নিজস্ব প্রতিবেদক | হিলনিউজবিডি
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলার দুধুকছড়া আওতাধীন হাতিমারা ছড়ায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বলি হলো এক নীরিহ পাহাড়ি গৃহবধূ। পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সশস্ত্র গ্রুপ ইউপিডিএফ (মূলদল) ও চুক্তি-পক্ষ জেএসএস (মূলদল)-এর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ গোলাগুলির ঘটনায় গৃহবধূ বন্ধনা চাকমার মা নির্মমভাবে প্রাণ হারান।
সোমবার (৩ মার্চ) সকাল ৮টার দিকে ইউপিডিএফ-এর সশস্ত্র অবস্থানের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় জেএসএস-এর সশস্ত্র সদস্যরা। মুহূর্তেই পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, দু’পক্ষের মধ্যে দুই শতাধিক রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়, যাতে দু’পক্ষেরই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে ঘর থেকে বের হওয়া মাত্রই সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে লুটিয়ে পড়েন বন্ধনা চাকমার মা রূপসী চাকমা (২৬)। গৃহবধূ রূপসী চাকমা এলাকার হেমন্ত চাকমার স্ত্রী। যাঁর রাজনীতির সাথে কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। শুধুমাত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর ক্ষমতার লড়াইয়ের বলি হতে হলো তাঁকে।
এলাকার সাধারণ উপজাতি জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর গুলিবিনিময়ের ঘটনায় পাহাড়ি ও বাঙালি কেউই নিরাপদ নয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, ঘটনাস্থলটি অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় এখনো সেখানে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। থেমে থেমে চলছে গুলি, আর সেই আতঙ্কে এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউপিডিএফ ও জেএসএস একে অপরকে দোষারোপ করছে। জেএসএস-এর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইউপিডিএফ-এর সদস্য নিহত হয়েছে, অপরদিকে ইউপিডিএফ সমর্থকদের দাবি, জেএসএস-এরই ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। তবে এ লড়াইয়ে প্রাণ গেলো এক নিরপরাধ গৃহবধূর, যার মৃত্যু কোনোভাবেই ন্যায়সংগত হতে পারে না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার বিশ্লেষকরা বলছেন, পার্বত্য চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠা, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ১৯৯৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী, জেএসএস-এর নিরস্ত্র হওয়ার কথা থাকলেও তারা এখনো অবৈধ অস্ত্র নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অপরদিকে, তাদের বিরোধিতা করে তৈরি হওয়া ইউপিডিএফও অস্ত্রধারী হয়ে উঠেছে। এই দুই সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও সহিংসতার কারণে জন্ম নিয়েছে নতুন একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী, যা পাহাড়কে ক্রমেই অগ্নিগর্ভ করে তুলছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণ আজ এই অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। তারা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অবসান ও প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছে। কিন্তু প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, রাজনৈতিক নেতাদের নীরবতা, এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দ্বিমুখী অবস্থান পাহাড়ের সংকট আরও ঘনীভূত করছে।
বন্ধনা চাকমার মায়ের মৃত্যু কি শুধুই একটি সংখ্যা? নাকি এটি পাহাড়ে চলমান সন্ত্রাসের বাস্তব চিত্র? এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দায় কে নেবে? কত প্রাণ গেলে প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নেবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পেলে, পাহাড়ে আরও কত শত নিরীহ মানুষ নিঃশব্দে প্রাণ হারাবে, কেউ জানে না।
(পাহাড়ের যেকোনো আপডেটের জন্য হিলনিউজবিডি-এর সাথেই থাকুন)