আমজাদ হোসেন ভূঁইয়া
হিল নিউজ বিডি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল দেশপ্রেমিক শিক্ষার্থীর উদ্যোগে গঠিত সংগঠন “স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি” দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় অসাধারণ ভূমিকা পালন করছে। তাদের কর্মকাণ্ড ও সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আজ (২৬ জানুয়ারি ২০২৫) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ হলে “সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ” আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় সংগঠনের এই অবদানের কথা উঠে আসে। এতে দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সাবেক বিচারপতি, সেনা কর্মকর্তা, আইনজীবী ও সচিবসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বক্তারা উল্লেখ করেন, স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি গত কয়েক বছরে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিভিন্ন ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘আদিবাসী’ শব্দকে কেন্দ্র করে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধে তারা জনমত গঠনে সক্রিয়। তাদের প্রচেষ্টায় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর রাষ্ট্রবিরোধী পরিকল্পনা জনগণের সামনে উন্মোচিত হয়েছে।
কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডকে বাঁধাগ্রস্ত করতে সম্প্রতি সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। গত ১৫ জানুয়ারি এনসিটিবি ভবনের সামনে সংগঠনের ওপর হামলার ঘটনার পর দু’জন শুভাকাঙ্ক্ষীকে জেলবন্দী করা হয়। এ পরিস্থিতি নিয়ে সমাবেশে বক্তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আলোচনায় বক্তারা অবিলম্বে সংগঠনের ওপর চলমান হয়রানি বন্ধে তিনটি দাবি উত্থাপন করেন:
(১) দল মতের উর্দ্ধে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ একটি দেশ প্রেমিক ছাত্র সংগঠন, যারা দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় কাজ করছে। অবিলম্বে সংগঠনটির বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা তুলে নিতে হবে এবং বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
(২) গত ১৫ জানুয়ারি এনসিটিবি ভবনের সামনে পুলিশের ৪টি ব্যারিকেড ভেঙ্গে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির উপর আগে হামলা করে বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি ও লাল সন্ত্রাসীরা, যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত লাইভ ভিডিওতে দৃশ্যমান। ঐদিন সহিংস ঘটনা তৈরির অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও হোতা লাল সন্ত্রাস রাখাল রাহা, অলিক ম্রি ও আরমানুল হক গংদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একই সাথে আদিবাসী বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়ে দেশবাসীর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করায় এবং দেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী কর্মে অংশ নেয়ায় দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
(৩) ‘আদিবাসী’ শব্দটি সংবিধান বিরোধী ও দেশবিরোধী শব্দ। যে বা যারা ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি চাচ্ছে ও এই দাবীর পক্ষে কাজ করছে, প্রচারণা চালাচ্ছে তারা প্রত্যেকেই বিচ্ছিন্নতাবাদী ও তাদের দোসর। রাষ্ট্রকে স্বপ্রণোদিত হয়ে এই রাষ্ট্রদ্রোহীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
উপরোক্ত ৩ দফা দাবী রাষ্ট্রকে অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। নইলে অন্তর্বর্তী সরকারের উপর যে আস্থা আছে, দেশের জনগণ সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় সেটি হারিয়ে ফেলবে। অতএব অতিদ্রুত উপরোক্ত ৩টি দাবী বাস্তবায়ন করতে হবে।
বক্তারা জানান, এনসিটিবি কর্তৃক সম্প্রতি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত কিছু শব্দ ও তথ্য সংবিধানের পরিপন্থী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদকে উৎসাহিত করে। স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি এর বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণসহ সরব হয়েছে। এর ফলে তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি গোষ্ঠী ও তাদের দোসরদের প্রপাগান্ডার শিকার হচ্ছে।
সমাবেশে বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন বন্ধ করে তাদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা হোক। অন্যথায়, বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে সংগঠনটি তাদের দাবির পক্ষে জনমত গড়ে তুলবে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাবেক বিচারপতি আব্দুস সালাম মামুন, সাবেক সচিব ড. জাকারিয়া, ব্যারিস্টার (মেজর অব:) সারোয়ার, কর্নেল (অব:) হাসিনুর রহমান, এ্যাডভোকেট আলম খান, বিশ্ববার্তা সম্পাদক আরিফুর রহমান, লে: কর্নেল ফরিদ আকবর, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক সহ দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, কূটনীতিক, ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ। তারা বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির মতো সংগঠনগুলোর সক্রিয় থাকা অত্যন্ত জরুরি।
শেষে, বক্তারা আরো বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। “দেশপ্রেমিক শক্তি হিসেবে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির পাশে থাকুন,” বলে তারা আহ্বান জানান।