পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ-ডিসপ্লে প্রদর্শন: রাষ্ট্রের ভিতরে কি আরেকটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা?

0

পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ-ডিসপ্লে প্রদর্শন: রাষ্ট্রের ভিতরে কি আরেকটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা?

অনন্ত অসীম: রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবসগুলোকে স্কুলকলেজ বন্ধ রেখে ছাত্র-ছাত্রীদের শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো, কুচকাওয়াজ-ডিসপ্লে ও সম্মান প্রদর্শন করার নিয়ম আছে। রাষ্ট্রীয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইউএনও, ওসি প্যারেড পরিদর্শন ও ছাত্র-ছাত্রীদের কুচকাওয়াজ-ডিসপ্লে ও সালাম গ্রহণ করেন। কিন্তু একটি স্বাধীন ও এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে প্রশাসনিক অনুমতি ব্যতীত রেখে ইউপিডিএফ আলাদা রাষ্ট্রের মত অস্থায়ী শহিদ মিনার গঠন, প্যারেড পরিদর্শন ও ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে কুচকাওয়াজ-ডিসপ্লে প্রদর্শন করে সালাম গ্রহণ করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলছেন, রাষ্ট্রীয় সংবিধান, আইন, নীতিমালা ব্যতীত রেখে স্কুল বন্ধ করে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের দিয়ে আলাদা পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ-ডিসপ্লে প্রদর্শন এবং প্যারেড পরিদর্শন অতঃপর সালাম গ্রহণ একটি রাষ্ট্রের ভিতরে আরেকটি রাষ্ট্র পরিচালনার প্রশাসনিক আভাস দিয়েছে পাহাড়ের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন।

জানা গেছে, পাহাড়ের সন্ত্রাসবাদ, হানাহানি, জাতিগত ভেদাভেদ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির মূলহোতা ইউপিডিএফ গত বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর ২৬-তম কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করেন। এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ইউপিডিএফ অধ্যুষিত এলাকার সরকারি-বেসরকারি প্রাইমারি ও হাইস্কুলের সপ্তাহব্যাপী পাঠদান বন্ধ করে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের ইউপিডিএফ দলীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ-ডিসপ্লে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণে বাধ্য করেছে।

অভিযোগ উঠেছে, ইউপিডিএফ গত বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি সদর, রামগড়, মানিকছড়ি, দীঘিনালা, রাঙামাটি সদর কতুকছড়ি, কাউখালী, পানছড়ি ও মাটিরাঙা তাইন্দং এলাকার ৭০/৮০ টি বিদ্যালয় বন্ধ করে স্কুলের কোমলমতি শিশু-কিশোদের রোদে দাঁড়িয়ে ইউপিডিএফ এর দলীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ-ডিসপ্লে প্রদর্শন করেছে। ইউপিডিএফ এর রাজনৈতিক শাখা ও সামরিক শাখার নেতাকর্মীরা প্যারেড পরিদর্শন শেষে কুচকাওয়াজ-ডিসপ্লে প্রদর্শনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে সালাম গ্রহণ করেছে।

স্থানীয় অধিবাসী বিন্দু চাকমা বলছেন, ইউপিডিএফ কোমলমতি শিশুদের ব্যবহার বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, ইউএনও, জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রশাসক অবগত রয়েছেন কি? যদি থাকে তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব? আর যদি অবগত না থাকেন তাহলে নাকে তেল দিয়ে ঘুমান। পার্বত্য যাচ্ছে রসাতলে!

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক মহল শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন। পাহাড়ে বারবার স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের ইউপিডিএফ পাঠদান বন্ধ করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ জাহির করতে ব্যবহার করার পরও স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কার্যকারী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে ইউপিডিএফ রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে আদায়ে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।

সচেতন মহল ও স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রদায় মনে করছে, ইউপিডিএফ পাহাড়ে একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য স্বায়ত্তশাসনের দাবির অন্তরালে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গেরিলা লড়াই, কূটনৈতিক লড়াই ও বিভিন্ন গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ছাড়া এককভাবেই ইউপিডিএফ এর দলীয় পতাকা উত্তোলন, প্যারেড পরিদর্শন, কুচকাওয়াজ-ডিসপ্লে আলাদা রাষ্ট্র পরিচালনার শামিল৷ এটি রাষ্ট্র, প্রশাসন ও দায়িত্বশীলদের না বোঝার কারণ কী সেটা বোধগম্য নয়। ইউপিডিএফ এটির মাধ্যমে আমাদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। এটি পরিষ্কার এমন আয়োজন নিঃসন্দেহে একটি রাষ্ট্রের ভিতরে আরেকটি রাষ্ট্র পরিচালনা।

উল্লেখ যে, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ১৯৯৮ সালের ২৬- ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিরোধিতা করে স্বায়ত্তশাসন দাবিতে আত্মপ্রকাশ করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) সন্তু গ্রুপের তৎকালীন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) কেন্দ্রীয় সভাপতি খাগড়াছড়ি সদরের বাসিন্দা প্রসীত বিকাশ খীসা ও রাঙামাটির বাসিন্দা রবি শংকর চাকমার নেতৃত্বে সংগঠনটি ঢাকায় এক প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে।

লেখক: অনন্ত অসীম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক লেখক, গবেষক, বিশ্লেষক ও অভিজ্ঞ।

 

আগের পোস্টপার্বত্য এলাকার ভূমি সমস্যা নিরসনে কাজ চলছে: পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ।
পরের পোস্টমিথ্যা অপবাদ, ট্রল করা পাহাড়ি সমাজে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে!

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন