বান্দরবান দুর্গম এলাকায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কেএনএফ।

0

হান্নান সরকার, হিল নিউজ বিডি: কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ, যা বম পার্টি নামেও স্থানীয়ভাবে পরিচিত। কেএনএফ হল: দেশের দক্ষিণ পূর্ব অংশের পর্বত অঞ্চলের সক্রিয় একটি নিষিদ্ধ সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন, যা বান্দরবান জেলায় হত্যা, লুটপাট, ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবিসহ একাধিক সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত রয়েছে।

২০১৭ সালে বান্দরবান রুমা উপজেলার ইডেন পাড়ার বাসিন্দা নাথান বম দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কেএনএফ রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার নয়টি উপজেলা নিয়ে বম, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, ম্রো ও খিয়াং (৬টি জাতি) জনগণের জন্য স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বা একটি পৃথক স্বাধীন রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তবে পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, ম্রো ও খিয়াং কেএনএফ এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার কথা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করে আসছে। কেএনএফ যে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন তা পরিষ্কার করতে তাদের প্রতিনিধিগণ চলতি বছর বান্দরবান সংবাদসম্মেলন ও প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে।

কেএনএফ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাথান বমসহ তার সহযোগীরা

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মতে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট মিয়ানমারের কাচিন রাজ্য থেকে অস্ত্র পায় এবং কারেন বিদ্রোহীর সাথেও এর সম্পর্ক রয়েছে। এর সশস্ত্র শাখার নাম কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)। যাদের অবস্থান বান্দরবান জেলা সদর থেকে অদূরে রুমা ও থানচির অতি দুর্গম এলাকা।

স্থানীয় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেএনএফ ভারত ও মায়ানমারে বসবাসরত মিজো ও লাই জনগোষ্ঠী সমর্থন পেয়ে থাকে বলেও কথিত অভিযোগ আছে। বিগতবছর বান্দরবানে কেএনএফ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মুখামুখি অবস্থানে ছিল। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন স্থানীয়রা। অনেক সময় দেখা গেছে, যুদ্ধের কৌশল হিসেবে কেএনএফ সাধারণ উপজাতিদের ভয়ভীতি দেখিয়ে শরণার্থী করেছে। যা পরবর্তীতে কেএনএফ মিথ্যাচারের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর উপর চাপিয়ে দিয়েছে। শরণার্থী হিসেবে দেশান্তরি জনগোষ্ঠীগুলো ভুক্তভোগী হিসেবে ভারতের মিজোরামে আশ্রয়িত হয়েছে। বর্তমানে কয়েকটি পাড়াবাসীকে শরণার্থী করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে উপজাতি খ্রিস্টান কমিউনিটির মানুষদের বসবাস রয়েছে। তাদেরকে কেএনএফ মিথ্যাকে সত্যরূপে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছে। কেএনএফ বলেছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের জাতিগোষ্ঠীর উপর দমনপীড়ন ও গণহত্যা চালাচ্ছে। এবং তারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে রাস্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ তাদের অঞ্চলে বাঙালি মুসলমানদের আগ্রাসন বাড়ছে৷ ঘটছে ভূমি দখলের মত ঘটনা৷ এমন মিথ্যে ও বানোয়াট তথ্য খ্রিস্টান কমিউনিটিকে গিলিয়ে কেএনএফ সহানুভূতি অর্জন করেছে। তাদের থেকে কেএনএফ অর্থ, আশ্রয়, সমর্থন ও নানাদিকে সহযোগিতা পাচ্ছে। এসব কিছুই কেএনএফ কে টিকে থাকতে বিশাল সহযোগিতা করেছে এবং একইভাবে আন্তর্জাতিক মহলে যোগসূত্র তৈরি করেছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

কুকিভুক্ত কয়েকটি জনগোষ্ঠী কেএনএফ নির্যাতনে শরণার্থী (দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে)

গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, কেএনএফের সশস্ত্র শাখার ক্যাডাররা ২০১৯ সালে ইনফ্যান্ট্রি কমান্ডো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে বলে গোয়েন্দা রিপোর্ট রয়েছে। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ছয়টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাধ্যমে পার্বত্যাঞ্চলে খ্রিস্টান বাফার রাষ্ট্র তৈরির জন্য নতুনভাবে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পার্বত্যাঞ্চলের ৯টি উপজেলা নিয়ে কেএনএফর অঙ্কিত মানচিত্রের সীমানায় পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত একটি পৃথক রাজ্যের দাবিতে সংগঠনটি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করে। ২০১৭ সালে সশস্ত্র শাখায় রূপ নেয়। কিন্তু প্রকাশ্যে আসে সম্প্রতি। অথচ সংগঠনটি প্রাথমিক পর্যায়ে কেএনডিও নামে একটি সেবামূলক এনজিওর খোলসে যাত্রা শুরু করে।

কেএনএফ প্রথম আলোচনায় আসে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গী বিরোধী অভিযান পরিচালনার পর থেকে। দ্বিতীয়ভাবে আলোচনায় আসে কেএনএফ বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচির পর্বতের গহীন অরণ্য ঘেরা এলাকায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রমের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আইডি ও পেইজে ছড়িয়ে দিয়ে৷ এসময় কেএনএফ কে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলার ম্যাপ, কুকি রাজ্যের মুদ্রা এবং গেরিলা প্রশিক্ষণের ভিডিও ছাড়তে দেখা গেছে।

দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে কেএনএফ বিরোধী অভিযান কিছুটা শিথিল হলে পুনরায় কেএনএফ কে দেখা যাচ্ছে বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমা, থানচির দুর্গম এলাকাগুলোতে আতঙ্ক ছড়াতে।

স্থানীয় বম পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, ম্রো ও খিয়াং জনগোষ্ঠীরা বলছেন, কেএনএফ এর চাঁদাবাজি থেকে কিছুতেই রক্ষা পাচ্ছে না পাড়াবাসী। গৃহপালিত গবাদিপশুও তারা নিয়ে যাচ্ছে। রসদ হিসেবে ঘরের চাল, ডাল ও নিত্যপণ্য জিনিসপত্র লুটপাট করে নিচ্ছে। রুমা ও থানচি উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ২০টি পাড়ায় কেএনএফ চাঁদাবাজির বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। পাড়াবাসী বলছে, ক্ষুদার্ত বাঘের মত কেএনএফ চাঁদার জন্য হানা দিচ্ছে। এর আগে কেএনএফের চাঁদাবাজি, নির্যাতন ও হামলার ভয়ে ৩১৯টি পরিবার বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি ছেড়ে পাশে ভারতের মিজুরাম ও মিয়ানমারে চলে যান। বর্তমানে কেএনএফ এর সীমাহীন চাঁদাবাজি অতিষ্ঠ করে তুলেছে জেলার কয়েক হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতি জনগোষ্ঠীকে।

গত কয়েকদিন ধরে কেএনএফ এর অস্ত্র সন্ত্রাসীদের আনাগোনা রুমা, থানচির জনগণের মধ্যে ভয়ভীতি তৈরি করেছে। কেএনএফ এতদিন ধরে দুর্গম পর্বত, সীমান্তবর্তী এলাকা ও পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয়িত ছিল। বর্তমানে লোকালয়ে ফিরতে শুরু করেছে৷ কেএনএফ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন উপজাতি পাড়ায়। সাংগঠনিক কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে চাঁদা পূর্বের চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। প্রতিটি পরিবারকে চাঁদার আওতায় নিয়ে আসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুকিভুক্ত বাসিন্দা ‘হিল নিউজ বিডি’ কে বলেন, কেএনএফ মূলত বম জনগোষ্ঠী নির্ভর একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। যেখানে উগ্র বম যুবকরা রয়েছে। অন্যান্য উপজাতি জনগোষ্ঠীর লোকজন এই সংগঠনে নেই। তবে সব বম জনগোষ্ঠীর সমর্থনও নেই। কেএনএফ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সবাইকে তাদের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে বাধ্য করেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কাজ করে এমন গবেষক, সচেতন মহল মনে করেন, রুমা, থানচির পর্বত অরণ্য ঘেরা এলাকা এবং ভারত ও মায়ানমারে কিছু এলাকায় কেএনএফ ঘাঁটি করে আছে। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ঘাঁটিতে আশ্রয়ে যায়। অভিযান শেষ হলে পুনরায় রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি ফিরে আসে। বর্তমানে হাজারের উপর কেএনএফ সদস্য রয়েছে৷ তাদের আছে গেরিলা প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জামাদি। যা দিয়ে ভৌগোলিক, কৌশলগত কারণে পাহাড়ে তারা দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারবে। বেশ করে পরিচিত রাস্তাঘাট ও পাহাড়ের অরণ্য ঘেরা ঝিরি-ঝর্ণা অতিক্রম করে রাস্ট্রীয় বাহিনীর পক্ষে কেএনএফ নির্মূল করা কঠিন৷ এজন্য প্রয়োজন কেএনএফ এর অর্থের উৎস চাঁদাবাজি বন্ধ করা, এবং ত্রিদেশীয় সীমান্ত এলাকায় অবাধে যাতায়াত ও অস্ত্র চালান বন্ধ করতে পারলে কেএনএফ নির্মূল কেবলমাত্র সময়ের ব্যাপার।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ার কারণে দ্রুত সন্ত্রাসী কবলিত এলাকায় পৌঁছানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। এর ফলে সন্ত্রাসীরা দুর্গম উপজাতি পাড়াগুলো নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি ও হামলার ঘটনা ঘটছে।

পার্বত্যবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, কেএনএফ চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি ও ভয়ভীতি দূর করতে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল পরিচালনা এবং যেসকল এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প নেই, সেখানে ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে সাধারণ উপজাতি পাড়া বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।

পূর্বে যা ঘটেছে-
স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন, গত ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি জঙ্গী গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি বাহিনী অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে তারা চাঁদাবাজি, হত্যা, অপহরণ ও পর্যটকের ওপর হামলা শুরু করে। অভিযোগ আছে, পর্যটকদের মোবাইল ও টাকা লুটপাট করার। নিরাপত্তার অজুহাতে বান্দরবান রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে। জেলার অন্যান্য স্থানের পর্যটক স্পট খুলে দিলেও এখনো বন্ধ আছে রুমা থানচির পর্যটক স্পটগুলো।

স্থানীয় সংবাদ কর্মী ও অধিবাসীরা বলছেন, সাধারণ মানুষ ও নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যকে চোরাগোপ্তা হামলার মাধ্যমে তারা ভীতি ছড়াতে চেষ্টা করে। এসময় তাদের পুঁতে রাখা মাইনে সাধারণ উপজাতিরা হতাহতের ঘটনা ঘটে।

কেএনএফ এর দাবিদাওয়া এবং সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। তৎকালীন বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কৈ শৈ হ্লা নেতৃত্বে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। শান্তি কমিটির সঙ্গে কয়েক দফায় অনলাইন ও স্বশরীরে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় কেএনএফ প্রতিনিধিগণের। বৈঠকে ১১ টি বিষয়ে চুক্তি বা সমঝোতা হয়। আরো পেশকৃত দাবিদাওয়ার বিষয়গুলোর উপর বিস্তর আলোচনা চলমান ছিলো৷ কেএনএফ এর অনেক দাবিদাওয়া ছিল সংবিধান পরিপন্থী। দাবিগুলো বিচার-বিশ্লেষণ যেমন প্রয়োজন ছিল তেমনি বাস্তবায়ন ছিল সময়সাপেক্ষ। এমতাবস্থায় কেএনএফ স্বায়ত্তশাসনের দাবির ধুয়ো তুলে গত ২ এপ্রিল ও ৩ এপ্রিল রুমা, থানচির ব্যাংক ডাকাতি ও পুলিশ আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্রলুটের ঘটনা ঘটায়। এছাড়াও এই পর্যন্ত ৭জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী কেএনএফ সংঘর্ষে এই পর্যন্ত অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পুরো জেলা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এসব ঘটনার পর যৌথবাহিনী অভিযানে নামে। তারপর থেকে সংগঠনটির সভাপতি রুমা ইডেন পাড়ার বাসিন্দা নাথান বম দেশ ছাড়েন। বিভিন্ন সূত্রের দাবি অনুযায়ী নাথান বম মায়ানমারের চিন রাজ্যে লাই জনগোষ্ঠীর মধ্যে লুকিয়ে আছেন। যেখান থেকে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। এবং দেশের এ অঞ্চলে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে উদ্দেশ্য হাসিল করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত আছেন।

আগের পোস্টবিজিবি অভিযানের মুখে পালিয়ে বাঁচলো কেএনএফ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার।
পরের পোস্টবান্দরবানে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ১০ জনসহ ১১ জনের জামিন।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন