সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে অনড়; জেএসএস এর প্রতিদান লাশের স্তুপ।

0
পাহাড়ের অপূর্ব সৌন্দর্য

পার্বত্য জেলাসমূহে দীর্ঘ সংঘাতের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৮৫ সাল থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে কয়েক দফা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

যার ফলশ্রুতিতে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

মূলত পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে পার্বত্য জেলাসমূহে সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ ও পাহাড়ি বাংগালী বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে। কিন্তু পাহাড়ে শান্তি তো আসেনি, উপরন্তু উপজাতি সন্ত্রাসী দলগুলোর আন্তঃকোন্দল ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে কার্যত অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে এবং জটিল সমীকরণের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চুক্তির ৯৮টি উপধারার মধ্যে ৮৬টি উপধারা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন করেছে। চুক্তির অবশিষ্ট ৪টি উপধারা আংশিক এবং ৮টি উপধারা বাস্তবায়নের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চুক্তির আংশিক ও অবাস্তবায়িত ধারাগুলো বাস্তবায়ন এবং পার্বত্য জেলায় শান্তি বয়ে আনার জন্য সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বিপরীতে, জেএসএসকে চুক্তির দুই মাসের মধ্যে তাদের সশস্ত্র শাখা শান্তিবাহিনীর সদস্যদের সম্পূর্ণ অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার শর্ত দেওয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে অস্ত্রসমর্পণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পাহাড়ি গেরিলা নেতা সন্তু লারমা তথা জেএসএস সেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র-সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে উল্লেখ করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা সেদিন সম্পূর্ণভাবে অস্ত্র জমা দেয়নি। সরকার পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী সব কিছু অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাওয়ার পরও চুক্তির দ্বিতীয় পক্ষ চুক্তি লঙন করে পূর্বের রূপে ফিরে গিয়েছে। যার প্রমাণ পাহাড়ে চলমান সংঘাত ও সংকটময় পরিস্থিতি।

চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলে আসা বিরোধ, সংঘাত ও সংঘর্ষ নিষ্পত্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল বটে। কিন্তু ২৭ বছর পরেও পাহাড়ে থামেনি সেই সংঘাত। আর এই সংঘাতের নেপথ্যের কারিগর সন্তু লারমা ও তার দল জেএসএস। তাদের মজুদকৃত অবৈধ অস্ত্রের কারনেই বিভিন্ন দূর্গম জায়গায় আজও হানাহানি, যুদ্ধ বিগ্রহ, অবৈধ চাঁদাবাজি বিরাজমান। এই সময়ে তারা চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, ধর্ষন এবং অসংখ্য মানুষ হত্যা করে। এছাড়া চাঁদাবাজির মাধ্যমে সংগ্রহ করছে নতুন নতুন অস্ত্র। চুক্তির আগেও এই জেএসএস পার্বত্য এলাকায় ব্যাপকভাবে চাঁদাবাজি করতো। আজ অব্দি তাদের সেই চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়ার বিন্দুমাত্র লেশ নেই। কেউ চাঁদা দিতে অসমর্থ হলে- জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া, খুন, গুম, অপহরণ, মুক্তিপণ, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি ও শস্য ক্ষেত পুড়িয়ে দেওয়া তো তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এভাবে সন্তু লারমা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী পার্বত্য চুক্তির অপব্যবহার করেছে গত ২৭ বছর ধরে।

চুক্তির নামে সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে পার্বত্যাঞ্চলকে এখনো অস্ত্র ও সন্ত্রাসের আখড়া বানিয়ে রেখেছে। মূলত সেদিন জেএসএস এর চুক্তি সাক্ষরের উদ্দেশ্য ছিলো- রাষ্ট্রীয় নানাবিধ সুযোগ সুবিধা ভোগ করা এবং নিজেদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা। উদ্দেশ্য হাসিল শেষে জেএসএস পুনরায় তাদের চিরচেনা রুপে ফিরে যায়। বরাবরের ন্যায় সন্ত্রাসবাদ তথা দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা ও উন্নয়ন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। দেশি-বিদেশি ইন্ধনে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র শুরু করে।

বলা চলে, পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সংকট ও বিরাজমান অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চুক্তি ভঙ্গকারী জেএসএসই দায়ী। কারণ সন্তু লারমার জেএসএস এবং শান্তিবাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েও ছাড়েনি সন্ত্রাসবাদ, ছাড়েনি অস্ত্র। যার ফলে পার্বত্য চুক্তির ২৭ বছরে এসেও পাহাড়ে চলছে অস্ত্রের মহড়া, চাঁদাবাজির মহোৎসব, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, গুম, খুন ও অপহরণ। এমনকি আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির দ্বন্দে প্রতিনিয়ত ঘটছে খুনোখুনির ঘটনা।

স্পষ্টতই, চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক থাকলেও জেএসএস সন্ত্রাসবাদ ছেড়ে চুক্তির শর্ত পালনে মোটেও আন্তরিক নয়! জেএসএস কর্তৃক চুক্তির শর্ত ভঙ্গ ও জেএসএস এর অসহযোগিতামূলক আচরণই চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রযাত্রাকে বারংবার বাঁধাগ্রস্ত করছে।

মুক্তমত লেখার দায়ভার লেখকের

আগের পোস্টপার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যৎ স্থবিরতা।
পরের পোস্টপার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও জেএসএস এখনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে তৎপর!

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন