‘২ ডিসেম্বর ২০২৪ পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৭ বছরেও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় নাই পার্বত্য অঞ্চলে। বরং নতুন নতুন দলের আবির্ভাবে বেঢ়েছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত। আধিপত্য বিস্তার, গুম-খুন, চাঁদাবাজি ও ভাতৃঘাতী সংঘাতে উত্তাল পার্বত্য জেলাগুলো। শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন পাহাড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ পার্বত্য চুক্তির সংবিধান ও মৌলিক অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক ধারাগুলো বাতিল করা’ বলে অভিমত প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) “পার্বত্যচুক্তির ২৭ বছর পূর্তি” উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ‘সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক পার্বত্য চুক্তির বিভিন্ন ধারাগুলোর বিষয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা এখন সময়ের দাবি। বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আইনগুলো সংস্কার বা রিফ্রম করার উদ্যোগ নিতে কমিশন গঠন করা উচিত।’
তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ সংবিধানের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অনেক ধারা-উপধারা সাংঘর্ষিক। তাই এই চুক্তির সংবিধান বিরোধী ধারা-উপধারা গুলো সংশোধনের দাবি দীর্ঘ দিনের। কিন্তু, রাজঅৈনতিক সরকারগুলো গত ২৭ বছরেও তা করে নাই। বরং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য পদগুলো দলীয় আনুগত্যের উপহার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। দেশ ও দুনিয়া সম্পর্কে না জানা, দুর্নীতিবাজ, রাজনৈতিক দলের নেতারাই চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে সকল সময়ই। এরা চুক্তির উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য সম্পর্কেও জানে না। এসব জায়গায় সংস্কার না হলে চুক্তির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ব্যাহত হচ্ছে বার বার।’
নেতৃদ্বয় বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তি বাঙালিদের জন্য অসম্মানজনক, অবমাননাকর, মৌলিক ও মানবাধিকারের পরিপন্থী এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। চুক্তি অনুযায়ী করা জেলা পরিষদ আইনের ২(ক) ধারায় বাঙালি জনগণকে অউপজাতীয় হিসেবে আইডেনটিটি দেওয়া সংবিধানের ৬(২) অনুচ্ছেদের সাথে, ২(কক) ও ১৭ (১) ধারা অনুযায়ী বাঙালিরা ভোটার হতে হলে বৈধ জমি ও নির্দিষ্ট ঠিকানা থাকার বিধান সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদের সাথে, ৩১, ৩২ ও ৬২ ধারামতে বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার প্রদান সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদের সাথে, ৫৮ ও ৭১ ধারামতে চেয়ারম্যান বা তার প্রতিনিধির লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোন আদালত মামলা নিতে না পারা বা পরিষদের কারো বিরূদ্ধে মামলা করতে হলে এক মাস সময় দিয়ে নোটিশ প্রেরণ সংবিধানের ২৭, ৩১ অনুচ্ছেদের সাথে অসামঞ্জস্য বিধায় সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাতিল করা প্রয়োজন। আইনের চোখে সকল নাগরিকের মর্যাদার সমতা সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে।’
তারা বলেন, ‘২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী খাগড়াছড়িতে বাঙালি ও পাহাড়ি জনসংখ্যা হচ্ছে ৫১.০৭ : ৪৮.৯৩। অথচ পরিষদে বাঙালি ও পাহাড়িদের প্রতিনিধিত্ব হচ্ছে ১০:২৪। চেয়ারম্যান পদও পাহাড়িদের জন্য সংরক্ষিত। চুক্তি আরেক ফসল আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান পাহাড়ি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পাহাড়ি, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পাহাড়ি। সব জায়গায় যদি নেতৃত্বে পাহাড়িরাই থাকে- তাহলে অর্ধেকেরও বেশি বাঙালি কোথায় গিয়ে সাংবিধানিক অধিকার চাইবে। চুক্তির যেসব ধারা অসাংবিধানিক তা অবিলম্বে বাতিলের কোন বিকল্প নাই।’
নেতৃদ্বয় বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে যেহেতু বাংলাদেশ সংবিধানের সাংঘর্ষিক অবস্থান রয়েছে এবং চুক্তির পরেও উপজাতি সন্ত্রাসীরা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি। সুতরাং, সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ধারা সংবলিত চুক্তি সংশোধন পূর্বক পাহাড় এবং সমতলের জন্য একই নিয়ম চালু করতে হবে। চুক্তির বৈষম্যেমূলক ধারা-উপধারায় পার্বত্য বাঙালিরা পিছিয়ে পড়েছে। চুক্তিতে বাঙালিদের জন্যও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বাংলাদেশে পাহাড়ের জন্য ভিন্ন আইন অবিলম্বে সংশোধন না করলে সমস্যা সমাধান হবে না। কোন প্রকার সহানুভূতি না দেখিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহী বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের নির্মূলের জন্য সামরিক অভিযান চালু করার বিষয়টি সরকারকে ভেবে দেখা জরুরি। স্থিতিশীলতার স্বার্থে প্রত্যাহারকৃত সেনাক্যাম্প পুনরায় স্থাপন করা দরকার বলে দেশবাসী মনে করে।’