পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড (PCDB) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং এ অঞ্চলের অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে। এই বোর্ডের দায়িত্ব যখন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ছিল, তখন এটি স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন প্রদান করেছিল বলে জানা যায়। স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্কও সুদৃঢ় ছিল, যা উন্নয়ন কার্যক্রমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তবে, বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ দলীয় রাজনীতিবিদদের হাতে চলে যাওয়ার পর থেকেই বিতর্কের জন্ম দেয় এবং দুর্নীতির অভিযোগও বাড়তে থাকে।
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড যখন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ছিল, তখন সাধারণ জনগণ এর কার্যক্রম নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল। সেনাবাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণের ফলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন, কার্যকর তদারকি, এবং স্বচ্ছ অর্থ ব্যবস্থাপনার উদাহরণ দেখা গেছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কাজ করতেন এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর প্রতিটি পর্যায়ে নজরদারি করতেন। ফলে, প্রকল্পগুলো সময়মতো সম্পন্ন হতো এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পেতে জনগণের কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না। সেনাবাহিনী তাদের নিরপেক্ষ মনোভাব ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলেছিল, যা এলাকাবাসীর আস্থা অর্জন করেছিল।
রাজনীতিবিদদের তত্ত্বাবধানে দলীয়করণ ও দুর্নীতির প্রভাব:
পরবর্তী সময়ে, রাজনীতিবিদদের হাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হলে দলীয়করণের প্রভাব বাড়তে থাকে। বিভিন্ন পদে দলীয় সমর্থকদের নিয়োগ, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে তদবির, এবং বরাদ্দকৃত অর্থের অপচয় শুরু হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ফলে, জনগণের আস্থা কমে যায় এবং বোর্ডের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন না হওয়া, নিম্নমানের কাজের অভিযোগ, এবং প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হস্তক্ষেপে বোর্ডের কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়ে।
এই পরিস্থিতিতে, বোর্ড দুর্নীতির আখড়া হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। উন্নয়ন কাজের বরাদ্দের প্রায়ই অপচয় দেখা যায়, এবং জনগণের প্রয়োজনের পরিবর্তে রাজনৈতিক স্বার্থ ও সুবিধাবাদী নীতি বোর্ডের কাজের উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে।
সেনাবাহিনীর পুনরায় নিয়ন্ত্রণে সম্ভাব্য সুফল
পুনরায় সেনাবাহিনীর হাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব হস্তান্তরের মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ একটি প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হতে পারে। সেনাবাহিনীর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো গুণগত মান বজায় রেখে দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এছাড়াও, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্থানীয় জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপন হতে পারে, যা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণে উৎসাহ যোগাবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়নে একটি স্থায়ী এবং টেকসই উন্নয়ন কাঠামো গড়ে তুলতে হলে সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা, দক্ষতা এবং স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেনাবাহিনী দায়িত্ব গ্রহণ করলে উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ সঠিকভাবে ব্যবহার হবে এবং জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হবে। সেনাবাহিনী তাদের শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা ও সেবা মুলক মনোভাবের মাধ্যমে বোর্ডের কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সুতরাং, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পুনরায় সেনাবাহিনীর হাতে ফিরে আসলে একটি দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ উন্নয়ন কাঠামো পুনর্গঠন সম্ভব হবে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব যখন সেনাবাহিনীর হাতে নিয়ন্ত্রিত ছিল তখন স্বচ্ছ নিরপেক্ষ দুর্নীতিমুক্ত ছিল। যখনই দলীয়করণ রাজনীতিবিদদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্ত করা হলো তখনই বিতর্ক জন্ম দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং দুর্নীতির আখড়া হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত হয়েছে। আবারো পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দিয়ে নিরপক্ষ দুর্নীতিমুক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।
লেখক: অপূর্ব সাচিং, পার্বত্য চট্টগ্রাম।