প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় কর্তৃক আদিবাসী শব্দ ব্যবহার!

0

বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় আজ রবিবার ২৩ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা প্রশাসন এবং প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক মতবিনিময়সভায় বলেন, “আদিবাসী শিক্ষার্থীদের পাঠদান সহজে বিশেষ ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে সরকার। আমরা এই ভাষার বইয়ের ওপর অনলাইন কন্টেন্ট ও লেকচার তৈরি করব, যাতে শিশুরা দেখে দেখে শিখতে পারে।”

এই বক্তব্যে তিনি সরাসরি সাংবিধানিক স্বীকৃত পরিভাষা ‘উপজাতি’-কে উপেক্ষা করেছেন। অথচ সংবিধানের কোথাও ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারের স্বীকৃতি নেই। তাই সরকারের একজন উচ্চপদস্থ উপদেষ্টার এমন মন্তব্য দুঃখজনক ও বিভ্রান্তিকর।

বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩ (ক) অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে ‘উপজাতি’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে— “রাষ্ট্র জাতীয় সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হিসেবে উপজাতি ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অনন্য সংস্কৃতির স্বীকৃতি, সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।”

অর্থাৎ, সরকার নিজেই ‘উপজাতি’ পরিভাষাটি ব্যবহার করছে এবং এটি সাংবিধানিকভাবে বৈধ। অথচ সরকারের উপদেষ্টা যখন ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করেন, তখন এটি সরাসরি সংবিধানের ভাষার বিরুদ্ধে যায়।

‘আদিবাসী’ শব্দের মাধ্যমে এক শ্রেণির গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের পৃথক জাতিসত্তার দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এই শব্দের ব্যবহার আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নও তুলতে পারে। জাতিসংঘের ‘ইউএনডিআইপি’-এর বিভিন্ন প্রতিবেদনে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারের বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে।

ডা. বিধান রঞ্জন রায় আরও বলেন, “আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগের কাঠামোগত সমস্যা আছে, এতে যোগ্য শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে। উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে।”

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা, তবে শব্দের ভুল প্রয়োগ দুঃখজনক। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় পাঠ্যবই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটি শব্দগত বিভ্রান্তির চেয়ে কাঠামোগত জটিলতায় বেশি নিহিত।

সরকারের নীতি-নির্ধারকদের সংবিধানসম্মত ভাষা ও পরিভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিত। ‘উপজাতি’ শব্দের জায়গায় ‘আদিবাসী’ ব্যবহার করা এক ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভ্রান্তি তৈরি করে। সরকারের একজন উপদেষ্টার এমন মন্তব্য সাধারণ জনগণকে ভুল বার্তা দেয়, যা রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট মহলকে এই বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাই।

লেখক: জিহান মোবারক, কাপ্তাই, রাঙামাটি

 

আগের পোস্টপার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ কাঠ চোরাচালানের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানে বিজিবি।
পরের পোস্টশাহাদাত ফরাজি সাকিবের মুক্তির দাবিতে সরব হচ্ছেন অনেকেই।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন