অনন্ত অসীম, পার্বত্য চট্টগ্রাম:
পার্বত্য চট্টগ্রাম জলবায়ু সহিষ্ণু জীবিকা উন্নয়ন ও জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনা সেক্টর প্রকল্প। এই প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কার্যালয় রয়েছে রাঙ্গামাটিতে। তার আওতায় গত ০১/১০/২০২৪ খ্রি : পদায়ন সংক্রান্ত একটি স্মারক নং: Two-20/CRLIWM/-CHT/2024-154 হাতে এসেছে।
এতে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিম্নোক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীগণকে প্রকল্পের স্বার্থে নিম্নোক্ত ছক মোতাবেক পদায়ন করা হল।
জলবায়ু সহিষ্ণু জীবিকা উন্নয়ন ও জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনা সেক্টর প্রকল্প পদায়নকৃত ২৬জনই উপজাতি। এর মধ্যে ভাগ্যক্রমে মাত্র ২ জন মারমা আর বাকী ২৪ জনই চাকমা! এটা কীভাবে সম্ভব? একটা অঞ্চলের ৫০.০৬% বাঙালি জনগোষ্ঠী হওয়ার স্বত্বেও কীভাবে ২৪.৬৮ চাকমা জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ পদায়ন হয় বা নিয়োগকৃত হলেন? এখানে অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর চাকরি, বিভিন্ন সুবিধা গিলে খাচ্ছেন চাকমারা।
স্থানীয় পার্বত্যবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ১২টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। চাকমা নেতাদের আগ্রাসনে নিমজ্জিত ১১টি জনগোষ্ঠীর মানুষ। পাহাড়ে এই ভয়ংকর, বৈষম্য অনিয়ম প্রতিরোধ করার যেন কেউ নেই। একের পর এক বের হয়ে আসছে প্রতিটি সেক্টরে একতরফা চাকমা নিয়োগ ও পদায়নের খবর। ডিসি অফিস, ইউএন অফিস, হাসপাতাল, সোনালি ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও সরকারি আরো অন্যান্য ৩৫ টি দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান আছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের চিত্র আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি ও অন্যান্য উপজাতি জাতিসত্তার প্রতিনিধিরা। সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম যেন চাকমাদের গ্রাসে পরিণত হয়েছে। এ অঞ্চলের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রবেশ করলে মনে হচ্ছে চিন, ভিয়েতনাম বা সিঙ্গাপুরের মত দেশে আছি। চাকমারা গত কয়েক দশক সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পৃথক আলাদা জুম্মল্যান্ড নামক রাষ্ট্র গঠনের জন্য সশস্ত্র আন্দোলন ও বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে। তাদের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে অনগ্রসর জাতির তকমা মেখে উপজাতি কোটা সুবিধা গ্রহণ করে আজ শিক্ষার ক্ষেত্রে ৭৬% যোগ্যতা অর্জন। দেশের মূল জনগোষ্ঠী ৭৩% শিক্ষার হার। সেখানে পাহাড়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে দেশের মূল জনগোষ্ঠী থেকে শিক্ষা ও নানান সুযোগ-সু্বিধায় এগিয়ে থাকার বিষয়টি অদৃশ্য কোন শক্তি কাজ করছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। আরো জানা গেছে, দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থা, এনজিও, মিশনারি সংস্কার পৃষ্ঠপোষকতায় চাকমারা শিক্ষা, চাকরি, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও বিভিন্ন সেক্টরে পাহাড়ে অন্যান্য উপজাতিদের পিছিয়ে ফেলে নিজেদের সর্বক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার প্রতিষ্ঠা করেছে৷
পার্বত্য চট্টগ্রামের রোয়াংছড়ি উপজাতি বাসিন্দা থুলাইপ্রু মারমা বলেন, পাহাড়ে ৬ টি আঞ্চলিক দল আছে। এর মধ্যে ৪টি চাকমাদের! পাহাড়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন-গুম, অরাজকতা, অস্থিতিশীলতা সবই চাকমারা করে থাকে৷ পাহাড়ে মারমা, ত্রিপুরাসহ আরো যে-সব বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী আছে। মানে যারা একদম প্রান্তিক তাদের সকল সুবিধা চাকমারা লুটেপুটে খাচ্ছে। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে অসমতা তৈরি করছে৷ পার্বত্য চট্টগ্রামে সমবণ্টন নীতি প্রয়োগ না করলে চাকমাদের উত্থান থামানো সম্ভব নয়।
স্থানীয় বাঙালি ও অন্যান্য উপজাতি জাতিসত্তা বলছেন, চাকমাদের এই আধিপত্য আর সামনে এগিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। তাদের আগ্রাসন বন্ধ করতে হলে চাকমা নিয়োগ, পদায়ন ও রাজনৈতিক সুযোগ সুবিধা বন্ধ করতে হবে। যে-সব ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা চাকমা প্রীতি দেখান বা বৈষম্যের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এবং তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য সকলকে কঠোর হতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি সরকারি দপ্তর, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, এনজিও, দাতাসংস্থা, ব্যাংক, বিমাসহ প্রত্যেক সেক্টরে একতরফা চাকমা নিয়োগ ও পদায়ন পার্বত্য চট্টগ্রামে চরম বৈষম্য ও অসন্তোষ তৈরি করেছে। এই বৈষম্যের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে দিনদিন চাকমা আধিপত্য বাড়ছে। একইসাথে চাকমা বিদ্বেষী বাড়ছে। চাকমা ব্যতীত অন্যান্য উপজাতিরা একতরফা চাকমা নিয়োগের ফলে নিজেরা অনগ্রসরে পরিণত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভারসাম্য রক্ষার্থে বিষয়টি নিয়ে সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে।
অনন্ত অসীম, পার্বত্য চট্টগ্রাম। ২৩/১২/২০২৪