মিথ্যা অপবাদ, ট্রল করা পাহাড়ি সমাজে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে!

0

প্রসঙ্গ রুনা চাকমা:

অনন্ত অসীম, পার্বত্য চট্টগ্রাম: গত শনিবার ২৮ ডিসেম্বর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু উপজেলার রুনা চাকমা নামে এক উপজাতি নারীর চায়না মেয়ের পরিচয়ে গোপালগঞ্জে বাঙালি কিশোরকে বিবাহের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে রুনা চাকমা নিজেকে চায়না মেয়ে পরিচয় দিয়েছেন। Bappy নামে একটি ফেইসবুক পেইজ ‘প্রেমের টানে চায়না থেকে এখন বাংলাদেশে’ পোস্ট করার পর এইটি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের উগ্র একটি অংশ রুনা চাকমার চরিত্রহরণ করার পাশাপাশি বাঙালি ছেলেকে বিয়ে করার কারণে হুমকি, গালমন্দ ও তার সামাজিক অবস্থানকে হেয় প্রতিপন্ন করে। এমনকি তাকে বিভিন্নভাবে অপদস্থ করেন। যা একজন মেয়ের জীবনকে দুর্ষিহ করে তোলে। ভিডিওটি ভাইরাল হবার পর রুনা চাকমা ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, এটি একটি নাটকের ভিডিও, এটি করার জন্য সে দুঃখিত। তারপরও তাকে ছাড়েনি উগ্রবাদীরা। ভিডিও কে ঘিরে ট্রল ও অপপ্রচার এখনো চলমান রয়েছে। জানা গেছে, এক বাঙালি বান্ধবীর কথা মত তিনি একটি ভিডিও কনটেন্টের শুটিং ভিডিও করেন। এই ভিডিওতে তাকে চায়না মেয়ে চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় এবং ১৭ বছরের এক বাঙালি কিশোরকে ফেসবুক পরিচয়ের সূত্র ধরে বিয়ে করতে দেখা গেছে। বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি স্বজাতি সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীরা।

কান্নারত রুনা চাকমা

রুনা চাকমা চায়না মেয়ে পরিচয়, বাঙালি বিয়ে ও ট্রল প্রসঙ্গ নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলার বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী নিকোলাস চাকমা ফেসবুক একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

“ফেইসবুকে একটা স্ক্রিপ্ট  ভিডিও ভাইরাল নিয়ে যথেষ্ট  ট্রল হয়। একটা মেয়ের জীবন কত করুণ হতে পারে  রুনার জীবন না দেখলে বুঝা যাবেনা। রুনা অত্যন্ত সহজ সরল। যেহেতু ভাইরাল হয়েছে সেহেতু বাহ্যিকভাবে ট্রল করতে পারি স্বাভাবিক কেননা তার অভাবী, সংগ্রীম জীবন আমরা জানিনা।  পারিবারিক অভাবের কারণে রুনা খুব একটা পড়াশোনা করতে পারেনি।অন্যান্যদের মত পরিবারের অভাব মোচন করতে ও নিজের পায়ে দাড়ানোর জন্য সম্ভবত ২০০০ সালের দিকে চট্টগ্রাম যায় এবং ইপিজেডে গার্মেন্টস চাকরি শুরু করে। দীর্ঘ কয়েক বছর চাকরি করে পানছড়ি পূজগাং যুগেগ্বর পাড়া থেকে সুমন্ত চাকমার  সাথে সম্পর্ক হয় কিন্তু রুনার মা বাবা সে সম্পর্কে মানেনি কেননা সুমন্তকে তারা খুব একটা চিনে না জানেনা।  প্রতিটা মেয়ের মা বাবা চায় মেয়েটিকে ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দিতে কিন্তু তাদের সম্পর্ক যেহেতু গভীর তাই পরিবারের অমতে ২০০৩ সালে চট্টগ্রামে তাদের বিয়ে হয় এবং ফুটফুটে একটা ছেলের জন্ম হয়। ছেলেটি সম্ভবত আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে।  দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তাদের সংসার খুব ভালো চলছিল। কিন্তু সুমন্ত চাকমা গোপনে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে যায়। নিজের বউ বাচ্চা রেখে অন্য মেয়ের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে এবং রুনাকে শারীরিক ও মানসিক টর্চারিং করে। বেশ কয়েকবার পারিবারিকভাবে চাপ দেওয়া হয় ও মিটমাট করা হয় কিন্তু সুমন্ত পরবর্তীতে আবারো তার স্ত্রী রুনাকে টর্চারিং করে মারধর করে।

অন্যদিকে রুনা চাকমা অসহায়। পরিবার থেকে খুব একটা আর্থিক সাপোর্ট ও পায়না কেননা মধ্যবিত্ত পরিবারের সংসার। চট্টগ্রাম ইপিজেডে গার্মেন্টসে চাকরি করে ছেলেকে মানুষ করবে কিন্তু সেটা আর হলোনা। পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে তাদের সুখের সংসার সুমন্ত একেবারে তচনছ করে দেয়। রুনা চাকমা অসহায় তার স্বামীকে ফেরানোর মত সাহস ছিলনা তার পক্ষে কেউ দাড়াবে এমন লোকও তার নেই। অনেক কষ্টে জীবন অতিবাহিত করে। পরবর্তীতে আঞ্চলিক সংগঠন  ইউপিডিএফের কাছে বিচার দেয়।

ইউপিডিএফের লোকেরা তার যথার্থ বিচার করে দেয়।এবং আবারো তাদের সংসার চলতে শুরু করে। যদিও অল্প বেতনে রুনা চাকরি করত তথাপি তার স্বামী ও ছেলেকে পারিবারিক খরচ দেয়। এভাবে প্রায় ৩ মাস তাদের সংসার চলে কিন্তু ঐই যে কয়লা ধুয়লে ময়লা যায়না, সুমন্ত চাকমা গোপন পীড়া পরকীয়াটা যায়নি। রুনাকে একা পেলে আবারো গোপনে কুমিল্লায়  পালিয়ে যায়। রুনা এখন কি করবে আবারো অসহায় হয়ে পড়ে। সুমন্ত ফোন নাম্বার বন্ধ। পানছড়ি যুগেশ্বর পাড়ায় তার মা বাবাদের সাথে যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। শত চেষ্টা করেও তাকে আর ফেরাতে পারেনি। ফলে রুনা কষ্টে একাকী অসহায় জীবন চলে।

পরবর্তীতে রুনা নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে ঢাকায় চলে যায়। বর্তমানে ঢাকা আশুলিয়ায় বায়িং হাউজে চাকরি করছে তার জীবনকে সাজানোর চেষ্টা করছে।  গতকাল একটা স্ক্রিপ্ট ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তার সাথে যোগাযোগ করি। মুলত সুমাইয়া নামক এক বান্ধবি তাকে নিয়ে যায়। ফেইসবুক ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য ভিডিও ধারন করে। রুনা মেয়েটি খুবই সহজ সরল সে খুব একটা বুঝে উঠতে পারেনা।তার বান্ধবীটি যেভাবে বলে সেভাবে সে ভিডিও করে। ভিডিওর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। সে কখনো চায়নায় যায়নি এবং বেজাতি কাউকে সে বিয়ে করেনি।

আমাদের সমাজে অনেক মেয়ে আছে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করে। রুনাও তেমন একটি মেয়ে যদিও কম বুঝে অত্যন্ত  সহজ সরল।কিন্তু সে থেমে থাকেনি  লাইফে struggle করে নিজেকে টিকে রাখার চেষ্টা করছে। এমন মেয়েদের সকলে সাপোর্ট করা দরকার।

মতামতঃ আপনারা ট্রল করছেন আশা করি রুনার জন্য Justice চাইতে পারবেন। সুমন্ত চাকমা গ্রামঃ জুগেশ্বর পাড়া, পুজগাং, পানছড়ি দেশের যে প্রান্তে থাকুক একটি মেয়ের জীবন নষ্ট করে দেওয়ার অপরাধে যেখান থেকে হোক তাকে ধরে  আবারো জুম্ম বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো হোক।

নিকোলাস চাকমার বর্ণনা অনুযায়ী রুনা চাকমা সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং একজন সহজসরল মেয়ে। বাঙালিদের সঙ্গে বিয়ের নাটকও কন্টেন্ট ভিডিও করার জন্য একমাত্র দায়ী তার স্বামী। স্বামীর পরকীয়া, নির্যাতন ও অত্যাচারে ঢাকা পাড়ি জমান গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে। শুধুমাত্র জীবিকার তাগিদে একটি কন্টেন্ট ভিডিও নাকটের কয়েক মিনিটের ভিডিও করেন চায়না মেয়ে চরিত্রে এবং বাঙালি ছেলেকে বিয়ে করে এমন চরিত্রে। একজন নারীর কী এটা অপরাধ? একজন নারীর কী স্বাধীনতা নেই? সে কার সঙ্গে কী করবে তা কী পারমিশন নিতে হবে? তার এই পথে ধাবিত হওয়ার পেছনে কী পুরুষ, সংগঠন ও সমাজের দায়বদ্ধতা নেই?

উগ্র ও সাম্প্রদায়িকতা থেকে পাহাড়ি আঞ্চলিক দল ও সমাজ ব্যবস্থা কবে মুক্ত হবে? শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক ও হিংস্র মনোভাব থেকে একজন নারীর জীবনকে হুমকির সম্মুখীন করা সভ্য জাতির কাজ হতে পারে না। তিল কে তাল বানানো পাহাড়ি সন্ত্রাসী ও উগ্র যুবকদের কাজ। তারা একজন নারীকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। যা আইনের চোখে অন্যায় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিলও বটে।

রুনা চাকমার কনটেন্ট ভিডিও কে ট্রল করে তাকে এমনভাবে হেয় প্রতিপন্ন ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে, যার কারণে সে এখন হতাশাগ্রস্ত ও একজন নারী হিসেবে বেচে থাকা তার পক্ষে চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাকে নিয়ে যারা গুজব রটিয়েছে তাদের অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য এবং তারা কী রুনা চাকমাকে ক্ষতিপূরণ দিবে?

মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন, আইনজীবী হেলাল রশিদ বলেন, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রুনা চাকমাকে নিয়ে ট্রল করেছে এবং সত্য মিথ্যা যাচাই-বাছাই করেনি তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। এভাবে অপরাধীদের ছেড়ে দিলে ভবিষ্যৎ পাহাড়ি মেয়েরা স্বজাতি কর্তৃক আরো নির্যাতিত হবে। তাই নারী নির্যাতন রোধে আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেটা হোক সমতলে কিংবা পাহাড়ে।

Bappy পেইজ পোস্ট লিংক: https://www.facebook.com/bappyorg.official/videos/1251355742824755/?app=fbl

অপপ্রচার ট্রল কারী কয়েক শতাধিক আইডির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বলপিয়ে আভা, যার পোস্ট লিংক- https://www.facebook.com/reel/948184106784024/?app=fbl

প্রকৃত সত্য উন্মোচনে নিকোলাস চাকমার পোস্ট লিংক: https://www.facebook.com/100002962681879/posts/pfbid037rnmYW2w7GsCJSpCnnr5EbroY7wQLSwQhxfqAexVFSvi8psvnnJZfT5XwNurnaABl/?app=fbl

সূত্ররেফারেন্স
আগের পোস্টপতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ-ডিসপ্লে প্রদর্শন: রাষ্ট্রের ভিতরে কি আরেকটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা?
পরের পোস্টবান্দরবানের রুমায় সেনাবাহিনী কর্তৃক শীতবস্ত্র ও মানবিক সহায়তা প্রদান।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন