অনন্ত অসীম: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নে এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় এনজিওগুলো প্রধান অন্তরায়। এনজিওগুলো বাঙালি তথা সরকার ও উপজাতি জনগোষ্ঠীর মাঝে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি করছে। আঞ্চলিক দলগুলোকে উসকানি দিয়ে পাহাড়ে ধর্মীয় বিভেদ, জাতিগত বিভেদ, হানাহানি ও সংঘাত সৃষ্টি করছে। পাহাড়ে প্রতিটি ঘটনার সাথে এনজিওগুলো কোন না কোনো ভাবে সম্পৃক্ত। স্থানীয় অধিবাসীরা বরাবরই পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্তির পেছনে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাধা হিসেবে এনজিও’র ভূমিকাকে দায়ী করে আসছেন।
স্থানীয় বাঙালি ও সচেতন উপজাতিরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এনজিওগুলো এখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ধর্ম নিয়ে তামাশা করছে। যে-সব উপজাতি সংগঠন অভিযোগ করে বলেন পাহাড়ে ইসলামীকরণ চলছে তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে – গত আগস্ট ২০১৭ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে গির্জার সংখ্যা ছিল ৩৬৫ টি, তা ২০২০ সালের আগস্টের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭১৪টিতে। এই পরিসংখ্যান থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিষ্টধর্মের প্রভাব দিনদিন বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এভাবে চলতে থাকলে হয়তো আগামী ২০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগ মানুষ খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী হবে। সুতরাং পাহাড়ে ইসলামীকরণ নয় বরং খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত চলছে বলা যায়। বৌদ্ধ, হিন্দু সম্প্রদায় খ্রিষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরণ নিয়ে উপজাতি সংগঠনগুলো মুখে কুলুপ এঁটেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সহিংস কবলিত এলাকা। এখানে উপজাতি বিভিন্ন জাতিসত্তার বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী বসবাস করে। যারা জনসংখ্যা অনুপাতে ১% থেকে কম। এভাবে ধর্মান্তরিত ঘটনা উদ্বেগজনক। নিরাপত্তার সামগ্রিক অর্থে পাহাড়ে এনজিও কার্যক্রমকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।
ইভাঞ্জেলিক্যাল বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) হল এক ধরনের খ্রিষ্টান মিশন যা অন্যদের সাথে সুসমাচার শেয়ার করে।ধর্মপ্রচারে জড়িত বিশ্বাস-ভিত্তিক এনজিও এবং সংস্থাগুলির কিছু উদাহরণের মধ্যে রয়েছে:
ইভাঞ্জেলিক্যাল পার্টনারস ইন্টারন্যাশনাল। একটি সংগঠন যা ঈশ্বরের সাথে অংশীদারিত্ব করে তাদের কাছে সুসমাচার ছড়িয়ে দিতে যারা এখনও এটি গ্রহণ করেনি। এটি সম্পর্কে আরো জানা যায়, ইভানজেলিকাল শব্দটি মূলত কথিত খ্রিষ্টীয় ঐতিহ্যের একটি অংশকে বোঝায় যা বাইবেলের শিক্ষা ও প্রচারকে কেন্দ্র করে। এটি সাধারণত একটি ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে দেখা হয় যা মানুষকে অন্যান্য ধর্ম থেকে কনভার্ট করে খ্রিষ্টান ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আকর্ষিত করে। ইভানজেলিকাল বিশ্বাসীরা তাদের বিশ্বাসের বিভিন্ন দিককে প্রচার করে এবং অঙ্গীভূত হয়ে সমাজের মধ্যে ধর্মীয়তা নিয়ে আসে। তাদের কর্মসূচি প্রায়ই বাইবেলের প্রচার এবং এনজিও’র মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত। এনজিও সৃষ্টি ও পরিচালনা করেন ইভাঞ্জেলিক্যাল পার্টনারস ইন্টারন্যাশনাল। এটি দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করে অভ্যন্তরে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয় গঠন করে। বিভিন্ন এনজিও কে পৃষ্ঠপোষকতা করে তার অন্তরালে ধর্ম প্রচারে কাজ করে।
ইভাঞ্জেলিস্টিক একটি কথিত বিশ্বাস-ভিত্তিক সংস্থা যা সিয়েরা লিওনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে সরাসরি কাজ করে। মন্ত্রণালয় শিক্ষা, শিশু যত্ন, আশ্রয়, চিকিৎসা যত্ন, এবং খাওয়ানো প্রোগ্রাম প্রদান করে। ইভাঞ্জেলিস্টিক একটি ফাউন্ডেশন হয়ে সারা বিশ্বের কয়েক শতাধিক এনজিও’র মাধ্যমে কাজ করে। তারা প্রথম শুরু করে বাইবেল প্রকল্প। এটি একটি অলাভজনক সংস্থা যা মানুষকে বাইবেল বুঝতে এবং এর সাথে জড়িত হতে সাহায্য করার জন্য অ্যানিমেটেড ভিডিও এবং শিক্ষামূলক সংস্থান তৈরি করে৷ সুসমাচার প্রচারের জন্য কিছু টিপস অন্তর্ভুক্ত: আপনার সাক্ষ্য শেয়ার করা, একজন ভাল শ্রোতা হওয়া, সমস্ত উত্তর পাওয়ার ভান না করা, প্রার্থনা করা এবং বাইরে যাওয়া এবং আপনার বিশ্বাস শেয়ার করা।
পাহাড়ে এনজিও কার্যক্রমের আড়ালে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ তৈরি ও খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচার এবং মানুষদের সেবা ও ঋণের নামে অতিরিক্ত সুদ গ্রহণের মাধ্যমে দারিদ্র্যসীমা নিচে পরিণত করেছে এনজিও। এসব এনজিওগুলোর কার্যক্রমে তদারকি নেই। এনজিওগুলো যে পাহাড়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে? এদের অর্থের উৎস কী? জনবলের বেতন-ভাতা কীভাবে পূরণ করে? কিন্তু এত এতো প্রকল্প পরিচালনা কীভাবে তারা করে? আয় কত আর ব্যয় কত? একটি অঞ্চলকে ঘিরে কোন স্বার্থে তাদের এই বিপুল ব্যয়? কয়েক হাজার মাইল দূরে থেকে কেন তারা বাংলাদেশ তথা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বেছে নিলো? এমন সব প্রশ্ন পার্বত্য চট্টগ্রামের এনজিও কার্যক্রম নিয়ে। পাহাড়ে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বিভিন্নভাবে বাধা প্রদান করে আসছে। এনজিওগুলোর কার্যক্রমের কোনো জবাবদিহিতা নেই। এসব এনজিও পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র মেতে আছে। মাঠ প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থারগুলোর উদাসীনতার কারণে তারা এখানে অপতৎপরতা পরিচালনা করার সুযোগ পাচ্ছে। এনজিও সংস্থাগুলোকে দাতাসংস্থা, মিশনারি কেন বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়। এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে এনজিও ও দাতাসংস্থার হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান সত্যি উদ্বেগজনক। স্থানীয়রা বলছেন, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইউএনডিপি পাহাড়ে হাজার কোটি টাকা পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এসব টাকা ঠিক কী কাজে ব্যয় করেন এবং কেনই বা এত বরাদ্দ দেন তা নিয়ে প্রশাসনের তদারকি নেই।
পার্বত্য চট্টগ্রামে যে-সব এনজিও-আইএনজিও, দাতাসংস্থা বাঙালি ও সেনাবাহিনী সম্পর্কে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর হতদরিদ্র সহজসরল মানুষদের বিদ্বেষমূলক মনোভাব পোষণে কাজ করছে, ইতোমধ্যে তাদের নামের তালিকা পাওয়া গেছে। কারিতাস, ওয়ার্ল্ড ভিশন, তহজিংডং, সিসিডিবি, গ্রাউস (গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন), হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন, কমিউনিটি অ্যডভান্সমেন্ট ফোরাম, সনে ইন্টারন্যাশনাল, কমিউনিটি অ্যাডভান্সমেন্ট ফোরাম, ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ওফ বাংলাদেশ, ব্র্যাক, আশা, পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, প্রত্যাশী, টিএমএসএস ও লিন প্রকল্প এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এ সকল এনজিও পার্বত্য চট্টগ্রামের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আর্থিক প্রলোভন বা ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে তাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি এবং স্বকীয়তা বিসর্জনের মাধ্যমে এই ধর্মান্তকরণের কার্যক্রম হরহামেশাই পরিচালিত করে আসছে। বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ির চাক উপজাতির অনেকেই খ্রিষ্টান হয়ে গেছে এনজিও খপ্পরে পরে।
কারিতাস বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ভিশন নিয়ে যখন সমালোচনা শুরু হয় তখন সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে দেয় কিছুদিন বন্ধ থাকার পর কারিতাস বাংলাদেশ এখনও বান্দরবান প্রায় উপজেলায় কাজ করেন। জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের অবহেলিত, সুবিধা বঞ্চিত ও অপুষ্টিকর জনগোষ্ঠীদের স্বাস্থ্য সেবাদান ও জনজীবন এর মান্নোয়নের নামে বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে বাস্তবায়নকারী বেসরকারি সংস্থা কারিতাস কর্তৃক লিন প্রকল্পের আওতায় নিউট্রিশন বিষয়ে রোয়াংছড়ি, তারাছা, আলোক্ষ্যং ও নোয়াপতং সহ ৪টি ইউনিয়নে কাজের আড়ালে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছেন। ওয়ার্ল্ড ভিশন ইন্টারন্যাশনাল হল একটি বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টান মানবিক সাহায্য , উন্নয়ন , এবং অ্যাডভোকেসি সংস্থা। ওয়ার্ল্ড ভিশনের স্পনসর এ চাইল্ড -টাইপ তহবিল সংগ্রহের কিছু দাতা রিপোর্ট করেছেন যে গোষ্ঠীর দ্বারা ব্যক্তি-নির্দিষ্ট প্রকল্পের পরিবর্তে সম্প্রদায়ের জন্য এই ধরনের তহবিল ব্যবহারের দ্বারা তারা সমালোচিত। ওয়ার্ল্ড ভিশন চট্টগ্রামে ও কক্সবাজার থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং অন্যান্য এনজিওগুলোর সঙ্গে সমন্বয় রেখে পাহাড়ে কল্পিত মিশন পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে। তবে তাদের বান্দরবানে এখনও কার্যক্রম রয়েছে। জেলা প্রশাসকের ২১ জুলাই ২০২৩ এর মাসিক সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে।
তহজিংডং, বান্দরবান জেলার ৭টি উপজেলায় এর কার্যক্রম চলমান বলে জানা গেছে। দুর্গম থানচিকে ঘিরে তার কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি।
সোনে ইন্টারন্যাশনাল ও কথোওয়াইন যৌথভাবে আলিকদমে কাজ করেন। ২০২৩ সালে আলিকদমের জন্য ৪২৯০ জনের জন্য বরাদ্দ করে, ৮৯,০৪,৯৩২/-
ব্র্যাক পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের ৫টি প্রকল্প চলমান।
এগুলো হলো:
জিআরইএসপি প্রকল্প, এসএসএসিটিএন প্রকল্প, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া কর্মসূচি প্রকল্প, মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি প্রকল্প ও ব্ল্যাক শিক্ষা কর্মসূচি প্রকল্প। এসব প্রকল্পের লক্ষ্য উদ্দেশ্য যা বলা হয়েছে তার আড়ালে তারা ইসলাম বিরোধী কাজ করেন, মুসলিম নারীদের ঘর থেকে বের করেন এবং উপজাতিদের বাঙালি বিদ্বেষী করে তোলেন। ঋণ বিতরণে অনিয়ম, বৈষম্য ও সুদ অতিরিক্ত আদায় করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি বাঙালি সমানে সমান। অনেক এলাকায় বাঙালি বেশি কিন্তু তাদের কর্মী নিয়োগে শতভাগ উপজাতি বা ৯০% উপজাতি নিয়োগ প্রদান করা হয়। যা বৈষম্যের শামিল। জেলা প্রশাসনকে তারা যে মাসিক রিপোর্ট প্রদান করে সেখানে পরিপূর্ণ তথ্য ও কার্যবিবরণী দেওয়া হয় না। তাদের অনেক অদৃশ্য কার্যক্রম রয়েছে।
আইডিএফ ও আশা তারা বিভিন্ন অজুহাতে অনেক সময় মাসিক রিপোর্ট প্রদান করে না। তাদের কার্যক্রম নিয়েও ব্যাপক অভিযোগ আছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে এই রকম প্রকাশ্য ও গোপনে অনেক এনজিও কার্যক্রম চলমান। তারা পরিপূর্ণ মনিটরিং বা তদারকির অভাবে নিজেদের খেয়াল খুশি মত কার্যক্রম পরিচালনা করে। জেলা প্রশাসক এসব এনজিও দেখার কথা থাকলেও দায়সারা মাসিক প্রতিবেদন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকেন।
বেসরকারি সংস্থাগুলি (এনজিও) সামাজিক পরিবর্তনের প্রচারে, মানবিক সমস্যা সমাধানের নামে এবং বিশ্বজুড়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথিত অধিকারের পক্ষে ওকালতি করার জন্য বিশেষ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। পাহাড়ে দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীকে ঋণ প্রদান ও বিভিন্ন জনহিতকর সেবা প্রদান এনজিওগুলি আজকের সমাজে রূপান্তরের প্রভাবশালী এজেন্ট হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। আমার ব্লগার জীবনের এই ব্লগটি এনজিওগুলি মানুষদের আকৃষ্ট করার কারণগুলো এবং তাদের তৎপরতা নিয়ে আলোচনা করবো।
এনজিও:
এনজিওগুলি, তাদের নাম অনুসারে, এমন সংস্থাগুলি যেগুলি সরকারের অংশ নয় কিন্তু সামাজিক এবং মানবিক কারণগুলিকে এগিয়ে নেওয়ার নাম করে মানুষকে ঋণ প্রদান করে অতিরিক্ত সুদ আদায় করে ঋণগ্রস্ত করার মাধ্যমে খ্রিষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত করার জন্য প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে৷ তারা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ, মানবাধিকার, দুর্যোগ ত্রাণ, দারিদ্র্য বিমোচন এবং আরও অনেক কিছু সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে। ইভাঞ্জেলিক্যাল এর আওতায় এনজিওগুলি প্রায়ই তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে, সুবিধাবঞ্চিতদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য প্রকল্পগুলির পক্ষে ও বাস্তবায়ন করে।
দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করতে এনজিওর মূল কার্যক্রম:
১। মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ত্রাণ:
এনজিওগুলি প্রায়শই দুর্যোগ এবং মানবিক সংকটের সময় তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রভাগে থাকে। ভূমিকম্প, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগই হোক বা মানবসৃষ্ট দ্বন্দ্ব এবং উদ্বাস্তু সংকটের মতোই হোক না কেন, এনজিওগুলো খাদ্য, পানি, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সহায়তা সহ জরুরি ত্রাণ দিয়ে দ্রুত সাড়া দেয়। রেড ক্রস, ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস এবং অক্সফামের মতো সংস্থাগুলি এই ধরনের পরিস্থিতিতে অসংখ্য জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাদের এই সেবা আমাদেরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে।
২। শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন:
শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার, এবং এনজিওগুলি এটিকে সকলের কাছে অ্যাক্সেসযোগ্য করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে জ্ঞান ও দক্ষতায় ক্ষমতায়নের জন্য তারা স্কুল, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং বৃত্তি কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা করে। টিচ ফর অল এবং রুম টু রিডের মতো এনজিওগুলি অনুন্নত এলাকার শিশুদের মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান, শিক্ষার ব্যবধান পূরণ এবং পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষমতায়নের উপর ফোকাস করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প পাড়া কেন্দ্র স্কুল এবং মুরং স্কুল ও ছাত্রাবাস তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে।
৩। স্বাস্থ্যসেবা এবং জনস্বাস্থ্য উদ্যোগ:
এনজিওগুলি স্বাস্থ্যসেবার সাথে গভীরভাবে জড়িত, বিশেষ করে এমন অঞ্চলে যেখানে চিকিৎসা সুবিধা সীমিত রয়েছে। তাকে তারা চিহ্নিত করে। তারা এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা এবং আরও অনেক কিছুর মতো রোগকে লক্ষ্য করে ক্লিনিক, স্বাস্থ্য শিবির এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালায়। Partners in Health and Médecins Sans Frontières (Doctors Without Borders) এর মতো সংস্থাগুলির প্রচেষ্টা মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই এবং বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের প্রচারে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এসব করে পাহাড়ের ভিতরে উপজাতিদের ঘরে ঘরে প্রবেশ করে নারীদের মন জয় করে তাদের খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত করে।
৪। পরিবেশ সংরক্ষণ:
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের সাথে, এনজিওগুলি সক্রিয়ভাবে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় নিযুক্ত রয়েছে। পুনর্বনায়ন প্রকল্প থেকে বন্যপ্রাণী সুরক্ষা উদ্যোগ পর্যন্ত, এই সংস্থাগুলি গ্রহের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং টেকসই অনুশীলনগুলিকে উন্নীত করার চেষ্টা করে৷ গ্রিনপিস এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড (WWF) এর মতো বিশিষ্ট এনজিওগুলি পরিবেশ সুরক্ষা এবং সংরক্ষণের পক্ষে সমর্থন করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। তাই এনজিও প্রভাব এখান বিরাজমান।
৫. নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ সমতা:
লিঙ্গ সমতা প্রচার করা এবং নারীর ক্ষমতায়ন অনেক এনজিওর জন্য ফোকাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। তারা লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্য দূর করতে, অর্থনৈতিক সুযোগ প্রদান করতে এবং সমাজে যেখানে তারা উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় সেখানে নারীর অধিকারের পক্ষে কাজ করে। কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল এবং উইমেন ফর উইমেন ইন্টারন্যাশনালের মতো এনজিওগুলি মহিলাদের জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং কথিত ন্যায়সংগত বিশ্ব তৈরির দিকে কাজ করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য সেক্স সম্পর্কে কিশোরী মেয়েদের জানানো, এবং সেক্স অপরাধ নয় সে ধারণা গিলানো, এবং মুসলিম নারীদের ঘর থেকে বের করা ও পুরুষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার নামে বেহায়াপনা করা।
৬। দারিদ্র্য বিমোচন এবং টেকসই উন্নয়ন:
দারিদ্র্য মোকাবেলাকে এনজিওগুলো অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে প্রচার করে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে, তারা দারিদ্র্যের মূল কারণগুলিকে মোকাবেলা করে এবং প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং আয়-উৎপাদনের সুযোগগুলির অ্যাক্সেস প্রদান করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কবজা করার লক্ষ্য। অক্সফাম এবং ব্র্যাক, আশা, পদক্ষেপ, প্রত্যাশার মতো সংস্থাগুলি টেকসই উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য নিরসনে নামে ঋণ প্রদান করে অতিরিক্ত সুদ গ্রহণ করে। তারা সারাদেশের ন্যায় পাহাড়েও মানুষদের শোষণ করে।
এনজিও কে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও সরকার কেন গ্রহণ করে?
১। সার্ভিস ডেলিভারিতে শূন্যস্থান পূরণ করা
অনেক অঞ্চলে, সমস্ত নাগরিককে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়ার জন্য সরকারগুলির সংস্থান বা ক্ষমতার অভাব থাকতে পারে। এনজিওগুলি এই শূন্যস্থানগুলি পূরণ করতে পদক্ষেপ নেয়, এটি নিশ্চিত করে যে প্রত্যন্ত এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকায়ও গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ করা হয়। তাদের আছে বিশাল অর্থ ভাণ্ডার। যা তারা খেয়াল খুশি মত ব্যবহার করে এবং উদ্দেশ্য আদায় করতে সামর্থ্য হয়।
২। অ্যাডভোকেসি এবং সচেতনতা:
এনজিও মানবাধিকার, পরিবেশ সুরক্ষা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য শক্তিশালী উকিল বলে এটা ফেরি করে। তারা চাপের বিষয় সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায় এবং জনসমর্থন জোগাড় করে, সরকার ও কর্পোরেশনের উপর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
৩। উদ্ভাবনী সমাধান:
এনজিওগুলো প্রায়ই জটিল সামাজিক সমস্যা মোকাবেলায় উদ্ভাবনী পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। তাদের নমনীয়তা এবং অভিযোজন যোগ্যতা তাদের নতুন ধারণা এবং প্রোগ্রামগুলি পাইলট করতে সক্ষম করে যা পরবর্তীতে বিস্তৃত প্রভাবের জন্য স্কেল করা যেতে পারে।
৪। তৃণমূল সংযোগ:
এনজিওগুলি সাধারণত স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে, তাদের চাহিদা বুঝে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের জড়িত করে। এই বটম-আপ পদ্ধতি নিশ্চিত করে যে হস্তক্ষেপগুলি তাদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতি নেতৃত্ব শ্রেণিকে আকৃষ্ট করে।
দেশে মোট ২৬৩৮টি এনজিও আছে।
বর্তমানে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর অধীনে বৈদেশিক অনুদানে পরিচালিত নিবন্ধিত এনজিও এর সংখ্যা মোট দুই হাজার ৫৫৪টি। তন্মধ্যে দেশি এনজিওর সংখ্যা দুই হাজার ২৮৯টি ও বিদেশি এনজিওর সংখ্যা ২৬৫টি।
বিদেশি এনজিওগুলোকে এনজিওদের জন্য অনুসরণীয় বিদ্যমান ‘বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন, ২০১৬’ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর জারিকৃত পরিপত্রের আলোকে সরকারের সংশ্লিষ্ট সবার কাছে প্রতিবেদন দিতে হয়। সে অনুযায়ী বিদেশি এনজিওগুলো সবাই নিয়মিত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও তা দিচ্ছে না। আর দিলেও যথার্থ নয়।
এসব এনজিও সারাদেশের চেয়ে দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ টার্গেট করে কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিষয়টি রহস্যজনক এবং উদ্বেগের। এর আগে দেশের উত্তর অঞ্চল ও দক্ষিণ অঞ্চল কাজ করলেও এখন তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয়।
এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতা ও বৈষম্যের অভিযোগও আছে। একটি গোষ্ঠীর উন্নয়নে ভূমিকা রেখে অন্য জনগোষ্ঠীকে পাহাড়ে পিছিয়ে রাখতে বিশেষ পরিকল্পনা মোতাবেক তাদের পাহাড় থেকে বের করতে নানান অপতৎপরতা লিপ্ত রয়েছে। পার্বত্য বাঙালি জনগোষ্ঠী বারবার পার্বত্য চট্টগ্রামের এনজিও কার্যক্রম তদারকি করাসহ কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রশাসনের উদাসীনতা ও কিছু কর্মকর্তার কাণ্ডজ্ঞানহীন ভূমিকায় এখানে এনজিওগুলো কথিত সাহায্য সেবা ও ঋণ বিতরণের আড়ালে বিচ্ছিন্নতাবাদ তৈরি করে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গঠন ষড়যন্ত্র করে আসছে।
স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগ পাহাড়ে যত্রতত্র এনজিও খোলে বসেন। এসব এনজিও পাহাড়ের শান্তির পথে বড় বাধা হিসেবে কাজ করে। তারা পাহাড়ি বাঙালি সংঘাত লাগাতে আগুনে ঘি ঢালেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে গত তিন শতক এনজিও তৎপরতা এখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী হাজার হাজার মানুষদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করেছেন। ঋণের ফাঁদে পেলে মানুষদের জিম্মি করে রেখেছে। পার্বত্য খাগড়াছড়ি, রাঙামাটির চেয়ে বান্দরবানে তাদের ধর্মপ্রচার কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি। এখানকার উপজাতিদের অনেক মানুষ এনজিও, মিশনারি খপ্পরে পড়ে বৌদ্ধ ও প্রকৃতির ধর্ম ছেড়ে খ্রিষ্ট ধর্মে কনভার্ট হয়ে গেছে। যে-সব এনজিও অতিরিক্ত সুদ গ্রহণ করে, খ্রিষ্টধর্ম প্রচারে কাজ করে এবং পাহাড়কে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে রাখতে চায় তাদের নিবন্ধন এনজিও ব্যুরো বাতিল করা উচিত, একইসাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে এনজিও কার্যক্রম তদারকির মাধ্যমে তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন এখানকার বাসিন্দারা।