লেখক: তারেকুল ইসলাম, পার্বত্য অঞ্চল গবেষক- পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে অসংখ্য বই পুস্তক লেখা হয়েছে। অধিকাংশ লেখালেখিই পার্বত্য অধিবাসী ক্ষুদ্র জাতিসত্বাকে কেন্দ্র করে করা হয়েছে। এছাড়া, এই সম্প্রদায় নিয়ে বেশ কিছু মৌলিক গবেষণাও করা হয়েছে। এর ভেতর সম্প্রতি একটি বই পাঠ অনুধ্যায়ী বাজারে বেশ সাড়া ফেলেছে। গ্রন্থটির নাম হল ‘কার্পাস মহল থেকে শান্তিচুক্তি: পার্বত্য চট্টগ্রামের রাষ্ট্রীয় নীতির ইতিহাস’। রচনাটি ইউপিএল থেকে ১লা ফেব্রুয়ারী, ২০২১ সালে প্রকাশিত হয়। বইটি লিখেছেন আনন্দ বিকাশ চাকমা। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যাবিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি তার ৪৭৬ পৃষ্ঠার গ্রন্থটিতে মোট ৫টি অধ্যায় আলোচনা করেছেন।
লেখক তত্ত্বীয় কাঠামো দিয়ে প্রথম অধ্যায় শুরু করেন এবং দেশভাগের রাজনীতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কাড়াকাড়ি দিয়ে গ্রন্থটি সমাপ্ত করেছেন। এর ভেতর লেখকের আলোচনার শুরুতেই উঠে এসেছে মোঘল আমল থেকে পার্বত্য অঞ্চল কিভাবে ব্রিটিশ কলোনি তথা আধুনিক রাষ্ট্রে প্রবেশ করল তার ইতিহাস।
তথাপি পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃ-গোষ্ঠীর সাথে কিভাবে বাঙালিদের যোগাযোগ শুরু হল। দ্বিতীয় অধ্যায়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ব্রিটিশদের রাজনৈতিক বহির্ভূতকরণ নীতির কারণে তফসিলি জেলা থেকে কিভাবে ব্রিটিশ শাসন বহির্ভূত এলাকা হলো তার একটি বিবরণ প্রদান প্রভৃতি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।
তৃতীয় অধ্যায়ে ব্রিটিশদের ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি এবং ১৯০০ সালের রেজুলেশনে শাসন ক্ষমতায় ব্রিটিশদের প্রদেয় ডিসির প্রভাব সম্পর্কিত ইতিহাস বিশ্লেষণ রয়েছে। এছাড়া, ১৯১৯, ১৯২০ এবং ১৯৩৫ সালে অত্র অঞ্চলকে নিয়ে ব্রিটিশদের বিভিন্ন ঘোষণাপত্র উল্লেখ করেছেন।
চতুর্থ অধ্যায়ে পার্বত্য অঞ্চলে ব্রিটিশদের নমনিয় ভূমি রাজস্ব নীতি এবং অবাঙালিদের উপর এদের প্রভাব সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে। এ অধ্যায়ে জুমকর, মৌজাভিত্তিক কর ও হেডম্যান ব্যবস্থা প্রবর্তন, সার্কেল ভিত্তিক রাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ অবাঙালিদের শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক জীবন নিয়ে ব্যপক আলোচনা করা হয়েছে।
সর্বশেষ অধ্যায়ে লেখক সীমানা কমিশন, দেশ বিভাগ নিয়ে পার্বত্য নেতাদের রাজনৈতিক উদ্যেগ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কাড়াকাড়ি প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুতে লেখক কিছুটা ভূমিকা প্রদান করেছেন এবং উপসংহার দিয়ে শেষ করেছেন।
অত্র গ্রন্থটিতে লেখক ক্ষুদ্র জাতিসত্তা নিয়ে পক্ষপাত গ্রহণ করে বাঙালিদের প্রকারান্তরে অনুপ্রবেশকারী বলে উল্লেখ করেছেন। যা ইতিহাসের সাথে সঠিক বিচার করা হয়নি। উপরন্তু, প্রকারান্তরে মানবসভ্যতার ধারাবাহিক প্রকৃতিগত সম্প্রসারণকে অস্বীকার করা হয়েছে। লেখক তার গ্রন্থটিতে অবাঙালিদের বাংলাদেশে আগমনের ইতিহাস প্রদান করেনি। সর্বোপরী গ্রন্থটির কিছু সমালোচনা থাকলেও পার্বত্য অঞ্চলের ইতিহাসের উপর মৌলিক একটি গবেষণামূলক কাজ।
পাহাড়কে কেন্দ্র করে শরদিন্দু শেখর চাকমা নামক আরেকজন লেখক পার্বত্য অঞ্চলের উপর একাধিক গ্রন্থ লিখেছেন। এছাড়া তিনি প্রায় ৩০ এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেন। ১৯৯৭ সালে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের লক্ষে পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সঙ্গে আলোচনা করার জন্য জাতীয় কমিটির সদস্য করে পাঠান।
অধিকন্তু, তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য। তার ‘বঙ্গবন্ধু ও পার্বত্য চট্টগ্রাম’ নামক একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রয়েছে। গ্রন্থটির প্রথম অধ্যায়ে লেখক বঙ্গবন্ধু ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের উপর আলোচনা শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে লেখক, পাহাড়ের অবাঙালিদের বঞ্চনার ইতিহাস বর্ণনা করে শান্তিচুক্তি পর্যন্ত আলোচনা দীর্ঘ করেন। আদিবাসীদের বঞ্চনা নামক একটি অধ্যায় রচনা করেন।
অথচ পার্বত্য অবাঙালিদের আদিবাসী হওয়া নিয়ে রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। পাহাড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার প্রতি তিনি একটি নিবেদনও রাখেন। অতঃপর বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে ৩টি অধ্যায় রচনা করেন। যেখানে তিনি বৌদ্ধ ধর্মের উত্থান, পতন, নবজাগরণ, বৌদ্ধ ধর্ম ও বিজ্ঞান এবং সাধনানন্দ ও মহাস্থবির নিয়ে তিনি বিস্তর আলোচনা করেন। এই গ্রন্থটিতেও পার্বত্য বাঙালি বরাবরের মতই অপ্রাসঙ্গিক রয়ে গেছে।
পার্বত্যভূমির উপর The Chittagong Hill Tracts নামে সায়েদ আবু রায়হানের একটি ইংরেজি গ্রন্থ রয়েছে। বইটি কালি ও কলম থেকে ফেব্রুয়ারী, ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয়েছে। লেখক ইংরেজিতে লেখা গ্রন্থটি পাঁচটি অধ্যায়ে কোয়াশেষ করেছেন। প্রথম অধ্যায়ে তিনি ১০টি অবাঙালি গোষ্ঠীর নৃ-তাত্ত্বিক পরিচয় উল্লেখ করেছেন।
একই অধ্যায়ে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ব্যবস্থাপনা হেডম্যান, কার্বারি, খাসভূমি, চারণভূমি, বনভূমি এবং জুম চাষ ও ভূমি কর নিয়ে আলোচনা করেছেন। পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে অবাঙালি উদ্ভাস্তু (Refugee) পুনর্বাসন নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। অতঃপর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র শাখার অবস্থান এবং খাগড়াছড়িতে ১৯৯৮ সালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ নিয়ে ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আলোচনা রাখেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের জন্য জনসংহতি সমিতির সাথে লিয়াজু কমিটির আলাপ ও বিভিন্ন কমিটি গঠন সংক্রান্ত আলোচনা উল্লেখপূর্বক ১৯৯৭ সালের শান্তিচুক্তি করায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার পাওয়া নিয়ে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে গ্রন্থটিতে। লেখক ভূমিকায় বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে পর্যটক, পরিদর্শক ও পাহাড় সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক এমন সবাইকে অত্র অঞ্চলের ইতিহাস এবং অবাঙালিদের ভৌগোলিক ও প্রশাসনিক, আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ইতিহাস সংশ্লিষ্ট আলোচনা জানাবেন। অতঃপর, ৫০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০১ সাল অব্দি ধারাবিবরনী প্রদান করেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে প্রাচীন আমল থেকে মোঘল আমল থেকে ইতিহাস রচনা করে গ্রন্থ লিখেছেন জামাল উদ্দীন। অনুক্ত গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক বিখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সুনীতি ভূষণ কানুনগো। তিনি ভূমিকার একটি বাক্যে বলেছেন, “. গ্রন্থখানির আলোচ্য বিষয় পাঠকের নূতন-নূতন চিন্তার জন্ম দেবে বলে আমার বিশ্বাস..”।
গ্রন্থটি বলাকা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। লেখক গ্রন্থখানায় প্রাচীন আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভৌগোলিক বিবরণ দিয়ে আলোচনা শুরু করে অত্র অঞ্চলের শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি আলোচনা উল্লেখপূর্বক বাঘ শিকারীর বিভিন্ন গল্প ও ইতিহাস বর্ণনা করে গ্রন্থের যবনিকাপাত করেছেন। ৬টি অধ্যায়ের গ্রন্থটি মূখ্যত পাহাড়ের মানুষের আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ইতিহাস উল্লেখিত হয়েছে। অনুক্ত ইতিহাসে মোঘল আমল প্রাধান্য পেয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর আরেকটি প্রামাণ্য গ্রন্থ লিখেছেন মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। তার আলোচিত ও বহুল সমাদ্রিত পঠিত গ্রন্থটি হল, পার্বত্য চট্টগ্রাম: শান্তি প্রক্রিয়া ও পরিবেশ-পরিস্থিতি মূল্যায়ন। গ্রন্থটি মাওলা ব্রাদার্স থেকে ২০০০ সালে প্রকাশিত হয়েছে। ৩৪০টি পাতা খরচ করে ২৪টি অধ্যায় নির্মাণ করে লেখক বইটি সমাপ্ত করেছেন।
লেখকের আলোচনা অন্যান্য লেখকদের মতই ভৌগোলিক বিবরণ দিয়ে শুরু করেন। দুই ডজন অধ্যায়ের ভেতর গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় পাঠকদের চেতনা ও ভাবনার উদ্রেক করে। যেমন, আঞ্চলিক প্রতিবেশি পরিস্থতির মূল্যায়ন। ক্রমান্বয়ে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশ পরবর্তীতে জনসংহতি সমিতির উত্থান। তৎপরবর্তী শান্তিবাহিনীর উত্থান এবং এর সহীত বৈদেশিক সম্পর্ক।
শান্তিবাহিনীর বিভিন্ন অপারেশন পরিকল্পনা এবং উল্লেখযোগ্য অপারেশন। নিরাপত্তা বাহিনী ও বাঙালি কর্তৃক উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর উপর আক্রমণ ও নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগের খণ্ডন। উপজাতি স্বরনার্থী সমস্যা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী এবং শান্তি প্রচেষ্টার ৩টি ধাপ আলোচনা।
আখেরে, লেখক পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন আলোচনা করার মাধ্যমে তার ৩ শতের অধিক পৃষ্ঠার গ্রন্থের সংহার হয়। লেখক গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন, “.. দীর্ঘ রচনার কোন অংশ আকর্ষনীয় আবার কোন অংশ একঘেয়ে বা বোরিং লাগবে। কিন্তু বিশাল একটি বিষয়ের প্রতিটি অংশই গুরুত্বপূর্ণ..”। লেখকের গ্রন্থটি এ কারণেই পাঠের নির্ভরযোগ্য যে, রচয়িতা নিজেই অধিকাংশ ঘটনার সহীত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
প্রসঙ্গত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ও বাঙালি সম্প্রদায় কর্তৃক বহুল পঠিত গ্রন্থ হল, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস ও রাজনীতি (রাজনীতি খণ্ড)। গ্রন্থটি ১৯৯৩ সালে রাঙামাটি প্রকাশনী থেকে বের হয়। গ্রন্থকার বইটি ১৪টি অধ্যায়ে বিভক্ত করেন। অধ্যায়ের শুরুতে লেখক পার্বত্য চট্টগ্রামে অভিবাসন ও বহিরাগমন আলোচনা করতে গিয়ে দেখিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী দাবিদার প্রতিটি অবাঙালি জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের বাইরে তথ্য মিয়ানমার, রাখাইন, ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম প্রভৃতি অঞ্চল থেকে আগমন করেছে।
এক্ষেত্রে তিনি নৃ-তাত্ত্বিক বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও দলিল উপস্থাপন করেছেন। যেকোন পাঠক উক্ত লেখা পাঠ করে পাহাড়ে সকল অধিবাসী বসবাসের ইতিহাস সম্পর্কে নির্জলা সুস্পষ্ট ইতিহাস জানতে পারবে। এছাড়া, লেখক শান্তি প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাস দমন, ইতিহাস ও রাজনীতি, পার্বত্য উপজাতি ও তাদের অধিকারে বিতর্ক, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকট প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করে গ্রন্থ রচনা সংহার করেন।
আরেকটি গ্রন্থ বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ‘বাংলাদেশের আদিবাসী এবং জাতি ও উপজাতি’। বইটির লেখক এবনে গোলাম সামাদ। প্রতিযশা এই লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। লেখক তার গ্রন্থটি ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পরিলেখ প্রকাশনী থেকে প্রথম প্রকাশ করেন।
লেখকের গ্রন্থটি প্রবন্ধের সমাহার। যেখানে ১৫টি মূল প্রবন্ধ। বিবিধ প্রসঙ্গে ৬টি প্রবন্ধ এবং ৩টি পরিশিষ্টে ৩টি প্রবন্ধ লেখক রচনা করেছেন। প্রতিটি প্রবন্ধ চাকমা, রোহিঙ্গা, আদিবাসী প্রসঙ্গ, বৌদ্ধ ধর্ম, উপজাতি সমস্যা এবং ক্ষুদ্র জতিসত্ত্বা নিয়ে পুরোগঠিত। আর্য-অনার্য, বাঙালি জাতির ইতিহাস, আমাদের জাতিসত্ত্বার উৎস, শান্তিচুক্তি শান্তি ডেকে আনেনি প্রভৃতি বিষয় তিনি উপস্থাপন করেছেন। তার গ্রন্থটির বিশেষত্ব হলো প্রতিটি প্রবন্ধে তিনি মৌলিক উৎস ব্যবহার করেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সামাজিক ইতিহাস, মানবিক জীবনধারা, গোষ্ঠীভিত্তিক বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান, ধর্মীয় বিশ্বাস ইত্যকার বিষয় নিয়ে ‘The Hill Tracts of Chittagong and the Dwellers Therein’ নামক ইংরেজী ভাষায় লিখিত গ্রন্থটি Captain Thomas Herbert Lewin রচনা করেছেন। গ্রন্থটিতে লেখক অবাঙালি ও বাঙালিদের সামাজিক জীবনাচারের বৈপরিত্য লক্ষ্য করেছেন।
তিনি পাহাড়ের বিভিন্ন নৃ গোষ্ঠীর জীবনাচারণ ব্যাখ্যা করেছেন। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের উপর গ্রন্থটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। তিনি ১৮৬৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ছিলেন বলে তার লিখিত গ্রন্থটি একটি মৌলিক বই এবং গবেষণার উৎস হতে পারে। গ্রন্থটি বাংলা বাজার থেকে দিব্যপ্রকাশনী সংস্থা প্রকাশ করেন। গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করেন রাজিব এল দাশ। অনুবাদকের অনুবাদ থেকে জানা যায় গ্রন্থটিতে ৩টি অধ্যায় রয়েছে। এবং ক, খ, গ, ঘ নামে ৪টি উপসংহারসহ পরিশিষ্ট রয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সংশ্লিষ্ট বই ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা ও সম্ভাবনা’। গ্রন্থটি লিখেছেন পার্বত্য নিউজের সম্পাদক মেহেদি হাসান পলাশ। ২০১৬ সালে গ্রন্থটি জ্ঞান বিতরনী প্রকাশনী থেকে তার পুস্তকটি প্রকাশ করা হয়। ১৮টি চ্যাপ্টারে লেখক পার্বত্য নিপীড়িত পার্বত্যবাসীর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান রেখে গ্রন্থটি রচনা করেন।
অত্র বইয়ে লেখক পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী নীতি প্রণয়নের দাবি দিয়ে রচনা শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি অবাঙালিদের আদিবাসী স্বীকৃতির সমস্যা প্রসঙ্গে, সিএইচটি কমিশন বাতিল বিষয়ে, বিশেষ গোষ্ঠীর পাহাড় নিয়ে আগ্রহ কেন, ঐতিহাসিক লং মার্চ, শান্তিচুক্তির এক যুগ: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি, পাহাড়ে বিশেষ মহলের চাঁদাবাজী বন্ধের দাবিসহ প্রভৃতি বাঙালিদের অধিকার বিষয়ে তিনি নির্মোহভাবে কলম ধরেন। তার লেখা বিভিন্ন প্রবন্ধ ও প্রতিবেদন পার্বত্য অঞ্চলের নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে গবেষককে অবস্থান গ্রহণের উৎসাহ প্রদান করবে।
১৬ নভেম্বর ২০২৪