সেনাবাহিনী নিয়ে কেএনএফের অপপ্রচার।

0

আল শাহরিয়ার রোকন

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এবং পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিছু অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। এ ধরনের মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে শুধু বিভ্রান্তি সৃষ্টি নয়, বরং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংহতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদনটির উদ্দেশ্য হলো সঠিক তথ্য তুলে ধরে অপপ্রচার রোধ করা এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও দায়িত্ব: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের যে কোনো অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সেনাবাহিনী সুষ্ঠুভাবে পালন করছে। কিন্তু সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অভিযুক্ত করার প্রচেষ্টা সত্যিই দুঃখজনক।

আজ ২৭ জানুয়ারি, কেএনএফ যেসব অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তার সত্যতা কতটুকু তা অবশ্যই যাচাই-বাছাই এবং বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেএনএফ যেসব তথ্য শেয়ার করেছে তা অপপ্রচার।

তারপরও পাঠকদের জ্ঞাতার্থে কেএনএফ এর অভিযোগ গুলো এই প্রতিবেদনে পয়েন্টে পয়েন্টে আলোচনা করবো:

১। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের কথিত “বন্দুকযুদ্ধ” এবং আরাকান আর্মির সাথে “যৌথ অভিযান” সম্পর্কে যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনোই অন্য কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে যোগসাজোশে কাজ করে না। বরং পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখতে এবং অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

২। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া “কভারেজ দেয়নি” বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা আদতে মিথ্যাচার। দেশের দায়িত্বশীল মিডিয়াগুলো শুধুমাত্র নির্ভরযোগ্য সূত্র এবং যাচাই করা তথ্যের ভিত্তিতেই সংবাদ প্রকাশ করে। ভিত্তিহীন এবং প্রমাণহীন কোনো তথ্য প্রচার করা সাংবাদিকতা নীতির বিরোধী। যদি আসলেই এমন কোনো ঘটনার সত্যতা থাকত, তাহলে তা স্থানীয় প্রশাসন, মানবাধিকার সংগঠন, কিংবা স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের মাধ্যমে প্রমাণিত হতো। অপপ্রচারকারীরা বরাবরই এসব বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রমাণ প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

৩। আরাকান আর্মির সিইউও সাধুঅং সম্পর্কিত অভিযোগ প্রসঙ্গে: আরাকান আর্মির সিইউও সাধুঅং এর “৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে” কোনো প্রস্তাব গ্রহণের অভিযোগ সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং উদ্দেশ্যমূলক। কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এই দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমন ভিত্তিহীন দাবির মাধ্যমে কেবল বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

৪। পাহাড়ে সেনাশাসনের অভিযোগ প্রসঙ্গ: পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে “সেনাশাসন” প্রতিষ্ঠার অভিযোগও অযৌক্তিক। পার্বত্য এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি পার্বত্য অঞ্চলের স্থায়ী নিরাপত্তা এবং চুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করার একটি প্রয়োজনীয় অংশ।

যে কোনো অপরাধের দায় সেনাবাহিনীর ওপর আরোপ করার আগে প্রমাণের ভিত্তিতে কথা বলা উচিত। কারণ সেনাবাহিনী কোনো ব্যক্তি বিশেষের বা দলীয় সংস্থা নয়। এটি আপনার, আমার, পাহাড়ী, বাঙালি, উপজাতি সহ দেশের সকল নাগরিকের বাহিনী। কেননা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। আর সেনাবাহিনী হচ্ছে দেশের সেই সার্বভৌমত্বের রক্ষক। সেনাবাহিনীকে হেয় করা মানে দেশের সার্বভৌমত্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।

পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের মধ্যে একতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের মধ্যে বিভাজন এবং সংঘর্ষ বন্ধ করে ঐক্য গড়ে তোলা উচিত। পাহাড়ে বসবাসরত সব জনগোষ্ঠী একত্রিত হয়ে উন্নয়ন এবং শান্তির পথে এগিয়ে যেতে পারে।

বর্তমান সরকার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তবে পার্বত্য এলাকায় বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানের জন্য সময় এবং একত্রিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সেনাবাহিনী কোনো জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কাজ করছে—এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন।

যে কোনো জাতির অগ্রগতির জন্য ঐক্য এবং শান্তি অপরিহার্য। মিথ্যা প্রচারণা এবং ভিত্তিহীন অভিযোগের মাধ্যমে পাহাড়ের জনগণ এবং সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার যে প্রচেষ্টা চলছে, তা ব্যর্থ করতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

সত্য যাচাই করুন, বিভ্রান্তি এড়ান। পাহাড়ের শান্তি এবং উন্নয়নে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

আগের পোস্টবাঙালিদের ভোটার হওয়ার ভোগান্তি: উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাগজপত্র ও হয়রানির বাস্তবতা।
পরের পোস্টবিলাইছড়িতে মানবিক সহায়তায় আশার আলো জ্বালাচ্ছে সেনাবাহিনী।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন