বাঙালিকে জেএসএস সমর্থিত জনপ্রতিনিধি কর্তৃক ১০০ বেত্রাঘাত!

0

আশীষ বড়ুয়া, বাঘাইছড়ি:

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় এক বাঙালি ব্যবসায়ীকে বেধড়ক মারধর করেছেন স্থানীয় উপজাতি ইউপি চেয়ারম্যান।

জানা গেছে গত শনিবার (১১ জানুয়ারি ২০২৫) ৩১ নং খেদারমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্টু চাকমা ও তার সহযোগী মোহন বাঙালি ব্যবসায়ীকে ১০০টি বেত্রাঘাত করেন। ঘটনার পর থেকে এলাকা জুড়ে তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

মারধরের শিকার বাঙালি হলেন, দুরছড়ির হারুন সওদাগরের পুত্র শহীদুল ইসলাম। তিনি দুরছড়ি বাজারের একজন ব্যবসায়ী।

স্থানীয়রা জানান, বিল্টু চাকমা ইউপি নির্বাচনে আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) সন্তু গ্রুপ থেকে সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হন। তিনি জেএসএস এর প্রভাবশালী নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত। বিগত কয়েক বছর ধরে এলাকায় চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন-গুমসহ যাবতীয় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তার নেতৃত্বে হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএনপির নেতা হিসেবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন। বিচারের নামে বাঙালিদের ওপর নির্যাতন বাড়িয়ে দেন। কিছু সুবিধাবাদী বাঙালিকে হাত করে বাঙালিদের ক্ষতিসাধন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। একজন উগ্র সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি হিসেবে সবসময় নিজ স্বজাতির পক্ষাবলম্বন করেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঠুনকো অজুহাতে বিচারের নামে সালিশ বসিয়ে চেয়ারম্যান বিল্টু শহীদুল ইসলামের শরীরের বিভিন্ন অংশে ১০০টি বেত্রাঘাত করে। শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করা হয়েছে। বেত্রাঘাত জখম হয়ে গেছে। বর্তমানে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়াই শহীদুল ইসলাম বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ছবি: বিল্টু চাকমা চেয়ারম্যান খেদারমারা

চেয়ারম্যান বিল্টু সম্পর্কে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সুমন নামে এক বাঙালি থেকে এর আগে ৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে ২ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন।

স্থানীয় বাঙালিরা বলছেন, বিল্টু মূলত জেএসএস এর সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখাশোনা করে এবং চাঁদা উত্তোলনে সহযোগিতা করে আসছেন। বিএনপির সাথে যুক্ত হয়ে স্থানীয় বাঙালিদের ক্ষতিসাধনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান বিল্টু অনেক প্রভাবশালী এই মারধরের পরও তার বিরুদ্ধে কোনোপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং বিল্টু চাকমার ভয়ে ভিক্টরের পরিবার আতঙ্কে আছে। এখানে চাকমারা সংখ্যায় বেশি, বাঙালিরা নগণ্য। তাই এই অপরাধের ন্যায় বিচার পাবে না, আর প্রশাসনও এই নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এদিকে ঘটনার দুইদিন অতিবাহিত হলেও বাঙালি ভিত্তিক সংগঠনগুলো এই নিয়ে কোনো প্রতিবাদ জানাননি। অধিকারের দাবিতে সৃষ্ট বাঙালি সংগঠনগুলো বাঙালিদের ওপর হামলা কিংবা কোন অন্যায় সংঘটিত হলে পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় না। বিষয়টিকে দুঃখজনক হিসেবে অভিহিত করেছেন পার্বত্য বাঙালিরা।

একজন জনপ্রতিনিধি কারো গায়ে হাত দিতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী ইকবাল হোসেন বলেন, “চেয়ারম্যানকে গ্রাম আদালতে কিছু বিষয়ে মীমাংসা করার লক্ষ্যে ক্ষমতা দিয়েছেন। কিন্তু কারো শরীরে হাত দেওয়ার বা কাউকে মারধর করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি। শহীদুল ইসলামকে ১০০টি বেত্রাঘাত এটি একটি চরম অন্যায় ও অপরাধ, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।”

বিচারের নামে শহীদুল ইসলামকে বেত্রাঘাত করার কারণ এবং এটি করার এখতিয়ার আছে কিনা তা জানতে চেয়ারম্যান বিল্টু চাকমাকে ফোন দিলে তার সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

 

 

আগের পোস্টজেএসএস সন্তুর গুলিতে মারমা নারী গুলিবিদ্ধ।
পরের পোস্টমানিকছড়ি থেকে এমএলপি সশস্ত্র সদস্য আটক।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন