রুল আমিন তৌহিন, খাগড়াছড়ি:
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা জেলার পানছড়ি উপজেলায় বাঙালিদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা করেছে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ও পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদে জড়িত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
শুক্রবার ১৭ জানুয়ারি রাত ১০ ঘটিকার সময় খাগড়াছড়ি সদর থেকে পানছড়ি উপজেলায় ফেরার পথিমধ্যে (লতিবান প্রিন্সিপাল পাড়া সংলগ্ন এলাকায়) ইউপিডিএফ কয়েকজন বাঙালির ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করে। এসময় ইউপিডিএফ দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। হামলার পর টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এতে হামলায় তিন বাঙালি আহত হন। আহত ব্যক্তিরা হলেন- পানছড়ি উপজেলার দমদম গ্রামের আজাদ হোসেন বাবু (২২),কলোনি পাড়ার মোহাম্মদ সোহাগ (২৩) ও মধ্যনগরের আব্দুর রহিম (২৪)। আজাদ হোসেন বাবুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ভুক্তভোগী আহত আব্দুর রহিম জানান, খাগড়াছড়ি থেকে মোটরসাইকেলে তিনজন একসাথে পানছড়িতে বাড়ি ফেরার পথে লতিবান প্রিন্সিপাল পাড়া এলাকায় উপজাতি সন্ত্রাসীরা তাদের সিগন্যাল দিয়ে থামায় । প্রথমে পরিচয় জানতে চেয়ে এনআইডি কার্ড বের করতে বলে। আইডি কার্ড দেখাতে দেখাতে সাথে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল কেড়ে নেয় ও তাদের লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করেন। সেখান থেকে একজন পালিয়ে গিয়ে থানায় খবর দেয়। বাকী দুইজন আহত অবস্থায় ঘটনাস্থলে পড়ে থাকে।
উদ্ধারকারী পানছড়ি থানার এস আই আব্দুল আওয়াল বলেন, ঘটনার খবর পেয়েই তাৎক্ষণিক আহতদের উদ্ধার করে পানছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করি। ঘটনাস্থলে গিয়ে আক্রমণকারীদের কাউকে পাইনি। আক্রমণের শিকার আহতরা জানায়, তাদেরকে উপজাতীয় কিছু লোক আটকিয়ে মারধর করে মোবাইল টাকা পয়সা নিয়ে গেছে। পরবর্তী অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয়রা বলেছেন, হামলার এলাকাটি ইউপিডিএফ প্রসিত নিয়ন্ত্রিত এলাকা। এনসিটিবি’র ঘটনার পর থেকে পাহাড়ে ইউপিডিএফ পাল্টা হামলার ঘোষণা দিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি দিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ জড়ো করে খাগড়াছড়ি সদরে বাঙালি ও সেনা বিরোধী উসকানিমূলক স্লোগান দেন। রাত্রে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ইউপিডিএফ এই সড়কে প্রতিনিয়ত বাঙালিদের ওপর হামলা করে এবং ছিনতাই করে। এসব ঘটনার জন্য স্থানীয়রা ইউপিডিএফকে দায়ী করে আসছে।
মাদ্রাসার নবম ও দশম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক বাংলা ব্যাকরণে পেছনের পেইজের অনুচ্ছেদে পার্বত্য চুক্তি ও সংবিধানের ২৩ (ক) বিরোধী আদিবাসী শব্দ গ্রাফিতি করে। যা নিয়ে রাস্ট্রের পক্ষের জনগণের পক্ষ থেকে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি তা বাতিল ও সংশ্লিষ্টকে অপসারণের দাবি করে। বিষয়টি বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ করলে সংগঠনটি পুনরায় কর্মসূচি দেয় ১৫ জানুয়ারি। একই দিন বিচ্ছিন্ন আদিবাসী শব্দটি পাঠ্যবস্তুকে পনর্বহাল রাখার দাবিতে কর্মসূচি দেয় পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) এর ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। ওইদিন পিসিপি বাম ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের উসকানিে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির ওপর অতর্কিত হামলা করে পিসিপি। এসময় দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টির সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এই ঘটনায় পিসিপি ঢাকা মহানগর সভাপতি জগদীশ চাকমা ১৬ জন বাঙালির নাম উল্লেখ এবং ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে ১৭ জানুয়ারি মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ইতোমধ্যে পুলিশ দু’জনকে আটক করে।
এনসিটিবি’র সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৩ দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাঙালি বিদ্বেষী, ঘৃণা ও উগ্র মানসিকতা ছড়িয়ে দেয় জেএসএস ও ইউপিডিএফ। মূলত এই সাম্প্রদায়িক মানসিকতা থেকে ঢাকার অদূরে খাগড়াছড়ি পানছড়িতে বাঙালিদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা বলছেন, এনসিটিবি’র ঘটনা পর যে উসকানি ও গুজব উপজাতি উগ্র সংগঠনগুলো ছড়িয়ে তা রোধে পাহাড়ে প্রশাসন কার্যত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। যার কারণে বাঙালির ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে বাঙালিদের ওপর আরো হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। পাহাড়ে এ ধরনের ঘটনা পূর্বে অহরহ ঘটেছে। তাই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনকে আন্তরিক হতে হবে।