জিহান মোবারক ও তাপস কুমার পাল স্টাফ রিপোর্ট | ৮ মার্চ ২০২৫
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও সংগঠনের ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় নারী সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত ইউপিডিএফ প্রসীত মূলদলের সহযোগী অঙ্গসংগঠন ‘হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ)’।
আজ শনিবার (৮ মার্চ) সকাল সোয়া ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এই সমাবেশে ইউপিডিএফের নারী সংগঠনের নেত্রীরা রাষ্ট্র, সেনাবাহিনী ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার দুই ভয়ংকর নারী নেত্রী—হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি শোভা চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা। তারা উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মুবাইছড়ি মৌজার অধিবাসী বলে জানা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে তারা এক ভয়ংকর নাম। উগ্র, সাম্প্রদায়িক হিংস্র মনোভাবের এই দুই নারী নেত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে অভিহিত।
সন্ত্রাসী কার্যক্রমে পরোক্ষ মদদ?
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ইউপিডিএফ দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিভিন্ন নামে সংগঠন গড়ে তুলে তারা জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি করছে। হিল উইমেন্স ফেডারেশনও মূলত ইউপিডিএফের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হয় এবং তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশেও পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তব পরিস্থিতিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সংগঠনের নেত্রীরা সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে মিথ্যাচার করেন এবং পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেন।
নারী সমাবেশে বক্তারা বিশেষভাবে কাউখালী উপজেলার ঘটনাবলী নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছেন। সেখানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার আংশিক বা বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ানোর অপচেষ্টা চালানো হয়।
সমাবেশে উপস্থিত অন্য নেত্রীরা হাতে ফেস্টুন বহন করেন, যেখানে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয় এবং ইউপিডিএফের নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইউপিডিএফ তাদের রাজনৈতিক ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অঙ্গসংগঠনগুলোকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের মতো সংগঠনগুলো নারী অধিকারের কথা বলে আসলে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে কাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, “এ ধরনের সংগঠন নারীদের ব্যবহার করে নিজেদের মূল লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে, তারা শান্তি ও উন্নয়ন চায় না বরং পাহাড়ে অস্থিরতা বজায় রাখতে চায়।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের কার্যক্রম পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।
কাউখালীতে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় সফল অভিযান সম্পন্ন করে ফেরার পথে সেনাবাহিনীর ওপর নারীদের লেলিয়ে দিয়ে অতর্কিত বিশৃঙ্খলা করা হয় এবং সেই দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়। এই ঘটনা কারা ঘটিয়েছে এবং এর পেছনে কী উদ্দেশ্য ছিল—এমন প্রশ্নের উত্তরে মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও পার্বত্য বাঙালি ভিত্তিক সংগঠনে একসময় নেতৃত্ব দেওয়া এবং বাঙালি ছাত্র ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোহেল রিগ্যান বলেন,
“পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্রবাজি, হানাহানি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, যা এখানকার শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য হুমকি। নিরাপত্তা বাহিনী পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন এবং জননিরাপত্তার স্বার্থে কাউখালীর ঘাগড়ার ডেবাছড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ অভিযানে সন্ত্রাসীদের নাশকতামূলক ও দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র, গোলাবারুদ, সামরিক পোশাক ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও সেনাবাহিনী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট উদ্ধার করে, যা সন্ত্রাসীদের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল।
এই কারণেই সন্ত্রাসীরা স্থানীয় জনগণকে উসকানি দিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ায় যে সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে ৩টি পাড়ার বাসিন্দাদের উত্তেজিত করে উদ্ধারকৃত গুরুত্বপূর্ণ নথি ছিনিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সবসময় নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, মানবাধিকার রক্ষায় সচেতন এবং অন্যান্য জাতিসত্তার অধিকারকে সম্মান করে। পেশাদার বাহিনী হিসেবে তারা ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে সন্ত্রাসীদের পাতানো ফাঁদে পা দেয়নি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেনাবাহিনীর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আছে”
সেনাবাহিনীর ওপর হামলার পর কাউখালীতে কোনো বিক্ষোভ মিছিল ডাক দেওয়া হয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দেখুন, আমরা পাহাড়ি ও বাঙালি মিলেমিশে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করি। যদি আমরা কোনো কর্মসূচির ডাক দেই, তবে বাঙালি দালাল, সুবিধাবাদী ও সন্ত্রাসীরা সেটিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে এখানে জাতিগত দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করবে, যা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে। আমরা সেটি চাই না। প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে, এবং আমরা পাহাড়ি-বাঙালি মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না, এবং যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।”
পার্বত্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে মুক্তি কী? এমন প্রশ্নের জবাবে এডভোকেট হাফিজুর রহমান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সন্ত্রাসবাদ দমন করতে হলে সরকারকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, এবং অবৈধ অস্ত্র বাংলাদেশে আসা বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও সন্ত্রাসীদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক বন্ধ করতে হবে। এজন্য তাদের অর্থনৈতিক উৎস বন্ধে সরকারকে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে।