পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি পুনর্গঠন।
অনন্ত অসীম বিশেষ প্রতিবেদক, পার্বত্য চট্টগ্রাম:
গত ২ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, এবং বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ মধ্যে সম্পাদিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি।
সম্পাদিত চুক্তির (ক) খণ্ডের (৩) অনুচ্ছেদের শর্ত অনুযায়ী চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণ করার লক্ষ্যে সরকার তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি গঠন করে। এই কমিটি গত ২০২৪ (৩০ এপ্রিল) পর্যন্ত ৯টি সভা করে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের পর দলীয় নেতাকর্মী এবং এমপি মন্ত্রীরা গা ঢাকা দেন। প্রত্যুত্তরে চুক্তির (ক) খণ্ডের (৩) অনুচ্ছেদের শর্ত অনুযায়ী চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণ করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় গত ১২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ উপসচিব মোহাম্মদ নাহিদ ইসলাম, স্মারক নম্বর-২৯,০০,০০০০.২২৩.০৬.১৭.২০১০ (খন্ড-২)-০১ মূলে এক প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
এতে বলা হয়, নিম্নোক্ত সদস্যদের সমন্বয়ে চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি পুনর্গঠন করা হলো:
(১) মো: তৌহিদ হোসেন, আহ্বায়ক, মাননীয় উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
(২) সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি- জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা,
সদস্য
( ৩) চেয়ারম্যান, টাস্কফোর্স- সুদত্ত চাকমা, সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায়, সদস্য
০২। কমিটির কার্যপরিধি নিম্নরূপ হবে:
(ক) এই চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণ ও তত্ত্বাবধান;
(খ) এই চুক্তির আওতায় অস্ত্র সমর্পনসহ ক্ষমা প্রদর্শন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাদি নিষ্পন্ন করার জন্য কর্মসূচি প্রণয়ন ও উহার বাস্তবায়ন;
(গ) এই চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগসহ অধস্তন সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের কর্মতৎপরতার মধ্যে সমন্বয় সাধন, প্রয়োজনীয় পরামর্শ/নির্দেশনা প্রদান;
(ঘ) এই চুক্তি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সমস্যাদি সমাধান কল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রয়োজনবোধে সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান;
(ঙ) শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত কার্যক্রম তত্ত্বাবধান;
(চ) অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত কার্যক্রম তত্ত্বাবধান।
০৩। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে।
০৪। সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ বাস্তবায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত, নির্দেশনা প্রতিপালন করবে এবং তদনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
০৫। চুক্তির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনবোধে বাস্তবায়ন কমিটি সাব-কমিটি গঠন করতে পারবে।
০৬। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কমিটিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানসহ এ সংক্রান্ত সকল ব্যয় বহন করবে।
০৭। এই কমিটি অবিলম্বে কার্যক্রম শুরু করবে।
১৩ জানুয়ারি ২০২৫ পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি পুনর্গঠন এবং কমিটির কার্যপরিধির প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে।
এদিকে জেএসএস ও তার মদদপুষ্ট বামপন্থিরা বলে আসছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক নয় এবং বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ হচ্ছে। সে কারণে পাহাড়ে শান্তি ফিরছে না। চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে পাহাড়ে অশান্তি বিরাজ করছে।
শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করার ৮ মাস পূর্বে দীপংকর তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৮টি ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে। এ চুক্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে চুক্তি স্বাক্ষরকারী পক্ষ যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে, সরকার চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে। এজন্য পাহাড় থেকে আগে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার এবং সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে হবে।
বর্তমানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পার্বত্য চট্টগ্রামের মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি নিযুক্ত পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে নামেন। তারই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।