপর ইঙ্গিত দেন এবং পরবর্তীতে বিশ্বের সবাই সাহায্য করবে বলে উস্কানিমূলক অভিমত ব্যক্ত করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ১৯৯৭ সালে চুক্তি সম্পাদনকারী পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। যারা উপজাতি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির সুফল ভোগ করে শিক্ষা, চাকরি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রেই উপজাতীয়দের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে উল্লেখ যে, জেএসএস চুক্তির মৌলিক শর্ত লঙ্ঘন করে এখনো পাহাড়ে চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, হত্যা ও অপহরণসহ অপতৎপরতায় জড়িত।

পার্বত্য চট্টগ্রামে নয়াদিল্লির হস্তক্ষেপ কামনায় বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তির বিষয়ে জেএসএস দলের একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে Calcutta Television Network এর (Calcutta News) নামের কথিত সংবাদমাধ্যমের সংবাদ অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক। জেএসএস পরিচয়দানকারী ব্যক্তি কোন জেএসএস সদস্য নয় তার সঙ্গে জেএসএস এর কোন যোগসূত্র নেই।

তবে এই বিষয়ে ইউপিডিএফ বলছেন, নয়াদিল্লির হস্তক্ষেপ কামনাকারী ব্যক্তি জেএসএস এর ভারতে অবস্থানকারী নেতা।

পার্বত্য চট্টগ্রামের অনলাইন জুড়ে দেখা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নিয়ন্ত্রিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদের ভিডিও’টি শেয়ার করা হয়েছে। জেএসএস এর অনেক নেতাকর্মীদের ভিডিও শেয়ার করতে দেখা গেছে। সংবাদ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের উস্কানিমূলক সংবাদ প্রকাশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষ। পাহাড়ের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে প্রতিনিয়ত ভারতীয় সংবাদমাধ্যম উস্কানিমূলক সংবাদ পরিবেশে করে যাচ্ছে৷ এটি মূলত উগ্র চিন্তা চেতনা ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতা থেকে করা হচ্ছে৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিপ্রিয় উপজাতি ও বাঙালিদের মধ্যে জাতিগত ভেদাভেদ, সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করে ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করে স্বার্থসিদ্ধি উদ্ধারে অপতৎপরতা চালাচ্ছে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে সমতল নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে৷ সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদ উস্কে দিচ্ছে।

 

 

আগের পোস্টআঞ্চলিক দল কর্তৃক পাহাড়ে ষাটোর্ধ বাঙালি নির্যাতনের শিকার!
পরের পোস্টনিরস্ত্রদের সহজসরল বলতে দ্বিধা নেই কিন্তু অস্ত্রধারী বলতে যথার্থ আপত্তি আছে।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন